জোড়বাগের বাড়ি থেকে পি চিদম্বরমকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে সিবিআই। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
রাত আটটা পাঁচ। একটি সাদা ও একটি কালো গাড়ি হুস করে ঢুকে গেল ২৪, আকবর রোডে, কংগ্রেসের সদর দফতরে। তার দশ মিনিট পরেই শুরু হওয়ার কথা সাংবাদিক সম্মেলন। যেখানে পি চিদম্বরমের কৌঁসুলি কপিল সিব্বল, সলমন খুরশিদ, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিদের আসার কথা। কিন্তু দু’টো গাড়ি সামনের দিকে না ঢুকে পিছন দিকে চলে যেতেই শুরু হয়ে গেল দৌড়োদৌড়ি। তা হলে কি প্রকাশ্যে আসছেন চিদম্বরম! সেই গুঞ্জন সত্যি করে কালো গাড়ি থেকে নেমে এলেন দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। টিভির পর্দায় সেই ছবি দেখেই প্রবল ব্যস্ততা ছড়াল চার কিলোমিটার দূরের একটি সরকারি ভবনে। কয়েক মিনিটের মধ্যে দু’টি গাড়ি বেরিয়ে রওনা দিল কংগ্রেস সদর দফতরের পথে।
পরনে সাদা জামা, কালো প্যান্ট। দৃশ্যতই কিছুটা বিধ্বস্ত দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত ২৭ ঘণ্টা ধরে যাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ইডি এবং সিবিআই। হাতে এক গোছা কাগজ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চে বসলেন চিদম্বরম। পাশে আহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদ, রাজীব শুক্ল। বার্তা স্পষ্ট— গোটা দল তাঁর পাশে। কিন্তু বাকিরা কেউ কিছু বললেন না। হাতের কাগজ দেখে বিবৃতি পড়ে গেলেন চিদম্বরম। নিলেন না কোনও প্রশ্ন।
তত ক্ষণে আকবর রোডের প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে গাড়ি দু’টি। তাতে আরোহী সিবিআই আধিকারিকেরা। কিন্তু পথেই তাঁদের আটকে দেন কংগ্রেসের সমর্থকেরা। সেই সুযোগে জোড়বাগের নিজের বাড়ির দিকে রওনা দেন চিদম্বরম। সতীর্থদের বলে যান, ‘‘একটু স্নান করব। তার পরে সরকার যা করে করুক।’’
নিশি-নাটক
বুধবার রাত ৮টা ৪৫: কংগ্রেস দফতরে হাজির পি চিদম্বরম
• ৮টা ৫৫: সেখান থেকে বাড়িতে পি চিদম্বরম
• ৮টা ৫৭: বাড়িতে সিবিআই দল
তত ক্ষণে গাড়ি ঘুরিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। চিদম্বরম বাড়ি ফেরার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যান সিবিআই কর্তারা। চলে আসেন ইডি আধিকারিকেরাও। দরজা বন্ধ। পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন সিবিআই কর্তারা।
আগামিকাল রাজীব গাঁধীর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান রয়েছে দিল্লিতে। সে জন্য গোটা দেশ থেকে আসা যুব কংগ্রেস সদস্যেরা ভিড় করেছিলেন কংগ্রেস দফতরে। সিবিআই চিদম্বরমের বাড়িতে পৌঁছেছে জানতে পেরে তাঁদের একটি বড় অংশ পৌঁছে যায় সেখানে। ভিতরে যখন চিদম্বরম ও সিবিআই অফিসারদের বৈঠক চলছে, তখন বাইরে মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেছেন কংগ্রেস সমর্থকেরা। ‘মোদী তেরি তানাশাহি-গুন্ডাগিরি নেহি চলেগি’— স্লোগানের মধ্যেই চিদম্বরমকে মাঝের আসনে বসিয়ে বেরিয়ে আসে সিবিআইয়ের গাড়ি। বাঁধ ভাঙে সমর্থকদের। বনেটের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন কেউ কেউ। কেউ শুয়ে পড়েন রাস্তায়। লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় দিল্লি পুলিশ। তারই ফাঁকে সিবিআইয়ের গাড়ি দৌড় দেয় লোদী রোডে সিবিআই সদর দফতরের দিকে। সেখানেও ভিড়ের আশঙ্কায় পিছনের গেট দিয়ে ঢোকান হয় গাড়ি।
আরও পড়ুন: পি চিদম্বরম সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানেন?
• ৯টা ০৪: গেটে ধাক্কার পরে পাঁচিল টপকাল সিবিআই
তত ক্ষণে সিবিআই দফতরে চলে এসেছেন সংস্থার অধিকর্তা আর কে শুক্ল, সহ-অধিকর্তা অমিত কুমার-সহ অন্য পদস্থ কর্তারা। সিবিআই সূত্র জানিয়েছে, আজ সারা রাত জেরা করা হবে চিদম্বরমকে। তার আগে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল পরীক্ষা করে চিদম্বরমের। দেওয়া হয় রাতের খাবার। সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামিকাল চিদম্বরমকে আদালতে পেশ করে ১৪ দিন হেফাজতে রাখার আর্জি জানানো হতে পারে।
• ৯টা ২৪: সিবিআইয়ের আরও একটি দল ও ইডি ঢুকল বাড়িতে
• ৯টা ৩১: হাজির সিআরপি-ও
প্রশ্ন হল, প্রায় এক দিন কোথায় ছিলেন চিদম্বরম। তিনি নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী জামিন খারিজের পরে কাল সারা রাত আইনজীবীদের সঙ্গে বসে আত্মরক্ষার যুক্তি সাজিয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, দলের এক আইনজীবী নেতার সঙ্গে আলোচনা করার জন্য তাঁর বাড়িতেই ছিলেন চিদম্বরম। এ দিন পিতার গ্রেফতারের পরে চেন্নাইয়ে মুখ খোলেন কার্তি চিদম্বরম। তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই সরকারের হাতের পুতুল। আমি ১২ দিন সিবিআই হেফাজতে ছিলাম। কিন্তু আমার বিরদ্ধে কোনও প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি সিবিআই। কোনও এক জন অফিসারের সৎ সাহস নেই এ কথা বলার যে ওই মামলায় কোনও প্রমাণ নেই। কিছু লোককে খুশি করতেই ওই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
• ৯টা ৪৭: গ্রেফতার চিদম্বরম
• ১০টা ০১: আনা হল সিবিআই দফতরে
আজ চিদম্বরমও সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, ‘‘আমার নামে বা আমার পরিবারের নামে কোনও অভিযোগ নেই। এমনকি, আমার নামে কোনও আদালতে কোনও চার্জশিট জমা দেয়নি সিবিআই-ইডি।’’ তা সত্ত্বেও কী ভাবে চিদম্বরমকে গ্রেফতার করা হল, প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy