শ্রীনগর, ১৭ এপ্রিল: কাশ্মীরে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং জৈব প্রক্রিয়ায় চাষ হওয়া আখরোটের বদলে বাজারে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে কম দামি চিনা আখরোট। সূত্রের খবর, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কাশ্মীরি আখরোটের বিক্রি ১.৭০ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে কমে হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এর ফলে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন কাশ্মীরের আখরোট ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, কাশ্মীরে যে আখরোট চাষ হয়, তা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং জৈব ভাবে তৈরি। এই আখরোটের দাম হয় কেজি প্রতি ৭০০-৮০০ টাকা। চিনা আখরোট অবশ্য কেজি প্রতি ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যেই মেলে। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক। রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে চিনা আখরোটের উৎপাদনের হারও কাশ্মীরি আখরোটের থেকে অনেকটাই বেশি। একই সঙ্গে, চিন থেকে ভারতে রফতানি খরচও বেশ কম। ফলে বেশি পরিমাণে আখরোট ভারতে রফতানি করতে পারে চিন। দাম কম হওয়ায় তা বিক্রিও হয় বেশি।
দাম ছাড়াও যে কারণে কাশ্মীরের আখরোটের বাজার পিছিয়ে পড়ছে, তার মধ্যে অন্যতম হল ফসলের হার ও গুণমান বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার না করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীরি আখরোটের গুণমান ভাল হলেও সেগুলির প্রক্রিয়াকরণে খামতি থেকে যাওয়ায় আখরোটগুলিকে দেখতে ততটাও আকর্ষণীয়, সাদাটে হয় না। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, আখরোটগুলি আকারে-আয়তনে বেশ ছোট। কখনও আবার খোলা দেখে বোঝা না গেলেও ভাঙার পরে দেখা যায় যে, বাদামটিই নেই খোলার ভিতরে! অন্য দিকে, চিনা আখরোট আকারে-আয়তনে যেমন প্রায় এক মাপের হয়, দেখতেও বেশ বড় এবং সাদাটে হয়, যা ক্রেতারা পছন্দ করেন। কাশ্মীরি আখরোটের তুলনায় এগুলি ভাঙাও কিছুটা সহজ। তাই ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদাও বেশি।
কাশ্মীরের উদ্যানপালন বিভাগ অবশ্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে এই সমস্যার মোকাবিলায়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রাকৃতিক ভাবে চাষ করা আখরোটকে শংসাপত্র দেওয়া বা বিপণন কৌশলে বদল এনে যাতে এই ব্যবসাকে আরও চাঙ্গা করা যায়, সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে তারা। কাশ্মীরি আখরোটের জন্য জিআই ট্যাগ যাতে পাওয়া যায়, সেই চেষ্টাও চলছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)