রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ আগেই হয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণ করতে চাইছে। এ জন্য রেশন বণ্টন সংক্রান্ত নির্দেশিকায় প্রয়োজনীয় সংশোধনেরও প্রস্তাব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক।
সরকারি সূত্রের খবর, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিবের সঙ্গে রাজ্যের খাদ্যসচিবদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রস্তাবের কথা জানিয়েছে। তাতে রেশন বণ্টন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ২০১৫ সালের নির্দেশিকায় সংশোধনের প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে। এই সংশোধন অনুযায়ী, নতুন রেশন কার্ড বিলির সময় যখন পরিবারের প্রধানের ই-কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করা হবে, তখন রাজ্য সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়ে নেবে।
কেন এই পদক্ষেপ? প্রশ্ন উঠেছে, ভবিষ্যতে কি তবে রেশনে চাল-গম বিলির বদলে তার মূল্য ধরে দেওয়ার নীতিতে নগদ ভর্তুকির পথে হাঁটার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক?
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে এখন প্রায় ৮১.৩৫ কোটি মানুষকে প্রতি মাসে মাথা পিছু পাঁচ কেজি চাল বা গম দেওয়া হয়। মোদী সরকারের
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় পুরো বিনামূল্যে এই চাল-গম দেওয়া হয়। তবে কোভিডের সময় চালু হওয়া এই প্রকল্পে যে অতিরিক্ত পাঁচ কেজি খাদ্যশস্য দেওয়া হত, তা ২০২২-এর ডিসেম্বরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন পাঁচ কেজি করে চাল-গম দেওয়া হয় খাদ্য ভর্তুকির অর্থে। গত ১ ফেব্রুয়ারির বাজেট অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে খাদ্য ভর্তুকিতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২.০৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। ২০২৪-২৫-এ খাদ্য ভর্তুকিতে বরাদ্দ হয়েছিল ২.০৫ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত হিসেব অনুযায়ী, এই অর্থবর্ষে বাস্তবে ১.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। তার আগের অর্থ বছরে খাদ্য ভর্তুকিতে ব্যয় হয়েছিল ২.১২ লক্ষ কোটি টাকা।
এ বার রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জুড়ে দিয়ে নগদ ভর্তুকি দিয়ে কি খাদ্য ভর্তুকি আরও কমানোর রাস্তা খোঁজা হবে? কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এখনই এমন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের রেশন ডিলারদের চিন্তা বেড়েছে। তাঁরা মনে করছেন, কৃষকরাও বিপদে পড়বেন। সর্বভারতীয় ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘রেশনে বিলির জন্য সরকার চাষিদের থেকে নির্ধারিত দামে চাল, গম কিনে নেয়। যদি সরকার তা না কিনে ব্যাঙ্কে খাদ্য ভর্তুকির পথে হাঁটে, চাষিরা মুশকিলে পড়বেন। সম্পূর্ণ বাজারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে।’’
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এমনিতেই ফি বছর খাদ্য নিগমের মাধ্যমে চাষিদের থেকে এমএসপি-তে চাল—গম কেনার পরিমাণ কমে গিয়েছে। ২০২০-২১-এ কৃষকদের থেকে ৯ কোটি ৩৭ লক্ষ টন খাদ্যশস্য কেনা হয়েছিল। তা কমতে কমতে চলতি অর্থ বছরে ৬ কোটি ৩৯ লক্ষ টনে নামবে বলে সরকারি অনুমান। তার উপরে এ ক্ষেত্রে মূল্য ধরে দেওয়ার নীতি নিলে কৃষকদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)