প্রতীকী ছবি।
আসার কথা ছিল জাহাজ। এল একটা নৌকা, তা-ও আটকে গেল নাব্যতার অভাবে। পণ্য কমিয়ে, রশি দিয়ে টেনে সেটিকে এগিয়ে দিতে হল। ফলে, পথে হল দেরি। যদিও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে জলপথে পণ্য এসে পৌঁছেছে ত্রিপুরায়। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব বলেছেন, “ত্রিপুরাবাসীর ইতিহাসে নতুন দিগন্ত। জলপথে পণ্য পরিবহণ শুরু হয়েছে।”
বাংলাদেশ থেকে জলপথে পণ্য নিয়ে আসার সময় ট্রলারটি যে আটকে যেতে পারে, আগেই সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বাংলাদেশ থেকে পণ্য পৌঁছনোর পরেও ট্রলার আটকে যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএম নেতা পবিত্র কর। মন্তব্য করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সাধ মেটাতে গিয়ে আজ এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।”
সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়া মহকুমার শ্রীমন্তপুর চেক পোস্টে আজ বাংলাদেশ থেকে জলপথে পণ্য পৌঁছনো নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার, ঢাকাস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গঙ্গোপাধ্যায় দাশ, ল্যান্ড পোর্ট অব অথরিটির চেয়ারম্যান এবং অন্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়েই। কিন্তু ভারতের সীমান্তের কাছে এসে ট্রলারটি আটকে পড়ে। ফলে মুখ্যমন্ত্রী-সহ অতিথিদের অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়।
ট্রলার পৌঁছনোর পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ত্রিপুরার মানুষের স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হল। ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়। তার মধ্যে ৬৩০ কোটির পণ্য আসে বাংলাদেশ থেকে। এখন জলপথ খুলে যাওয়ায় পরিবহণের খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যাবে। রাজ্যের মানুষের কাছে কম মূল্যে পণ্য পৌঁছবে। ত্রিপুরার মানুষের প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে আন্তরিকতা রয়েছে, এই জলপথ খুলে দেওয়ায় তা আবারও প্রকাশ পেল। এর জন্য তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ফোনে জানান, তাঁদের তরফে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। তবে গোমতী নদীর নাব্যতা সঙ্কটে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানির ট্রলারটি আজ সোনামুড়া বন্দরে পৌঁছনোর আগে কুমিল্লা সদর উপজেলার বিবির বাজার এলাকায় আটকে যায়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত ট্রলারটি সেখানেই আটকে ছিল। পরে অন্য একটি নৌকায় সিমেন্টের কিছু বস্তা সরিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় রশি দিয়ে টেনে ট্রায়াল রানের ট্রলারটিকে উদ্ধার করা যায়। এতেই অতিরিক্ত সময় লেগেছে।
কমডোর গোলাম সাদেক এ দিন দুপুরে বেলুন উড়িয়ে কুমিল্লার বিবির বাজারে বাংলাদেশ থেকে নৌ-চলাচলের উদ্বোধন করেন। পরে ফোনে জানিয়েছেন, ট্রায়াল রানের মাধ্যমে নৌ-পথের প্রতিবন্ধকতাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়াতে হবে। তা হলেই এই নৌপথটি উপযোগী হবে। একসঙ্গে ২০০-৩০০ টন পণ্য না-নিয়ে গেলে এর কোনও সুফল ব্যবসায়ীরা পাবেন না। নাব্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি নদীতে থাকা গাছের গুঁড়িও সরাতে হবে। নীচু সেতুগুলিও উঁচু করা দরকার। আগামী গ্রীষ্মে এই সব কাজ করা গেলে আগামী বর্ষায় গোমতীকে নৌ চলাচলের জন্য অনেকটা উপযোগী করে তোলা যাবে।
বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই জলপথে পণ্য আনা নিয়ে ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করে আসছে। বারবার প্রশ্ন তুলেছে এর বাস্তবতা নিয়। পণ্য আসতে বিলম্বের কারণে জলে কাগজ-থার্মোকলের নৌকা ভাসিয়েও বিদ্রুপ করেছে। আজও সিপিএমের পবিত্র কর বলেন, “আজকের আয়োজনটি ছিল অনেকটা মুখ্যমন্ত্রীর নিজের সাধ পূরণের জন্যে। তাই এমন বিশৃঙ্খলা হয়েছে।” পবিত্রবাবুর মতে, দু’দেশের সম্পর্কের কথা চিন্তা করেই এ ভাবে দড়ি দিয়ে ট্রলার টেনে আনতে হয়েছে। এই নদীর নাব্যতা না-বাড়িয়ে কোনও ভাবেই পণ্য পরিবহণ করা যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy