Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

অসুখ কী জানাল সমীক্ষা, ওষুধ অমিলই

বাজেটের আগের দিন, বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ হল ২০১৮-১৯ সালের আর্থিক সমীক্ষা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

অর্থনীতির পায়ে ঘোড়ার গতি ফেরাতে ‘অব্যর্থ’ ওষুধ বেছেছেন কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগের সেই দাওয়াই এই মুহূর্তে বাজারে আদৌ মিলবে কোথায়, তা স্পষ্ট করতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদী সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা।

বাজেটের আগের দিন, বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ হল ২০১৮-১৯ সালের আর্থিক সমীক্ষা। সেখানে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আমজনতাকে প্রয়োজনে নিখরচায় ডেটা ব্যবহারের সুযোগ, সময় বেঁধে ছোট সংস্থাকে সুবিধা, অর্থনীতির কৌশলে অভ্যাস বদলের মতো আনকোরা বিষয়ে জোর দেওয়া হল। কিন্তু সব কিছুর পরেও প্রেসক্রিপশনের প্রধান ওষুধই বাজারে না-থাকার অভিযোগ তাড়া করল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে রঘুরাম রাজনের ছাত্র তথা আইআইএম-কলকাতার প্রাক্তনী সুব্রহ্মণ্যনকে।

আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী, চাহিদা ও লগ্নিতে ভাটার মাসুল গুনে ২০১৮-১৯ সালে ৭ শতাংশের নীচে (৬.৮%) নেমে গিয়েছে বৃদ্ধি। চলতি বছরে তা সামান্য বেড়ে ফিরবে সেই ৭ শতাংশে। কিন্তু সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর কথা মিলিয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার স্বপ্ন ধাওয়া করতে হলে, টানা লম্বা সময় ৮% বৃদ্ধির কক্ষপথে টিকে থাকতে হবে ভারতকে। তার জন্য বাজি বেসরকারি বিনিয়োগই।

বৃদ্ধির হারে যে চিনকে টেক্কা দিয়ে এত দিন এত বুক চাপড়ানি, এ দিন কার্যত সেই দেশকেই উন্নতির মডেল ঠাওরেছেন সুব্রহ্মণ্যনরা। দাবি করেছেন, চাহিদায় ভাটা, কৃষি উৎপাদনে সমস্যা, শিল্পে ঢিমে বৃদ্ধি, বেকারত্ব— এই সব কিছুকে আলাদা আলাদা ভাবে দেখে তার সমাধান খোঁজায় আর বিশ্বাসী নন তাঁরা। তার বদলে চিনের ধাঁচে তাঁদের আস্থা সব রোগের এক ওষুধ লগ্নি-সঞ্জীবনীতে। বিনিয়োগ এক বার জিডিপির অন্তত ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গেলেই নাকি দ্রুত ঘুরতে শুরু করবে অর্থনীতির চাকা। যার জোরে ছিটকে যাবে বাকি সমস্যা। তৈরি হবে কাজের সুযোগও।

প্রশ্ন উঠল, দীর্ঘদিনই তো বেসরকারি বিনিয়োগে খরা। এখন হঠাৎ তা আসবে কোথা থেকে? উত্তরে মুখ্য উপদেষ্টা বিদেশি লগ্নির কথা বললেন। তুললেন বিশ্ব বাজারে নগদের জোগান ভাল থাকার কথাও। কিন্তু দেশীয় বেসরকারি লগ্নির কথা যেমন তাতে থাকল না, তেমনই স্পষ্ট হল না কতটা বিদেশি বিনিয়োগ আদৌ নতুন প্রকল্পে আসবে তা-ও।

অর্থনীতির বইয়ের পাতা থেকে তুলে আনা একটি যুক্তি অবশ্য এ ক্ষেত্রে দিয়েছেন সুব্রহ্মণ্যন। তাঁর দাবি, দেশে এখন কমবয়সিদের সংখ্যা বেশি। তাঁরা যত বেশি কাজ করবেন, আয়ের অনুপাতে তত কমবে তাঁদের খরচ। সঞ্চয় বাড়বে। ফলে কমবে মূলধন জোগাড়ের খরচ। লগ্নি আসার পথ সুগম হবে তাতে।

কিন্তু যে চাহিদায় ভাটার কারণে ঝিমিয়ে অর্থনীতি, তাতে আরও কোপ পড়লে তা কাজের কথা হবে কি? উত্তরে রফতানি বাড়ানোয় জোর দেওয়ার কথা বলেছেন সুব্রহ্মণ্যনরা। কিন্তু সমীক্ষাই যেখানে বিশ্ব অর্থনীতিকে মেঘাচ্ছন্ন বলছে, চিন্তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে মার্কিন-চিন শুল্ক-যুদ্ধকে, সেখানে অদূর ভবিষ্যতে দ্রুত রফতানি বৃদ্ধি কতটা সম্ভব? উত্তর অধরা।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘সমীক্ষার ছত্রে ছত্রে পরস্পর বিরোধিতা স্পষ্ট। আগামীর যে ছবি সেখানে ফুটে উঠেছে, তা-ও তেমন আশাব্যঞ্জক নয়।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy