Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Uttarakhand

‘এ বার কি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে স্কুলে যাব’

সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ যখন বিশ্বের তাবড় নেতাদের দিকে আঙুল তুলে বলছিল ‘হাউ ডেয়ার ইউ’, ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়েছিল হরিদ্বারের স্কুলে পড়া মেয়ে বছর বারোর রিদ্ধিমা পাণ্ডে।

গাজিপুরে কৃষক-প্রতিবাদেও শামিল রিদ্ধিমা। -নিজস্ব চিত্র

গাজিপুরে কৃষক-প্রতিবাদেও শামিল রিদ্ধিমা। -নিজস্ব চিত্র

স্নেহাংশু অধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৫
Share: Save:

সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ যখন বিশ্বের তাবড় নেতাদের দিকে আঙুল তুলে বলছিল ‘হাউ ডেয়ার ইউ’, ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়েছিল হরিদ্বারের স্কুলে পড়া মেয়ে বছর বারোর রিদ্ধিমা পাণ্ডে। সময়টা ২০১৯-এর ২৩ সেপ্টেম্বর। নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে সে দিন ছিলেন রিদ্ধিমার বাবা— ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার অফিসার দীনেশচন্দ্র পাণ্ডেও। দেখেছিলেন— পরিবেশ রক্ষায় রাষ্ট্রনেতাদের ঔদাসীন্যে রাগে চোয়াল শক্ত তাঁর ছোট্ট মেয়েটার। আজ নিজের রাজ্য উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ভেঙে তুষারধসের বিপর্যয়ে ফের সরব রিদ্ধিমা।

মঙ্গলবার থেকে স্কুল খুলছে রিদ্ধিমার। ক্লাস নাইনের মেয়ে হরিদ্বার থেকেই ফোনে বলল, ‘‘খবরটা পাওয়ার পর থেকেই কিছু ভাল লাগছে না। আমি বিধ্বস্ত। কিন্তু এতে আজকাল আর অবাক হই না। সরকার পরিবেশে নজর না দিয়ে উন্নয়ন-উন্নয়ন করে লাফালে, এটাই হবে। মানুষ মরবে, পশু মরবে। গাছপালা সব শেষ হয়ে যাবে। তবু কারও টনক নড়বে না। ভয় হয়, এ বার না ব্যাগের বদলে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে স্কুলে যেতে হয়।’’

পরিবেশ রক্ষায় সরকারি ঔদাসীন্যের অভিযোগে ২০১৭-য় জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিল রাগী মেয়েটা। কাজ হয়নি। তবু মাঠ ছাড়তে নারাজ রিদ্ধিমা। দু’বছর পরে তাই গ্রেটা ও আরও ১৪ জন কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে সে-ও পরিবেশ রক্ষার আর্জি পেশ করে এসেছিল বিশ্বের দরবারে। আজ তার দুয়ারেই সঙ্কট।

ভারতের কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি লাগাতার টুইট করে চলেছে গ্রেটা। গত ৩০ জানুয়ারি গাজিপুরে ‘কিসান একতা মোর্চা’-র সভায় দেখা গিয়েছিল রিদ্ধিমাকেও। কিন্তু মেয়ের আসল লড়াইটা যে পরিবেশ বাঁচানোর, ভালই জানেন রিদ্ধিমার মা, উত্তরাখণ্ড সরকারের বন দফতরের দাপুটে অফিসার বিনীতা পাণ্ডে। এবং তাঁর দাবি, ছোট্ট মেয়ের কাঁধে কিছুই তাঁরা চাপিয়ে দেননি।

হরিদ্বারের যেখানে রিদ্ধিমারা থাকে, সেখান থেকে গঙ্গা অন্তত আড়াই কিলোমিটার দূরে। জেলায় সতর্কতা জারি হলেও তাঁদের তেমন ভয়ের কিছু নেই বলেই জানালেন বিনীতা। শুধু মেয়েটা ছটফট করছে। থেকে থেকেই বই ছেড়ে উঠে চোখ রাখছে টিভিতে। আর টুইট করছে। মায়ের থেকে এক প্রকার ফোন ছিনিয়ে নিয়েই রিদ্ধিমা বলল, ‘‘আপনিই বলুন তো, পরিবেশ ধ্বংস করে দেহরাদূনের বিমানবন্দর বাড়ানো কি সত্যিই খুব দরকার? এখানকার মানুষেরা কতটুকু আর বিমানে চড়েন! সরকার তবু গায়ের জোরে উন্নয়ন করেই ছাড়বে। আর তার ফল ভুগতে হবে আমাদের। এমন বিপর্যয় বার বার হবে। তখন ওরা ঢাক পিটিয়ে বলবে, ‘আমরা দুর্গতদের পাশে আছি।’ কিন্তু পরিবেশের এই ক্ষতিটা কে পূরণ করবে? হিমবাহ তো আর এমনি-এমনি গলে কিংবা ধসে যায় না!’’

আদতে নৈনিতালের বাসিন্দা দীনেশ-বিনীতা। কর্মসূত্রে ২০১৩-য় চলে আসেন হরিদ্বারে। সেই যে-বছর মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা এবং একইসঙ্গে ভূমিকম্প দেখেছিল উত্তর ভারতের একটা বড় অংশ। টিভির খবরে দেখেছিল রিদ্ধিমাও। সে তখন ছয়। জানতে চেয়েছিল, ‘কেন এমন হয় বাবা?’ তার মতো করেই বুঝিয়েছিলেন বাবা-মা। ফের প্রশ্ন করে নাছোড় মেয়ে, ‘‘তা হলে তোমরা কিছু করছ না কেন? অফিসে তো তোমরা রোজ যাও! কী করো?’’ রাগী মেয়েটাকে সেই থেকে আজও ‘সমঝেই’ চলছেন দীনেশ-বিনীতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy