ছবি- পীতাম্বর নেয়ার
স্টিলওয়েল রোড ফের খুলে, ব্রহ্মপুত্র খননে প্রযুক্তিগত সাহায্য দিয়ে অসম তথা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ করতে চায় চিন। দলাই লামার অরুণাচল সফরের পরে যখন ইন্দো-চিন সম্পর্ক তিক্ত, তখনই অসম সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে বৈঠকে ফের মৈত্রীর বার্তা দিলেন চিনের রাষ্ট্রদূত লৌ ঝাওহুই। পাশাপাশি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে দেখা করে চিনের রাষ্ট্রদূত দাবি করলেন, ভারতের কোনও জঙ্গি সংগঠনকে আশ্রয় দেয় না চিন। জানালেন, ব্রহ্মপুত্রের উপরে চিন যে বাঁধ তৈরি করছে- তাতে অসমের ক্ষতি হবে না। ভারত-চিন-কাশ্মীর ইকনমিক করিডর তৈরি করা ও স্টিলওয়েল পথ চালু করার পক্ষেও সওয়াল করলেন তিনি।
১৫ এপ্রিল ডিব্রুগড়ে নেমে তিনসুকিয়ায় গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চিনা সমাধিক্ষেত্রে শ্রদ্ধা জানান সস্ত্রীক লৌ ও তাঁর সঙ্গে আসা প্রতিনিধিরা। গত কাল কামাখ্যা দর্শনের পরে রাতে কয়নাধারায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, তাঁর পুত্র তথা কলিয়াবরের সাংসদ গৌরব গগৈয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান লৌ ও তাঁর স্ত্রী জিয়াং ইলি। এ দিন তাঁরা পবিতরা অভয়ারণ্য ভ্রমণ করেন। রাতে সস্ত্রীক লৌ সোনোয়ালের সঙ্গে দেখা করেন।
চিনা রাষ্ট্রদূতের সফর নিয়ে রাজ্যে প্রতিবাদ চলছিল। বিভিন্ন সংগঠন দাবি করে, আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়ার পরামর্শে, ব্রহ্মপুত্র খননের ব্যাপারে চরবৃত্তির জন্যই লৌ-রা অসম সফরে এসেছেন। ব্রহ্মপুত্রের উৎসে বাঁধ দেওয়ায় তিনসুকিয়ায় বিক্ষোভের মুখেও পড়েন চিনা প্রতিনিধিরা।
লৌ সাংবাদিকদের জানান, দলাই লামা নিয়ে চিনের অবস্থান ভারত আগে থেকেই জানে। তাই এ নিয়ে তাঁর নতুন করে কিছু বলার নেই। তিনসুকিয়ার সমাধিক্ষেত্র ভারত-চিন মৈত্রীর স্মারক। তাকে জবরদখল মুক্ত করে, আরও ভাল ভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। বলেন, চিনের পর্যটকরা যাতে আরও বেশি কামাখ্যা তথা অসম সফরে আসে তার আহ্বান জানাবেন তিনি।
ছবি- পীতাম্বর নেয়ার
দিসপুরে আজ রাতের বৈঠকে ব্রহ্মপুত্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিনের সাহায্য চান সোনোয়াল। জানান, চিন যে ভাবে হোয়াং হো নদীকে বাগ মানিয়ে উন্নয়নের কাজে লাগিয়েছে, সে দেশে গিয়ে তার পদ্ধতি শিখে অসমে ব্রহ্মপুত্র নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাতে চায় রাজ্য। চিনের রাষ্ট্রদূত এ ক্ষেত্রে স্বাগত জানান। কুনমিংয়ের বাণিজ্য সমাবেশে সোনোয়ালকে নিমন্ত্রণ করেন তিনি। সোনোয়ালও নভেম্বরে রাজ্যে হতে চলা বিশ্ব বাণিজ্য সমাবেশে চিনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান।
লৌ সোনায়ালকে জানান, 'ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড' প্রকল্পের আওতায় তিনসুকিয়া-মায়ানমার-কুনমিং পর্যন্ত বিস্তৃত 'স্টিলওয়েল রোড' খোলা ও সারানোর ব্যাপারে চিন সরকার আগ্রহী। সোনোয়াল সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “দুই দেশের মধ্যে সড়ক ও জলপথে বাণিজ্য বিস্তারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তা শুরু হলে দু’তরফই লাভবান হবে। বুলেট ট্রেন ও বড় মালবাহী জাহাজ নির্মাণশিল্পে চিনের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ভারতকেও শিখতে হবে। চিনের সাহায্যে ক্রীড়া বিজ্ঞান ও ক্রীড়া ওষুধশিল্পের বিকাশ ঘটাতে চাই আমরা। বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ তৈরিতেও চিন ভারতকে সাহায্য করতে পারে।” হিউয়েন সাঙয়ের ভারত ভ্রমণের প্রসঙ্গে তুলে লৌ ও সোনোয়াল জানান, ইন্দো-চিনের মধ্যে আগেকার মৈত্রীর সম্পর্ক, পারষ্পরিক যোগাযোগ বাড়িয়ে তুলতে হবে। অসমের সঙ্গে কুনমিং ও ইউনানের বাণিজ্যিক যোগ স্থাপনের উপরে সোনোয়াল জোর দেন।
অন্য দিকে, আলফা স্বাধীন চিনের প্রত্যক্ষ মদতপুষ্ট বলে পুলিশ দাবি করে। লৌয়ের সঙ্গে গত রাতের বৈঠক প্রসঙ্গে তুলে তরুণ গগৈ বলেন, "আমি সে ব্যাপারে সরাসরি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাই। তিনি আমায় জানিয়েছেন, আলফা বা উত্তর-পূর্বের কোনও জঙ্গি সংগঠনকে চিন আশ্রয় দেয়নি। তাঁদের সফরে পরেশের কোনও ভূমিকা নেই।"
ব্রহ্মপুত্রের প্রধান উৎসে চিন বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে লৌ গগৈকে জানিয়েছেন, নদীর ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য ভারতের সঙ্গে ভাগ করে চিন। ওই বাঁধগুলির নেতিবাচক প্রভাব অসমে পড়বে না। এ ব্যাপারে তিনি বিশদে খোঁজ নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
পাশাপাশি, গগৈয়ের সঙ্গে আলোচনায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে চিন-পাকিস্তান 'ইকনমিক করিডর' তৈরির বিষয়টি ফের বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন লৌ। জানিয়েছেন, ভারত চাইলে 'চিন-পাকিস্তান করিডর' 'চিন-ভারত-কাশ্মীর করিডর' হিসেবে বিস্তৃত হতে পারে। গগৈ বলেন, "চিনা রাষ্ট্রদূত আমায় যা বলেছেন- তা বিদেশমন্ত্রককে জানাব।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy