Advertisement
E-Paper

গ্ল্যামার-জোগানে ২২ হাজার শৈশব লুট অভ্রখনিতেই!

রাত ফুরোলে ঝাড়খণ্ডের এই স্কুলছুট মেয়ে ফের ছুটবে খনিতে। রোজ-রোজ হাতেগরম ২০ থেকে ৩০ টাকা। মন্দ কী! এতেই যে পেট চলছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০১:০৩
Share
Save

দিনের শেষে পূজা যখন ঘুমোতে যায়, তখনও ওর চোখ-মুখ চকচক করে। আনন্দে নয়, অভ্র-কুচিতে। মাত্র এগারোতেই শৈশব ছুটেছে পূজা ভুরিয়ার। রাত ফুরোলে ঝাড়খণ্ডের এই স্কুলছুট মেয়ে ফের ছুটবে খনিতে। রোজ-রোজ হাতেগরম ২০ থেকে ৩০ টাকা। মন্দ কী! এতেই যে পেট চলছে।

কিন্তু পূজার মতো ঝাড়খণ্ড ও বিহারের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে যে ভাবে রোজ প্রাণ হাতে করে অবৈধ অভ্রখনিতে নামছে, তা নিয়েই সিঁদুরে মেঘ দেখাল সুদূর ম্যানহাটনের একটি ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের তদন্তমূলক প্রতিবেদন। ওই রিপোর্ট বলছে, পূজার মতো শিশু খনিশ্রমিকের সংখ্যাটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজারে।

সিনেমায় দেখা নায়িকাদের মতো সাজতে ইচ্ছে করে পূজার। কিন্তু সে আর দিচ্ছে কে? অথচ, এদের মতো কচি হাতে খনি ঢুঁড়ে আনা অভ্রই ঝাড়াই-বাছাই হয়ে বারবার হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে বড় বড় সব প্রসাধনী শিল্প সংস্থায়। তৈরি হচ্ছে দামি-দামি আইশ্যাডো, লিপস্টিক আর ‘ফরসা-হওয়ার’ ক্রিম। মার্কিন প্রতিবেদনটি বলছে, ভারতের বাজারই এখন সব চেয়ে বড়। বিশেষত চিনের মতো দেশে এখান থেকেই ৬০ শতাংশ অভ্র যাচ্ছে। প্রায় চার হাজার শব্দের তদন্ত-রিপোর্টের শিরোনাম— ‘আপনার মেক-আপ বাক্সেই লুকিয়ে প্রসাধনী শিল্পের অন্ধকার দুনিয়া।’ অভ্রর বিপুল চাহিদা রয়েছে আয়ুর্বেদিক ঔষধ এবং ঘর-সাজানোর সামগ্রীতেও।

তাই লাভের কড়ি ঘরে তোলা এই সব সংস্থা কেন বিহার-ঝাড়খণ্ডের এই এলাকার উন্নতির জন্য পাল্টা কিছু করবে না? তদন্ত রিপোর্টে এই প্রশ্নও তুলেছে সংবাদমাধ্যমটি। ফ্রান্সের এক বহুজাতিক প্রসাধনী শিল্প সংস্থা কিন্তু এর উত্তরে বলেছে, অভ্র আমদানি কমিয়ে দিলে বিহার-ঝাড়খণ্ডের ওই সব এলাকার অর্থনীতিই ধসে পড়বে। একমাত্র বৈধ খনিসংস্থা থেকেই তারা অভ্র আমদানি করে বলেও জানিয়েছে বেশির ভাগ সংস্থা।

অভ্র দিয়ে ঠিক কী যে হয়, পূজারা জানে না। শুধু জানে, কাজে যেতে হবে। তাই ঝুঁকি আছে জেনেও রোজ অবলীলায় তারা সেঁধিয়ে যাচ্ছে কানাগলির মতো লিকলিকে সুড়ঙ্গে। সঙ্গে ছেনির মতো একটা যন্ত্র, একটা হাতুড়ি আর ঝুড়ি। যে কোনও মুহূর্তে ধস নামতে পারে খনিতে। তাই সাবধানে, গুটি-গুটি পায়ে। যাচ্ছে, আবার দিনের শেষে ওরা ফিরেও আসছে সর্বাঙ্গে চকচকে অভ্রকুচি মেখে। ফুসফুসেও ঢুকছে বেশ খানিকটা। পূজার মতো এদের সবার ছোট-ছোট হাতে ফোস্কা। এদের পরিবার খুব ভাল করেই জানে, খনিতে এ ভাবে দিনের পর দিন গিয়ে কাজ করতে গিয়ে আহত, পক্ষাঘাতগ্রস্তও হতে পারে বাচ্চারা। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবু যাচ্ছে, আর কিছু উপার্জন করে ফিরছে— সেটাই বা কম কিসের!

কিন্তু সবাই আর ফিরছে কই! মার্কিন প্রতিবেদনটির দাবি, প্রতি মাসে ধসের কবলে ২০ থেকে ৩০টি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে এই দু’টি রাজ্যে। সেই দিনটার কথা এখনও ভুলতে পারে না দশের নাবালিকা সুরমা কুমারী। তিন বছরের বড় দিদিকে নিয়ে খনিতে ঢুকেছিল সে। তার পর আচমকা ধস নামল। খবর পেয়ে যখন বাড়ির লোক ছুটে এলেন, তত ক্ষণে সুরমার শরীরের অর্ধেকটা ঢুকে গিয়েছে ধ্বংসস্তূপের তলায়। আর দিদি লক্ষ্মীর পুরোটা। এক ঘণ্টার চেষ্টায় যখন বার করে আনা হল, লক্ষ্মী তত ক্ষণে নিথর। পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিল খনি সংস্থা। ব্যস, ওইটুকুই। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অবৈধ খনিতে এমন দুর্ঘটনায় মৃত্যু আকছার ঘটলেও পুলিশ-প্রশাসনের হেলদোল নেই। ধরাবাঁধা ওই ক্ষতিপূরণ নিয়ে সুরমা-লক্ষ্মীর বাবা এখনও কাজ করছেন ওই একই খনিতে। বলছেন, ‘‘আর তো কিছু পারি না। কী করব?’’ খিদের জ্বালায় জোর করে শোক ভুলতে চাইছেন। তবে ইদানীং খনির অন্ধকারে ঢুকতে বাবার মতোই ভয় পায় ছোট মেয়েটা।

Mica Mining Child Labour

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।