সামনেই বড়দিন। আলোয় ও মানুষের ভিড়ে জমজমাট নিউ মার্কেট। তবে নতুন করে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে কোভিডও। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
অর্থনীতিকে বাঁচাতে বুস্টার ডোজ়েই ভরসা রাখতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
ফের বিশ্বের নানা প্রান্তে মাথাচাড়া দিচ্ছে করোনা সংক্রমণ। বিশেষ করে প্রতিবেশী চিনে যে ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, নরেন্দ্র মোদী সরকার তাতে উদ্বিগ্ন। ভারতেও যাতে সংক্রমণের পুরনো ছবি আর ফিরে না আসে, সে জন্য আজ থেকেই মাঠে নেমে পড়েছে কেন্দ্র। সরকারের বক্তব্য, দীর্ঘদিন পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতি। করোনার জন্য নতুন করে আর্থিক বৃদ্ধির ছন্দপতন যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করাই এখন লক্ষ্য। তাই চিনে করোনা সংক্রমণের ভয় ধরানো ছবি সামনে আসতেই তৎপর হয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ, নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বি কে পল-সহ অন্যরা দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠক করেন। অধিকাংশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, ভারতীয়দের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে চিনাদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি রয়েছে। তাই এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু সতর্কতায় ঢিলে না দেওয়াই ভাল।
আজকের বৈঠকে মূলত বুস্টার ডোজ়ের টিকাকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ টিকার দু’টি ডোজ় নিলেও এখনও পর্যন্ত তৃতীয় ডোজ় বা বুস্টার নিয়েছেন মাত্র ২৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার সংক্রমণ সত্ত্বেও মৃত্যুহার কমে আসায় মানুষের ভয় ভেঙে গিয়েছে। সেটাই বুস্টার ডোজ় নেওয়ায় অনীহার কারণ। কিন্তু চিনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে বলেই বিভিন্ন সূত্রে খবর মিলছে। সংক্রমণ বাড়ছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশেও। তার প্রেক্ষিতে আজ বৈঠকের শেষে দেশবাসীকে দ্রুত বুস্টার ডোজ় নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বি কে পল বলেন, ‘‘বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক, যাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি— তাঁদের অবশ্যই বুস্টার ডোজ় নিয়ে ফেলা উচিত।’’ বুস্টার বাধ্যতামূলক করা
হবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ফলে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা সম্ভব নয়।’’ কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত, অতীতে দু’টি ডোজ়ের টিকা না নিলে যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি দফতরে কিংবা বিমানে চড়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি হয়েছিল, বুস্টারের ক্ষেত্রেও সেই কৌশল নিতে পারে সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ওমিক্রন প্রজাতির করোনাভাইরাসের বিএফ.৭ নামে যে উপ-প্রজাতিটি চিনে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, ভারতের চার জন কোভিড রোগীর নমুনায় ইতিমধ্যেই সেটির উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। এই চার জনের মধ্যে দু’জন গুজরাতের বাসিন্দা। গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরের শুরুতে তাঁদের নমুনা বিশ্লেষণ করে বিএফ.৭ পাওয়া যায়। তৃতীয় রোগীর বাড়ি ওড়িশায়। চতুর্থ জনের পরিচয় জানানো হয়নি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, চার জনই এখন সুস্থ। টিকাকরণ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান এন কে অরোঢ়া বলেন, ‘‘প্রতিষেধক নেওয়া ও সংক্রমিত হওয়ার কারণে দেশবাসীর মধ্যে রোগ প্রতিরোধের মিশ্র ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাই গত এক বছরে ভারতে ওমিক্রনের অন্তত ৭০-৭৫টি উপ-প্রজাতির সন্ধান মিললেও সংক্রমণের ক্ষেত্রে সেগুলি বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনে টিকাকরণে ব্যবহৃত হয়েছে সে দেশেই তৈরি ‘নিম্ন মানের’ টিকা। ওই টিকা সে ভাবে সংক্রমণ রুখতে পারেনি। চিনের ‘সাইনোভ্যাক’ টিকার কার্যকারিতা ৫০-৫৫%। সেখানে ভারতের টিকা কোভিশিল্ড প্রায় ৮৫% কার্যকরী। তা ছাড়া, ভারতে যেমন টিকাকরণের ক্ষেত্রে প্রবীণ নাগরিকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, চিনে তা হয়নি। সেখানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মী শ্রেণিকে। ফলে চিনে বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক বেশি। এ দিন বৈঠকের পরে দেশবাসীর উদ্দেশে মাণ্ডবীয় বলেন, ‘‘করোনা এখনও শেষ হয়নি। তাই আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তেমনই দেশবাসীকেও নিয়ম মানতে হবে।’’ আজ থেকে ফের মাস্ক পরায় জোর দেওয়ার নীতি নিয়ে এগোচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে যেমন আজ থেকে আবার মাস্ক পরা শুরু করেছেন, তেমনই সামনে যাঁদের পেয়েছেন, তাঁদেরও মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy