—প্রতীকী ছবি।
নয়াদিল্লি, ৬ নভেম্বর: বিরোধীদের সর্বসম্মত আপত্তি সত্ত্বেও আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে গৃহীত হয়ে গেল ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম বিলগুলি। কমিটিতে শাসক শিবিরের সাংসদদের সংখ্যাধিক্যের জোরেই তাড়াহুড়ো করে বিল সংক্রান্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে বলে বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা। মূলত ভারতীয় দণ্ডবিধি থেকে ঔপনিবেশিক প্রভাব মুক্ত করে তাকে সময়োপযোগী করে তোলার লক্ষ্যেই ওই বিলগুলি আনা হয়েছে বলে যুক্তি সাজিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু ওই বিলগুলিতে এমন কিছু আইনের উল্লেখ রয়েছে, যা দানবীয় বলে মনে করছেন বিরোধীরা। আজ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ওই বিলগুলি সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট গৃহীত হওয়ায় আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে ওই তিনটি বিল আনার পথ প্রশস্ত হল নরেন্দ্র মোদী সরকারের।
ভারতীয় দণ্ডবিধি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, ১৮৬০ সালে। ফৌজদারি দণ্ডবিধি তৈরি হয় ১৯৭৩-এ। সাক্ষ্য আইন তৈরি হয় ১৮৭২-এ। এই তিন আইন বদলে এ বার ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও সাক্ষ্য অধিনিয়ম চালু করতে অগস্ট মাসে সংসদে বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিল পেশ করেই তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শাসক শিবির। একই সঙ্গে কমিটিকে কার্যত লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয় যাতে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যে ওই বিলগুলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ছাড়পত্র পেতে সক্ষম হয়। কিন্তু গোড়া থেকেই শাসক শিবিরের ওই তাড়াহুড়ো করে বিল নিয়ে আলোচনা শেষ করার নীতি নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধী দলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিরা। আজও বিল নিয়ে আলোচনার শেষ দিনেও কেন ওই তাড়াহুড়ো, সেই প্রশ্ন তোলেন বিরোধীদের একাংশ। কমিটির রদবদলের পরে কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম ওই কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাই আজ তাঁকে প্রায় এক ঘণ্টা মতামত জানানোর সময় দেওয়া হয়। সূত্রের মতে, তিনি মৃত্যদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। কংগ্রেস জঙ্গিদের প্রতি নরম, এই অভিযোগ তুলে চিদম্বরমের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন বিজেপি সাংসদেরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে শাসক শিবিরের সংখ্যাধিক্য। তাই গোড়া থেকেই বিরোধীরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে খসড়া রিপোর্টে আপত্তি জানিয়ে নোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ১০ বিরোধী সাংসদের মধ্যে ৭ জন নিজেদের ডিসেন্ট নোট জমা দিয়েছেন কমিটির কাছে। সূত্রের মতে, বুধবার পর্যন্ত ডিসেন্ট নোট দেওয়ার সময় রয়েছে। আজ বৈঠকের পরে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “আমি ও আমার দলের অন্য সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং কংগ্রেসের পি চিদম্বরম বুধবারের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য জমা দেব।” বিরোধী সাংসদদের অধিকাংশের ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম আইন নিয়ে সে ভাবে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাকি দু’টি বিলে যে আইনগুলি উল্লেখ রয়েছে তা ভাল ভাবে বুঝতে আইনজীবী ও বিচারকদের দীর্ঘ সময় লেগে যাবে বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। এ ছাড়া অনেক সাংসদ এই প্রশ্ন তুলেছেন যে ওই বিলে ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রে কমিউনিটি সার্ভিস বা সামাজিক সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা শুভ উদ্যোগ। কিন্তু সামাজিক সেবার ক্ষেত্রগুলি বিলে উল্লেখ করা হয়নি।
ইউএপিএ, এনএসএ-র মতো কঠোর আইনের ধারাও তিন বিলে ঢোকানো হয়েছে। সূত্রের মতে, ওই আইনগুলিতে যে কঠোর সাজার উল্লেখ রয়েছে তা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে কেন থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধী সাংসদদের একাংশ। এ ছাড়া অধিকাংশ বিরোধী সাংসদ যে বিষয়ে একমত হন, তা হল ওই বিলের বিভিন্ন ধারা ও উপধারা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি।
যদিও বিরোদীদের আপত্তি কার্যত উড়িয়ে দিয়ে আজ সংখ্যাধিক্যের জোরে ওই বিলগুলি গৃহীত হয়। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক বলেন, “সংখ্যাধিক্যের ফায়দা নিয়েছে সরকার। কিন্তু ওই বিল যখন সংসদে আসবে তখন বিরোধীরা এক জোট হয়ে ওই বিলগুলির বিভিন্ন গাফিলতি নিয়ে সরব হবেন। ইন্ডিয়া জোটের গতিবিধি ধীর গতিতে এগোলেও, ওই বিলগুলির বিরোধিতার প্রশ্নে বিরোধীরা একজোট রয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy