ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
বিরোধীরা যতই অভিযোগ করুক, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছে বলে আজ দাবি করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ভোটার তালিকায় কারচুপি, ইভিএমে কারসাজি, শাসক দলের নেতাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার যে অভিযোগ কমিশনের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলিতে উঠেছে, আজ নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিজের শেষ সাংবাদিক সম্মেলনে সে সব অভিযোগ মানতে অস্বীকার করলেন রাজীব।
পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিন সদস্যের প্যানেলে যোগ দেন রাজীব। ২০২২ সালে হন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। পাঁচ বছর পরে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করে নিজের ইনিংস শেষ করতে চলেছেন রাজীব। অবসরের পরে হিমালয়ের গভীরে গিয়ে অন্তত পাঁচ-ছয় মাস ধ্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ৩১টি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাজীবের। যার মধ্যে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নির্বাচন যেমন ছিল, তেমন ছিল গত বছরের লোকসভা নির্বাচনও।
রাজীবের সময়ে নানাবিধ বিতর্ক তৈরি হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে। আর যে বিতর্ক তাঁকে গোড়া থেকেই সামলাতে হয়েছে, তা হল ইভিএম ঘিরে নানাবিধ প্রশ্ন। বিরোধী দলগুলির একাংশের আজও দাবি, ইভিএমে কারচুপি করা সম্ভব। অভিযোগ, শাসক দল বিজেপি ইভিএমে সেই প্রয়োজনীয় কারচুপি করেই কেন্দ্রে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। যা অস্বীকার করে রাজীব বলেন, ‘‘ইভিএম নিখুঁত ব্যবস্থা। কারচুপির জায়গাই নেই। রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন দলের সরকারই তাঁর প্রমাণ।’’ তাঁর দাবি, ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইভিএমে পড়া ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাট যন্ত্রের কাগজ গোনা শুরু হয়। প্রায় ৪.৫ কোটি ভিভিপ্যাট স্লিপ মেলানো হয়েছে। একটিও গরমিল পাওয়া যায়নি। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও যন্ত্রের মাধ্যমে ইভিএম হ্যাকিং করা যায় না।’’ একই সঙ্গে তিনি নিজেকে স্বচ্ছ বলে দাবি করলেও, কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘কমিশন গত লোকসভা নির্বাচনে যে ভাবে শাসক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছে, তা অতীতে দেখা যায়নি। সেই দাগ মোছা কঠিন। সার্বিক ভাবে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে জনমানসে।’’
সম্প্রতি একাধিক রাজ্যে বিজেপি ভোটার তালিকা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে বলে সরব বিরোধীরা। দিল্লিতেও বিজেপি বেছে বেছে আম আদমি পার্টির সমর্থকদের নাম বাদ দিয়েছে বলে অভিযোগ আপ-এর। ইভিএমের মতো ভোটার তালিকাতে কারচুপির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন রাজীব। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখেই তবেই কারও নামবাদ দেওয়া হয়। নাম বাদ দেওয়ার পরেও সেই ব্যক্তির কাছে নিজের বক্তব্য পেশের সুযোগ থাকে। তা ছাড়া ভোটার তালিকা তৈরির প্রস্তুতিতে রাজনৈতিক দলগুলি সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে থাকে। কোনও ধরনের অস্বচ্ছতা দেখলেই দলের প্রতিনিধিদের প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। কোনও বুথে দু’শতাংশের বেশি ভোটারের নাম বাদ পড়লেও পুনরায় খতিয়ে দেখা হয়।’’
সম্প্রতি নিয়ম পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দলগুলিকে ভোট কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাচন কমিশন। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা অনেকাংশেই নষ্ট হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। রাজীবের মতে, ‘‘অতীতে ফুটেজের অপব্যবহার হয়েছে। কোনও ব্যক্তি যদি কোনও বিধানসভা ভোটের দিনের সব বুথের ভিডিয়ো রেকর্ডিং দেখতে যান, তা হলে তাঁর সাড়ে ছয় বছর লাগবে। লাইভ ছবি কিসের জন্য দরকার হবে, তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই আবেদনকারীদের কাছে।’’
অতীতের মতো চলতি নির্বাচনী প্রচারেও একাধিক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মহিলাদের উদ্দেশে কুকথা বলার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন বিজেপি প্রার্থী রমেশ বিধুড়ী যে, সাংবাদিক সম্মেলনে কেঁদে ফেলেন অতিশী। এ প্রসঙ্গে আজ রাজীব বলেন, ‘‘আজ থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়েছে। যদি কেউ মহিলাদের উদ্দেশে কুকথা বলে কিংবা ছোটদের ভোটের কাজে ব্যবহারকরে, তা হলে সেই দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy