সঙ্ঘে ফিরছেন রাম লাল। —ফাইল চিত্র
আবার বড় পরিবর্তন বিজেপির সর্বোচ্চ স্তরে। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদ থেকে সরানো হল রামলালকে। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল সঙ্ঘে। এখন থেকে আরএসএসের সহ-সম্পর্ক প্রমুখ হিসেবে কাজ করবেন রামলাল। সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) যে চার জন রয়েছেন, তাঁদেরই কেউ রামলালের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। ভি সতীশের নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে।
দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে ছিলেন রামলাল। সে পদ থেকে তাঁকে সরতেই হত। কিন্তু ওই পদ থেকে সরানোর পরে বিজেপিতে না রেখে যে ভাবে তাঁকে আরএসএসে ফেরত পাঠানো হল, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
বিজেপি সূত্র বলছে, কোনও একটা কারণ নয়, রামলালকে সঙ্ঘে ফেরত পাঠানোর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের ইচ্ছাতেই রামলালকে সঙ্ঘে ফেরানো হল বলে একটি অংশের মত। তিনি সঙ্ঘে ফিরলে সঙ্ঘের অন্দরে মোদী-শাহের লাইনকে আরও মজবুত ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন বলে তাঁরা মনে করছেন। তাই মূলত সে কথা মাথায় রেখেই রামলালকে সঙ্ঘে ফেরানো হল বলে বিজেপির ওই অংশের দাবি। দ্বিতীয়ত, রামলাল সঙ্ঘে ফেরায় কাটল বিজেপির অন্দরের সাংগঠনিক অস্বস্তিও। জে পি নাড্ডা দলের কার্যকরী সভাপতি হয়েছেন সম্প্রতি। অর্থাৎ রামলাল যে পদে ছিলেন, নাড্ডা তার উপরের পদে চলে গিয়েছেন। কিন্তু সংগঠনে নাড্ডার চেয়ে রামলাল অনেকটাই সিনিয়র। এ হেন নাড্ডাকে রিপোর্ট করবেন রামলাল, এমনটা রামলালের পক্ষে খুব একটা সম্মানজনক হচ্ছিল না। তাই নাড্ডা কার্যকরী সভাপতি হওয়া মাত্রই রামলালের জন্য সম্মানজনক পুনর্বাসনের কথা ভাবা শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে।
তবে ঠিক উল্টো একটা ব্যাখ্যাও বিজেপির-ই অন্য একটি অংশ সূত্রে সামনে আসছে। মোদী-শাহ জুটি দলের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার অনেকটা আগে থেকেই রামলাল সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে ছিলেন। ফলে সংগঠনের উপরে রামলালের কর্তৃত্বও খুব একটা কম ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় বার বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার পরে মোদী-শাহ জুটি নিজেদের নীতি ও কার্যপদ্ধতির রূপায়ণের পথে আর কোনও অঙ্কুশ রাখতে চাইছেন না বলে বিজেপির ওই অংশটির মত। ১৩ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে থেকে দলে বিপুল প্রভাবশালী হয়ে ওঠা রামলাল কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই অঙ্কুশটাই হয়ে উঠতে পারতেন। তাই বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, রামলালকে সঙ্ঘে ফেরত পাঠিয়ে মোদী-শাহ জুটি নিজেদের কার্যপ্রণালীতে কারও হস্তক্ষেপের অবকাশ প্রায় নির্মূল করে ফেলতে চাইলেন।
সঙ্ঘের ব্যাখ্যা অবশ্য একটু অন্য রকম। নাগপুরের বক্তব্য হল, রামলাল বিজেপির লোক নন, আরএসএসের লোক এবং আরএসএসের লোককে কখন বিজেপি থেকে ফেরত নেওয়া হবে, তা আরএসএস-ই ঠিক করে।
সঙ্ঘের এই ব্যাখ্যায় কোনও ভুল নেই। কিন্তু আরএসএস এখন হঠাৎ রামলালকে ফিরিয়ে নিল কেন? সঙ্ঘ নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, কোনও একটি পদে কোনও ব্যক্তিকে ন্যূনতম ৩ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর রাখা হয়। রামলালের ক্ষেত্রে সেই ঊর্ধ্বসীমা অনেক দিন আগেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০০৬ থেকে ২০১৯— টানা ১৩ বছর তিনি বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে কাজ করছিলেন। তাই সংগঠনের রীতি অনুযায়ীই তাঁকে সরাতে হত।
আরও পড়ুন: দলত্যাগী কংগ্রেস নেতাদের গোয়ায় মন্ত্রী করল বিজেপি!
সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদ থেকে না হয় সরানো হল। কিন্তু বিজেপিতে-ই আর রাখা হল না, এ রকম কেন? কুশাভাউ ঠাকরে তো সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদ থেকে সরার পরেও বিজেপিতে-ই ছিলেন এবং বিজেপি সভাপতিও হয়েছিলেন। সুন্দর সিংহ ভান্ডারি ওই পদ থেকে সরার পরে দলের সহ-সভাপতি হন। তার পরে তাঁকে রাজ্যপাল করা হয়। রামলালের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হল না কেন? বিজেপির একটি অংশের ব্যাখ্যা, এখনও দলের সভাপতি পদে অমিত শাহই রয়েছেন। আর কার্যকরী সভাপতি হয়ে গিয়েছেন নাড্ডা। ফলে কুশাভাউয়ের মতো রামলালকেও সভাপতি করা এই মুহূর্তে সম্ভব ছিল না। আর সুন্দর সিংহ ভান্ডারির মতো সহ-সভাপতি করা হলে সেই নাড্ডার অধীনেই রামলালকে কাজ করতে হত। অতএব সঙ্ঘে ফেরানো ছাড়া উপায় কমই ছিল।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘বিজেপি থেকে সঙ্ঘে ফিরে যাওয়া কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা তো নয়। নানাজি দেশমুখও সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ছিলেন। তাঁকেও পরে সঙ্ঘে ফেরানো হয়েছিল।’’
সঙ্ঘ সূত্রে অবশ্য আরও একটি ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। সঙ্ঘের যে বিভাগে রামলালকে নিয়ে যাওয়া হল, সেই সম্পর্ক বিভাগ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন নাগপুরের কর্তারা। গোটা দেশেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো সঙ্ঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতে ইদানীং আরও জোর দেওয়া হয়েছে। প্রণব মুখোপাধ্যায় বা রতন টাটার মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সঙ্ঘের সম্পর্ক দৃঢ় হওয়াতেই তার প্রমাণ মিলেছে। সহ-সম্পর্ক প্রমুখ হিসেবে সেই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে রামলালকে খুব বড় ভূমিকা নিতে হবে বলে সঙ্ঘ সূত্রের খবর।
আরও পডু়ন: মেট্রোর দরজায় আটকে হাত, পার্ক স্ট্রিটে ছুটল ট্রেন, ভয়াল মৃত্যু যাত্রীর
কিন্তু রামলালের ছেড়ে যাওয়া জায়গা কে নিচ্ছেন? ভি সতীশ এ বার সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদ থেকে প্রমোশন পেয়ে রামলালের জায়গায় আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। আর এক সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশের নামও ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু সিনিয়র হওয়ার সুবাদে সতীশ-ই এগিয়ে বলে খবর।
এই ভি সতীশের সঙ্গে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। এবিভিপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ১৫ বছরের তিনি পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব সামলেছেন। সেই সময়ে দীর্ঘ দিন তিনি এ রাজ্যে কাটিয়েছেন। ভি সতীশ বাংলা বলতেও পারেন। তাই তিনি বিজেপির নতুন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) হলে তা বাংলার পক্ষে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy