Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রিয়ঙ্কা নিয়েই ক্ষোভের শুরু ঢাকা-দিল্লিতে

কূটনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অধুনা শৈত্যের যে বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে তার শুরু হয়েছিল সে দিনই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৭
Share: Save:

দু’মাস আগে রাজধানীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধীর সাক্ষাৎকারে প্রাথমিক ভাবে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার নাম ছিল না। মুজিব-কন্যার আগ্রহে কিছু ক্ষণ পরে সেখানে পৌঁছন ইন্দিরার নাতনি। তাঁদের আলিঙ্গনাবদ্ধ ছবিটি প্রিয়ঙ্কার টুইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কূটনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অধুনা শৈত্যের যে বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে তার শুরু হয়েছিল সে দিনই। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা নেওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর পরিবারের প্রতি নৈকট্য সে দিন গোপন করেননি হাসিনা। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মোদী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখেও নেহরু-গাঁধী পরিবারের প্রতি প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখতে চান তিনি। সূত্রের মতে, বিষয়টিতে কিছুটা আড়ষ্টতা তৈরি হয় সাউথ ব্লকে। এর পরে যখন ক্রিকেট দেখতে কলকাতা পৌঁছন হাসিনা, বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে দিল্লি থেকে কোনও মন্ত্রী বা শীর্ষ কূটনীতিককে পাঠায়নি মোদী সরকার। এই বিষয়টি যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ করেছে ঢাকাকে। বাংলাদেশের এক কূটনৈতিক কর্তার কথায়, ‘‘বাংলাদেশ সব ব্যাপারে পাশে থাকবে বলে ধরেই নিয়েছে নয়াদিল্লি। তাই কিছু ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। শুধুমাত্র কলকাতা সফর তো নয়, অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফরেও প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল প্রথম বারের সাংসদ এক নতুন মন্ত্রীকে। নরেন্দ্র মোদী নিজে না পারেন, কোনও সিনিয়র মন্ত্রীকে কি পাঠানো সম্ভব ছিল না ?’’

এই মন কষাকষির মধ্যেই চলে আসে অসমে এনআরসি নিয়ে অশান্তি এবং এবং তার পরে নাগরিকত্ব আইন পাশ করানোর প্রক্রিয়া। এর মধ্যে এক বার নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের পার্শ্ববৈঠকে, অন্য বার অক্টোবরের নয়াদিল্লি সফরে এনআরসি নিয়ে মোদীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন হাসিনা। কিন্তু এই বিল পাশ কারনোর সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের দুই কক্ষে বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে একই বন্ধনীতে রাখায় ঘৃতাহুতি হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে।

আওয়ামি লিগের মধ্যে একটি কট্টর ইসলামি অংশ রয়েছে, যাদের মতামতকে গ্রাহ্য করে চলতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে সাড়া না-পাওয়া সত্ত্বেও, হাসিনা কেন উদার ভারতনীতি নিয়ে চলছেন, এই প্রশ্ন তুলেছে সেই কট্টর অংশ। নাগরিকত্ব আইনে বিষযটি আরও জটিল হয়েছে।

ঢাকা সূত্রের বক্তব্য, পর পর দুই মন্ত্রী ও প্রতিনিধি দলের ভারত সফর বাতিল করে সেই অভ্যন্তরীণ রোষকে ধামাচাপা দিতে পেরেছেন আওয়ামি লিগ নেত্রী। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল হওয়ার পরে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি ঢাকার তরফ থেকে বাতিল করে দেওয়া হয় দু’দেশের যৌথ নদী কমিটির বৈঠকও। কিন্তু ঢাকা সূত্রের খবর, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জলসম্পদ মন্ত্রককে জানিয়ে দেন, তাড়াহুড়ো করে নয়াদিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বলে দেওয়া হোক সংশ্লিষ্ট নদী সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণ করা হয়নি। এর পিছনে যে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক বার্তা দেওয়ার ছিল, দিল্লিকে তা পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছে ঢাকা।

অন্য বিষয়গুলি:

Priyanka Gandhi Seikh Hasina New Delhi Dhaka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy