অশান্ত মণিপুরে যৌথ বাহিনীর টহলদারি। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
ফের হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর! সপ্তাহ ঘুরলেও এখনও শান্তি ফেরেনি উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে। রাজ্য সরকার সংযত থাকার বার্তা দিলেও গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। আদিবাসী সংগঠন (আইটিএলএফ) দাবি করেছে, কার্ফুর মধ্যেই রবিবার রাতে জিরিবামের অন্তত পাঁচটি গির্জা, স্কুল, পেট্রল পাম্প এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। কে বা কারা এই হামলা করেছেন, তা এখনও জানা না গেলেও জিরিবাম-সহ একাধিক জায়গায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে পরিস্থিতি সামাল দিতে সে রাজ্যে নামানো হয়েছে সেনা। অশান্ত এলাকাগুলিতে রবিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর টহলদারি।
গত সোমবার জিরিবামে অসম সীমানা লাগোয়া অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ছ’জনকে। অভিযোগের তির উঠেছিল কুকি গোষ্ঠীর দিকে। দিনকয়েক পর নদীতে ছ’টি দেহ ভেসে আসে। যা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। নদীতে দেহ মেলার পর থেকেই দিকে দিকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে মেইতেই গোষ্ঠী। শনিবার রাতে রাজ্যের ছয় বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। ভাঙচুর চালানোর অভিযোগও ওঠে। এমনকি, ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টাও হয়। তাদের নিরস্ত করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।
রবিবারও জিরিবাম জেলার জিরি নদীতে দেহ ভাসতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন এক ষাটোর্ধ্ব মহিলা এবং অপরটি বছর দুয়েকের এক শিশুর। তার দেহটি মুণ্ডহীন ছিল। রবিবারই মেইতেই গোষ্ঠী মণিপুর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি অভিযুক্তদের ধরা না হয়, বিক্ষোভ আরও তীব্রতর হবে। রবিবার রাত থেকে জিরিবাম জেলায় একের পর এক হিংসার ঘটনা ঘটতে থাকে। হিংসার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে মণিপুর পুলিশ। তাঁরা সকলেই ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম এবং বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা। রাজধানী ইম্ফল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জারি করা হয়েছে কার্ফু। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা।
মণিপুরের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে রবিবার দিল্লি ফিরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একটি সূত্রের খবর, রবিবার রাতেই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সারেন তিনি। ওই বৈঠকে মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা আছে শাহের।
অন্য দিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন মণিপুর সরকারের হাত ছাড়ল কনরাড সাংমার এনপিপি। রবিবার কনরাড বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে চিঠি লিখে সরকারের থেকে সমর্থন তোলার কথা জানান। চিঠিতে এনপিপি প্রধান উল্লেখ করেন, ‘‘আমরা মনে করি, বীরেন সিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সরকারের থেকে সমর্থন তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
২০২৩ সালের ৩ মে থেকে মণিপুর বার বার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোষ্ঠী সংঘর্ষে। মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দফায় দফায় অশান্তি বাধে। তবে নতুন করে মণিপুরে উত্তেজনার সূত্রপাত দিনকয়েক আগে। মণিপুরের জিরিবামে কুকি জঙ্গি এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। অভিযোগ, সেই সময় একদল কুকি জঙ্গি মেইতেই সম্প্রদায়ের তিন মহিলা এবং তিন শিশুকে অপহরণ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১০ কুকি জঙ্গি। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহত ১০ জন ছিলেন ‘গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy