কেঁদে ফেললেন হতাশ অনু দুবে। শনিবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র
সংসদ ভবনের কাছে ফুটপাথের গায়ে দাঁড়িয়ে সাদা জিপসি। পেছনের দরজা খোলা। জনা তিনেক পুলিশ টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলছেন একটি মেয়েকে।
শীতের দিল্লি-সকালে সেই মুহূর্তে একা প্রতিবাদী ওই মেয়ে। অনু দুবে।
তেলঙ্গানার তরুণী পশু-চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুন ও পুড়ে খাক হওয়ার প্রতিবাদে সংসদের ২ আর ৩ নম্বর ফটকের উল্টোদিকের ফুটপাথে আজ একাই বসেছিলেন দিল্লির মেয়ে অনু। বয়স কুড়ির কোঠায়। হাতে একটা ছেঁড়া পিচবোর্ড। তাতে লাল প্যাস্টেলে লেখা— ‘‘কেন? আমি আমার নিজের ভারতে নিরাপদ নই।’’
আরও পড়ুন: ডায়েরি নেয়নি থানা, অভিযোগ বাবার || মেয়ের ধর্ষক-খুনিদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হোক, চাইছেন মা
কোনও স্লোগান দেননি অনু। বসে ছিলেন নীরবে। তাঁকে যন্তর-মন্তরে চলে যেতে বলে পুলিশ। তিনি যেতে না-চাইলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায়। সেখানে অনুকে রীতিমতো মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ‘সংসদের ধারেকাছে আর প্রতিবাদ করব না’— এই মুচলেকা দেওয়ার আগে অনুকে ছাড়েনি পুলিশ। তাদের বক্তব্য, ওই জায়গাটিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নিষিদ্ধ।
দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়ালের অভিযোগ, থানায় একটি খাটের উপরে অনুকে ফেলে তাঁর উপরে চড়ে বসেন তিন জন মহিলা পুলিশ। স্বাতী বলেন, ‘‘মেয়েটির শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আমি দেখেছি। দিল্লি পুলিশকে নোটিস দিচ্ছি। ওই তিন পুলিশকর্মীকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করতে হবে।’’
থানা থেকে বেরোলে দেখা যায়, অনুর হাতে ক্ষতচিহ্ন। তিনি বলেন, খিমচে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। হেড কনস্টেবল কুলদীপ, মঞ্জু এবং আরও এক পুলিশকর্মী তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও জানান।
প্ল্যাকার্ড হাতে সংসদের বাইরে অনু দুবে। —নিজস্ব চিত্র।
সাংবাদিকদের প্রাথমিক প্রশ্নগুলো ছিল তাঁকে নিয়ে। সেই প্রশ্ন থামিয়েই অনু বলে ওঠেন, ‘‘আপনারা আমার কথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন? আমি শুধু আমার জন্য আজ এখানে আসিনি। ওই মেয়েটা মরে গেল। কাল আমি পুড়ে মরতে চাই না।’’
বারবার ফুঁপিয়ে উঠছিলেন অনু। বুজে আসা গলায় রাগ-দুঃখ-ঘেন্না মেশানো কান্না ঠেলে, ভেজা চোখে বললেন, ‘‘কখনও এ ভাবে পথে নামিনি। কিন্তু আর পারলাম না। কাল সারা রাত ঘুমোইনি। আমি ক্লান্ত। নাগরিক হিসেবে আমারও তো অধিকার আছে মেয়ে হয়ে একটা ভয়মুক্ত জীবন বাঁচার।’’
আপনার কথাগুলো কাকে বলতে চান? উত্তর আসে, ‘‘সরকারকে।’’ প্রধানমন্ত্রীকে কোনও প্রশ্ন করবেন? অনু বলেন, ‘‘একটা নয়, অনেক প্রশ্ন আছে। যাঁর হাতে সরকারের কর্তৃত্ব, তাঁকেই সেগুলো করতে চাই।’’
পিচবোর্ডটা খুঁজছিলেন অনু। সেটা কেড়ে নিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy