মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেছিলেন, এক কথা! আর পণ্য পরিষেবা করের আওতায় প্রস্তাবিত করের কাঠামো বলছে, আর এক কথা।
ফলে, শেষমেশ রাজ্যে রাজ্যে সিগরেটের দাম কতটা ধার্য হবে, তা নিয়েই দানা বাঁধছে সংশয়। ডাক্তারদের একাংশের আশঙ্কা, আসন্ন রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা তথা পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি বা গুড্স অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স)-এর সৌজন্যে সিগারেটের দাম হয়ত কমেই যাবে বেশ কয়েকটি রাজ্যে। ডাক্তাররা অনেকেই ধূমপানের প্রবণতা মোকাবিলার দাওয়াই হিসেবে সিগারেট, বিড়ি বা গুটখার দাম বাড়ানোর দাওয়াইয়ে বিশ্বাসী। কিন্তু নয়া করের কাঠামোয় এই উদ্দেশ্য কত দূর সফল হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
অথচ, ধূমপানের ফলে মুখ ও গলার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এই বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়াতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রের মুখ্য উপদেষ্টা বা চিফ ইকনমিক অ্যাডভাইজার (সিইএ)। কিন্তু উল্টো পথে হাঁটছে জিএসটি কাউন্সিল। সরকারি সূত্রের খবর, তামাক সেবন রুখতে সিগারেট, বি়ড়ি, গুটখার উপরে ৪০% জিএসটি চাপানোর পরামর্শ দিয়েছিল সিইএ। কিন্তু জিএসটি কাউন্সিল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এই সব দ্রব্যে ২৬ শতাংশের বেশি কর চাপানোর পক্ষপাতী নয়।
এর ফলে, দেশে ধূমপান-বিরোধী আন্দোলন ধাক্কা খাবে বলে ডাক্তারদের অনেকে মনে করছেন। উত্তরপ্রদেশ, মিজোরাম, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাতের মতো রাজ্যে সিগারেটের উপরে এখনই ৩০-৪৫ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে। ফলে, জিএসটি চালু হলে ধূমপায়ীদের খরচ অনেকটাই কমবে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য সিগারেটের উপরে কর মাত্র ২২ শতাংশ। কিন্তু জিএসটি-র সৌজন্যে সেই কর বেড়ে ২৬ শতাংশ হলেও সিগারেটের দামে খুব বেশি ফারাক পড়বে না। কিন্তু গুটখার কর এ রাজ্যে ৩৫ শতাংশ। জিএসটি চালু হলে তা কমে গিয়ে ২৬ শতাংশ হলে, গুটখাসেবীদের পোয়া বারো। তবে জিএসটি-র দৌলতে বিড়ির দাম খানিকটা বাড়তে পারে। কারও কারও মত, সিগারেটের দাম এ ভাবে কমানোর পিছনে এ দেশে ‘তামাক লবি’র হাত রয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। ভারতের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ তামাক সেবন করেন। প্রায় দশ লাখের বেশি মানুষ প্রতি বছর তামাক সংক্রান্ত রোগে মারা যাচ্ছেন। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক এরকম দ্রব্যের ওপরে সর্বাধিক কর আরোপ হওয়া দরকার। তাতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমে। জনস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন জিনিসকে রুখতে কোনও রকম আপস ঠিক নয়।’’ মুখ ও গলার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ দত্ত অবশ্য বিড়ির দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্বাগত জানাচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘‘সমাজের নিম্নস্তরের মানুষেরা বিড়ি খান। ফলে বিড়ির দাম বাড়লে তাঁদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিষয়টা ভালই হবে।’’
সরকারি সূত্রের একটা অংশ অবশ্য সিগারেট, গুটখার দাম ততটা না-বাড়ানোর পিছনে অন্য যুক্তি দিচ্ছেন। গোটা দুনিয়ায় জুড়েই তামাকজাত বা অ্যালকোহলবিশিষ্ট পণ্য প্রমুখ ‘সিন গুড্স’ নামে পরিচিত। এই সব পণ্যে কর বসানো আসক্তদের কাছ থেকে এক ধরনের ‘প্রায়শ্চিত্তের বিধান’ হিসেবেই দেখা হয়। তবে অর্থনীতি তথা কর ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিশেজ্ঞের কারও কারও মত, এ সব ‘সিন গুড্স’-এ মাত্রাতিরিক্ত কর বসিয়ে কোনও লাভ হয় না। কারণ, যাঁরা ধূমপান বা অন্য নেশায় আসক্ত তাঁরা দাম বাড়লেও পুরনো অভ্যেস সহজে ছাড়েন না। তা ছাড়া, জিএসটি অনুযায়ী তামাকজাত দ্রব্যে কর ২৬ শতাংশ রাখা হলেও, বাড়তি সেস বসাতে পারে কেন্দ্র। তবে ঠিক কী হবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy