সংবিধানের অ্যাসিড টেস্টে কি বিলটি আদৌ পাশ হবে? —ছবি পিটিআই।
আগামী সোমবার লোকসভায় পেশ হতে চলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি।
গত কালই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র দিয়েছিল ওই বিলে। তার পর থেকেই জল্পনা ছিল সরকার কবে বিলটি সংসদে পেশ করে তা নিয়ে। আজ বিলটি নিয়ে আলোচনার দিন স্থির করতে বৈঠকে বসে লোকসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটি। বৈঠকে ঠিক হয়, বিলটি আগামী সোমবার লোকসভায় পেশ করবে সরকার। বিষয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘আলোচনা শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে। আলোচনার জন্য সময় ধার্য করা হয়েছে চার ঘণ্টা।’’
লোকসভায় সংখ্যার জোরেই মোদী সরকার বিলটি পাশ করিয়ে নেবে। রাজ্যসভাতেও প্রয়োজনীয় সংখ্যা জোগাড়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন অমিত শাহেরা। বিজেপি শিবির নিশ্চিত, উভয় কক্ষেই বিল পাশ করাতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সংসদে এ যাত্রা উতরে গেলেও প্রশ্ন হল, সংবিধানের অ্যাসিড টেস্টে কি বিলটি আদৌ পাশ হবে?
কারণ দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনের চোখে সবাই সমান। এ দেশের ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে রাষ্ট্র কখনওই ধর্ম, জাত, বর্ণ, লিঙ্গ এবং জন্মস্থানের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করতে পারে না। কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের কথায়, ‘‘নাগরিকত্বে বিলে ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। অথচ, স্বাধীনতার সময়ে গাঁধী, নেহরু, মৌলানা আজাদ বা অম্বেডকরেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ধর্ম কখনওই নাগরিকত্ব পাওয়ার মাপকাঠি হতে পারে না। সেই কারণে আমার মতে বিলটি মৌলিক ভাবেই অসংবিধানিক।’’ বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, নাগরিক বিলে কোথাও সরাসরি বলা না হলেও পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা যদি মুসলিম হন, তা হলে এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন না। মায়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা, কিংবা বাংলাদেশের শিয়া অথবা পাকিস্তান থেকে আসা আহমদিয়াদের এ দেশে আশ্রয় দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। যদিও সরকারের যুক্তি, প্রতিবেশি মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে মুসলিমরাই সংখ্যাগুরু। সেখানে ধর্মীয় পীড়নের শিকার হচ্ছেন সে দেশের সংখ্যালঘু সমাজ। তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে এ দেশে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিক বার বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশে সংখ্যাগুরু সমাজ তো আর ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন না। হচ্ছেন সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, পার্সি, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টানেরা। তাঁদের কে আশ্রয় দেবে?’’ রোহিঙ্গাদের কেন ভারত আশ্রয় দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতারা।
আরও পড়ুন: আদালতের পথে ধর্ষিতাকে হত্যার চেষ্টা উন্নাওয়ে, ৯০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ তরুণী
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হচ্ছে, এই যুক্তি দেখিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অসমের বিশিষ্ট জনেরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই বিল অসংবিধানিক। একটি জনস্বার্থ মামলায় নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে হীরেন গোহিনরা শীর্ষ আদালতে দাবি করেন ওই বিলটি সংবিধানের পরিপন্থী। ১৯৭৩ সালে কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরল মামলায় প্রথম সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নির্ধারিত করে সুপ্রিম কোর্ট। পরে ১৯৯৪ সালে এস আর বোম্মাই বনাম ভারত সরকারের মামলায় বিষয়টি আবার উল্লেখ করেছিল শীর্ষ আদালত।
যাতে বলা হয়েছিল, সংবিধানের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সংসদের সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তন বা নষ্ট করা যায় না। যার মধ্যে রয়েছে সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব, সরকারের গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক চেহারা, সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য এবং আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সরকার তথা প্রশাসনের আলাদা ক্ষমতা কাঠামো। বলা হয়, যে আইন ওই মৌলিক কাঠামোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হবে, সেটিই অসংবিধানিক। ভারতের বহুমাত্রিক রাজনীতিতে কোনও ব্যক্তি তা তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা রয়েছে। তাই ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিলটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করেছে। প্রবীণ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের মতে, ‘‘ওই আইনটি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ হওয়ার সব রকম কারণ রয়েছে।’’
গত জানুয়ারি মাসে যখন সুপ্রিম কোর্টে ওই জনস্বার্থ মামলাটির শুনানি হয়, তখন সদ্য লোকসভায় পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব বিলটি। তার পরে তা রাজ্যসভায় আনার কথা ছিল সরকারের। তাই ওই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, বিলটি সংসদে রয়েছে। আগে বিলটি সংসদে পাশ হোক। তার পর এর বিচার হবে। আপাতত তাই সংসদে বিল পাশের অপেক্ষায় বিরোধীরা। তার পরেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy