Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Supreme Court

Pegasus Row: ‘আলোর রেখা’ বলছেন অনেকে

প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরেই রমণা একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন, গণতন্ত্র কখনও স্বৈরাচারীকে নির্বাচিত করে না।

প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা। ফাইল চিত্র।

প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা। ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১১
Share: Save:

‘রমণা এফেক্ট’!

ছয় মাস আগে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে অনেকেই আশা করেছিলেন, এ বার হয়তো হাওয়া বদলাবে। তবে আশা পূরণ হবে কি না, সেই দোলাচলও ছিল। ছয় মাস পরে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ পেগাসাস কাণ্ডের রায়ের পরে প্রবীণ আইনজীবী থেকে অবসরপ্রাপ্ত আমলারা মনে করছেন, এ বার সত্যিই আশার আলো দেখা যাচ্ছে। মোদী জমানায় দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারের কথাতেই উঠছে, বসছে কি না, তা নিয়ে বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলছিল। রামমন্দিরের রায় ঘোষণা করে অবসর নেওয়ার পরেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভায় মনোনীত করার পরে দেশের শীর্ষ আদালতও সেই সংশয়ের তালিকায় ঢুকে পড়েছিল।

আজ প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা মোদী সরকার পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনে আড়ি পেতেছে কি না, তার তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা অনিল স্বরূপের মন্তব্য, “এক ছিলেন রঞ্জন গগৈ। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমাদের এন ভি রমণাও রয়েছেন।” তাঁর মতে, গণতন্ত্রের কিছু স্তম্ভ এখনও মজবুত। এই অটুট স্তম্ভগুলোর ভরসাতেই গণতন্ত্রও টিকে থাকে। প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে আজকের রায়কে ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ ও ‘আদালতের ইতিহাসে মাইলফলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, “এই রায় অন্ধকার দিনে আলোর রেখা।”

প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরেই রমণা একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন, গণতন্ত্র কখনও স্বৈরাচারীকে নির্বাচিত করে না। বিপুল ভোটে জিতে এসেছি, অতএব মানুষের রায় আমার পক্ষে— এই যুক্তিতে কোনও শাসক যথেচ্ছাচার করতে পারে না। একে শাসক শিবিরের প্রতি বার্তা হিসেবেই দেখেছিলেন প্রবীণ আইনজীবীরা। তাঁদের মতে, আদালত সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে অন্য প্রবীণ বিচারপতিরাই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নকর্তাদের মধ্যে বিচারপতি রঞ্জন গগৈও ছিলেন। অথচ তাঁর আমলে একই প্রশ্ন আরও জাঁকিয়ে বসে। রমণার সামনে চ্যালেঞ্জ হল, তাঁকে বিচারবিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু রাজনীতির কাদায় জড়ালে চলবে না।

আজ পেগাসাসের মতো রাজনৈতিক স্পর্শকাতর মামলায় তদন্তের রায় দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তিনি রাজনীতির তরজায় না জড়িয়ে সাংবিধানিক নীতি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কারণ, বিরোধী শিবির থেকে বিচারপতি, সমাজকর্মী থেকে সাংবাদিকদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগের ফলে ব্যক্তি পরিসরের অধিকার, বাক্স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নও এর সঙ্গে জড়িত।

চার দিন আগেই প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ব্যক্তি বা সমাজ প্রশাসনের দাপটে আক্রান্ত হলে আদালত বরাবর রুখে দাঁড়িয়েছে। এটাই আশ্বাস যে বিচার চাইতে এসে দুর্বলকেও রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আজ পেগাসাস রায়ে একই সুরে তিনি মনে করিয়েছেন— রাষ্ট্রের যতই ক্ষমতা থাক, মানুষের ব্যক্তি পরিসরে ঢোকার অধিকার নেই। আর্ল অব চাঠাম উইলিয়াম পিটকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘গরিব মানুষের কুঁড়ের ছাদ হাওয়ায় উড়ে যেতে পারে, সেই কুঁড়েতে ঝড়, বৃষ্টি ঢুকে পড়তে পারে, কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজার সর্বশক্তি থাকলেও সেই কুঁড়েতে ঢুকতে পারেন না।’

এত দিন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর অভিযোগ ছিল, বিরোধী নেতা হিসেবে তিনি দেশের আদালত, সংবাদ মাধ্যমের মতো প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছেন না। কারণ মোদী জমানা এই প্রতিষ্ঠানগুলিকেও লাগাম পরানোর চেষ্টা করছে। আজকের রায়ে রাহুলের বক্তব্য, ‘সুপ্রিম কোর্টের তদন্তের নির্দেশ একটা বড় পদক্ষেপ। কারণ পেগাসাস কাণ্ডে ভারতের গণতন্ত্রকে পিষে দেওয়ার চেষ্টা ছিল। গণতন্ত্রে যে আলাপ-আলোচনা, মত বিনিময় হয়, সেখানে রাশ টানার চেষ্টা ছিল।’ সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটির পরে আলাদা করে আর যৌথ সংসদীয় কমিটিরও প্রয়োজন দেখছেন না রাহুল। তাঁর মতে, “আমি নিশ্চিত এখান থেকেই আসল তথ্য উঠে আসবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court N V Ramana Pegasus Snooping Row
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy