Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডোকলাম-ওবরের হোঁচট এড়িয়ে এগোতে চায় চিন

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মনে করেন, দু’দেশের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান এবং রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যই দুই প্রতিবেশী দেশকে এক সঙ্গে চলার দিশা দিতে পারে।

শান্তিনিকেতনে লিপিকায় ভারত ও চিনের উন্নয়নের রূপরেখা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার টি সি এ রাঘবন, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল চা লিইয়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

শান্তিনিকেতনে লিপিকায় ভারত ও চিনের উন্নয়নের রূপরেখা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার টি সি এ রাঘবন, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল চা লিইয়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৭
Share: Save:

ডোকলামে দু’দেশের সেনাদের ৭২ দিন মুখোমুখি হুঙ্কার এবং ‘ওবর’ (ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড) নিয়ে দিল্লির ‘নেতিবাচক’ মনোভাবকে পাশে সরিয়ে রেখে ভারতের সঙ্গে এখন নতুন সহযোগিতার সম্পর্ক গড়তে তৎপর হয়েছে চিন। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেই ‘প্রথা বহির্ভূত’ বৈঠক এবং নতুন বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক দৌত্যকে সেই কাজে ক্রোশফলক ধরে এগোতে চাইছে বেজিং। কলকাতায় চিনের কনসুলেট এবং বিশ্বভারতীর চিন-চর্চা বিভাগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে দু’দেশের উন্নয়নের রূপরেখা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে চিনের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এই বার্তা দিলেন। তাঁদের দাবি, আধিপত্য
বিস্তার নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগের উন্নতির লক্ষ্যেই বেজিং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের কথা ভেবেছে। শুধু চিন নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে এই প্রকল্প। তবে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চিন বিশেষজ্ঞ বি আর দীপক এই প্রকল্পকে বেজিংয়ের ‘আগ বাড়িয়ে (প্রিয়েম্পটিভ) সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলে বর্ণনা করে বলেন, ‘ওবর’ মেনে নেওয়াটা দিল্লির পক্ষে খুবই কঠিন।

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মনে করেন, দু’দেশের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান এবং রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যই দুই প্রতিবেশী দেশকে এক সঙ্গে চলার দিশা দিতে পারে। কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল চা লিইয় বলেন, পঞ্চশীলকে পাথেয় করেই এগিয়ে চলেছে স্বাধীনতার ৭২ বছর পালন করা ভারত ও মুক্তির ৭০ বছর উদযাপনকারী চিন। এই চলা থামার নয়। আস্থা বাড়াতে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান এবং দু’দেশের নাগরিকদের যোগাযোগ বাড়ানোয় গুরুত্ব দেন চিনা ভবনের আহ্বায়ক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

দু’দেশের যোগাযোগ কত পুরনো? ভাষা ভবনের অধ্যক্ষ নরোত্তম সেনাপতি জানালেন, চিন দেশের উল্লেখ রয়েছে মহাভারতে। ‘হর্ষচরিত’-এ বাণভট্ট শোন নদীর বালুতটের তুলনা টেনেছেন চিনের মলমলে রেশমবস্ত্রের সঙ্গে। ‘অভিজ্ঞানম শকুন্তলম’-এও কালিদাস ‘চীনাংশুক’-এর কথা বলেছেন। চিনের ভারত-নীতি বিশেষজ্ঞ লং সিংচুন-এর কথায়, একটা ডোকলামের অঘটন বা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এ ভারতের ‘নেতিবাচক’ অবস্থান এত দিনের সখ্যকে চুরমার করে দিতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্ব হারানোর আশঙ্কা করছেন ভারতের নীতি নির্ধারকেরা। তাঁদের এই মনোভাবকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমরা যে আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী নই, ৭০ বছর ধরে তা প্রমাণ দিয়ে এসেছি। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে চিনের অবস্থান নিয়ে দিল্লির আপত্তি রয়েছে। তার পাশে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে দিতে পারি, যা পরিচালনা করুক কোনও ভারতীয় সংস্থা। এই ভাবে বোঝাপড়ার মাধ্যমে উন্নয়নের সুফল ভাগ করে নিয়ে কেন আমরা চলতে পারি না?’’ অধ্যাপক দীপক বলেন, ‘‘এক মেরু বিশ্বব্যবস্থায় নতুন ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠার কারণেই মার্কিন রোষে পড়েছে চিন। চিনের সহযোগী হলে ভারত উপকার পাবে।’’ চিনা স্ট্র্যাটেজিক বিশেষজ্ঞ কিয়াং ফেং-ও বলেন, হিমালয়কে হাইফেন করে ড্রাগন ও হাতি পাশাপাশি পথ চলাটা মোদীর ‘নয়া ভারত’ গঠনেরও সহায়ক হবে।

চিনা বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন, ডোকলাম পর্বের পরে সম্পর্ক রক্ষায় আরও সাবধানী বেজিং। সরকারের শীর্ষ স্তরে দৌত্যের পাশাপাশি পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোর ওপরও জোর দিচ্ছে তারা। ‘ট্র্যাক-টু’ কূটনীতির অঙ্গ হিসেবেই বিশ্বভারতীতে এই সম্মেলন, যা শেষ হচ্ছে শনিবার।

অন্য বিষয়গুলি:

China Dokalam Indo-China Relation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE