গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
প্রধান বিচারপতি ও তাঁর দফতর তথ্যের অধিকার আইনের (আরটিআই) আওতায় বলে রায় দিল প্রধান বিচারপতিরই নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। তবে তথ্যের অধিকার আইনে প্রশ্ন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি পরিসরের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা মাথায় রাখতে হবে বলেও রায়ে জানিয়েছেন বিচারপতিরা।
বিচারপতিদের সম্পত্তির বিবরণ জানতে চেয়ে আর্জি জানিয়েছিলেন তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মী সুভাষ আগরওয়াল। সুপ্রিম কোর্ট তখন তা জানাতে রাজি হয়নি। এই বিষয়ে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলায় এ দিনের রায়ে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, বিচারপতিদের সম্পত্তি গোপন তথ্য নয়। শীর্ষ আদালতের কলেজিয়াম সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য কোন কোন নাম সুপারিশ করেছে তা-ও প্রকাশ করা যেতে পারে। কিন্তু কেন ওই নামগুলি সুপারিশ করা হয়েছে তা জানানো যাবে না। কারণ, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্য বিচারপতি, কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট রাজ্য, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বুরো, সংশ্লিষ্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য-সহ নানা পক্ষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কলেজিয়াম। তাই ওই তথ্য প্রকাশ পেলে ‘তৃতীয় পক্ষে’র স্বার্থহানি হতে পারে। বিচারপতি ও বিচারপতি পদপ্রার্থীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য, তাঁদের বার্ষিক গোপন রিপোর্টও প্রকাশ করা যাবে না।
আজ একই মর্মে তিনটি রায় দিয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চ। বেঞ্চের সংখ্যাগুরু সদস্যের রায় লিখেছেন বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। অন্য দিকে দু’টি আলাদা রায় দিয়েছেন বিচারপতি এন ভি রমণ ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সংখ্যাগুরু সদস্যের রায়ে বিচারপতি খন্না বলেছেন, ‘‘স্বচ্ছতা বজায় রাখলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয় না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা সব সময়েই হাত ধরাধরি করে চলে। তথ্য প্রকাশ জনস্বার্থের অঙ্গ।’’ একই মর্মে লেখা রায়ে বিচারপতি রমণ বলেছেন, ‘‘ব্যক্তি পরিসরের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকারের স্বাধীনতা হাত ধরাধরি করে চলে। একটির চেয়ে অন্যটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যায় না। তবে নজরদারি থেকে বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হবে। তথ্য জানানোর আর্জি গ্রহণের সময়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি পরিসরের স্বাধীনতার কথা মাথায় রাখতে হবে।’’
প্রকাশ করা যাবে
• বিচারপতি পদে কার কার নাম সুপারিশ করল কলেজিয়াম
• বিচারপতিদের সম্পত্তি
প্রকাশ করা যাবে না
• কলেজিয়ামের কোনও নাম সুপারিশের কারণ
• বিচারপতিদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য
• বার্ষিক গোপন রিপোর্ট
• তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ
মনে রাখতে হবে
• ব্যক্তি পরিসরের স্বাধীনতা
• বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আইনের শাসনের ঊর্ধ্বে নয়। বিচারপতিরা সাংবিধানিক পদাধিকারী। তাই তাঁদের কাজকর্ম পুরোপুরি আড়ালে রাখা সম্ভব নয়। বিচারপতিদের সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য ব্যক্তিগত তথ্য নয় বলেও রায় দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি কোন মাপকাঠিতে বিচারপতিদের নিয়োগ করা হচ্ছে তা-ও জানানোর পক্ষপাতী।
দিল্লি হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, প্রধান বিচারপতি ও তাঁর দফতর তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে সুপ্রিম কোর্টের কাজকর্ম ও প্রশাসন সম্পর্কে তথ্য জানাতে বাধ্য। সেই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টেরই সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় জনসংযোগ আধিকারিক। ২০১০ সালের সেই মামলা ২০১৬ সালের অগস্টে সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠায় এক তিন সদস্যের বেঞ্চ। সেই তিন সদস্যের বেঞ্চ ছিল বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন। সাংবিধানিক বেঞ্চকে যে বিষয়গুলির বিচার করতে বলা হয় সেগুলি হল,
১। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় রাখতে গেলে কি তথ্য প্রকাশ করা যায় না? যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা কি বিচার বিভাগের কাজকর্মে হস্তক্ষেপের সামিল?
২। এই তথ্য জানালে কি সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না? উপযুক্ত আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সব সাংবিধানিক পদাধিকারীকে বিনা বাধায় মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়া উচিত। তথ্য প্রকাশ কি সেই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে না?
৩। যে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে তথ্যের অধিকার আইনের ৮ নম্বর ধারায় তা জানানো নিষিদ্ধ কি না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy