মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
খয়রাতি বা রেউড়ি সংস্কৃতি জনমোহিনী রাজনীতির ‘তড়কা’-বলে আজ মন্তব্য করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। তাঁর কথায়, খয়রাতির যে প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের আগে দিয়ে থাকে, তার অর্থ কোথা থেকে আসবে, সে জন্য রাজ্যবাসীর মাথায় নতুন করে ঋণের বোঝা চাপবে কি না তা জানার অধিকার ভোটারদের রয়েছে বলে আজ মন্তব্য করেন রাজীব।
গত কয়েক বছর ধরেই ভোটের আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’ বা খয়রাতির রাজনীতি নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, ভোটের আগে বিরোধী কিছু দল ‘রেউড়ি’ বা বিনামূল্যে সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট কিনতে তৎপর হয়। এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকর আখ্যা দিয়ে মোদীকে বিভিন্ন সময়ে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের উদাহরণ তুলে ধরতে দেখা গিয়েছে।
অন্য দিকে বিরোধীদের বক্তব্য, রেউড়ি বণ্টনের প্রশ্নে মোদী তথা বিজেপিই সবার আগে থাকে। নির্বাচন এলেই ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের শিলান্যাসের ঢেউ তোলেন মোদী। অথচ, জনহিতে সেই প্রকল্প বিরোধী রাজ্যগুলি করলে প্রশ্ন তোলে মোদী সরকার। ভোট রাজনীতিতে রেউড়ি সংস্কৃতি রুখতে তৎপর হয়েছে নির্বাচন কমিশনও। সম্প্রতি তাঁরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে জানায়, ভোটের পরে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার প্রশ্নে অর্থ কী ভাবে আসবে তা ভোটারদের জানাতে বাধ্য থাকবে রাজনৈতিক দলগুলি।
সূত্রের মতে, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে প্রশ্ন তোলে, কমিশনের সেটা জানার অধিকার রয়েছে কি না। বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। নগদ অর্থ বা অন্য কোনও উপহারের (ট্যাব, টিভি, গয়না) বিনিময়ে যে রাজনৈতিক দলগুলির ভোট কেনার কৌশল নেয়, তাদের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আর্জি জানিয়েছিলেন এক সমাজকর্মী। সেই মামলায় গত শুক্রবার মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান সরকার, নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রকে নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্য নোটিশ জারি করে শীর্ষ আদালত।
আজ পাঁচ রাজ্যের ভোট ঘোষণার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় রাজনীতিতে পাইয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার কটাক্ষ করে বলেন, “পাঁচ বছর ধরে (ঘোষণার কথা) কেন মনে পড়ে না বুঝি না। সব কিছু শেষ এক মাস-১৫ দিনেই মনে পড়ে?” তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক দলগুলির অবশ্যই নিজেদের ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তেমনি সেই প্রতিশ্রুতি কবে, কী ভাবে পূর্ণ হবে তা জানার অধিকারও ভোটারদের রয়েছে।” রাজীব আরও বলেন, কমিশন তাই রাজনৈতিক দলগুলিকে হলফনামায় জানাতে বলেছিল, পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি পালন করতে গিয়ে রাজ্যের জিডিপির তুলনায় ঋণের হার কত দাঁড়াবে তা প্রকাশ্যে আনা হোক। রাজস্ব আয়ের কতখানি অংশ ঋণের সুদ মেটাতে চলে যাবে তা স্পষ্ট করা হোক। প্রতিশ্রুতি মেটাতে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পালন করা সম্ভব হবে, না কি তা বেড়ে যাবে তা জানানোর পক্ষে সওয়াল করে কমিশন। অর্থের জোগান দিতে বর্তমানে চালু কোনও প্রকল্প বন্ধ বা কাঁটছাট করা হবে কি না তা-ও ভোটারদের জানার অধিকার রয়েছে বলে মনে করে কমিশন। রাজীবের কথায়, “আসলে এমন ঘোষণা জনমোহিনী রাজনীতির তড়কা ছাড়া কিছু নয়। যারা জিতে আসে তাঁদের পক্ষে ওই জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি পালন করা বা বন্ধ করা দুটোই কঠিন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy