প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আমলে চালু করা আবগারি নীতির কারণে ২০০২ কোটি টাকার রাজস্ব খুইয়েছিল দিল্লি সরকার। এমনটাই দাবি করল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (সিএজি)-র রিপোর্ট। মঙ্গলবার দিল্লি বিধানসভায় সেই রিপোর্ট পেশ করেন দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত। তার পরেই হইচই শুরু করেন বিরোধী দল আপের বিধায়কেরা। প্রসঙ্গত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালের চালু করা নীতি খারিজ হয়ে গিয়েছে আগেই।
কেজরীর আমলে চালু করা আবগারি নীতি ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তে নেমেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেলে গিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়াল, উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া, রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পরে নতুন বিজেপি সরকার দাবি করেছে, চলতি বিধানসভা অধিবেশনে সিএজির ১৪টি বকেয়া রিপোর্টই পেশ করা হবে। তাদের আরও দাবি, এই রিপোর্টগুলিতে পূর্বতন আপ সরকারের একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশিত হবে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার আবগারি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সিএজির রিপোর্ট পেশ করা হল। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কেজরীর আমলে নতুন নীতি চালু হওয়ার পরে ১৯টি জ়োনে ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স ফেরত (সারেন্ডার) দিলেও নতুন করে বরাত দেওয়া হয়নি। সেই কারণে লাইসেন্স বাবদ নতুন করে আর রাজস্ব পায়নি দিল্লি সরকার। এর ফলে ৮৯০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল তাদের। আঞ্চলিক লাইসেন্স দিতে দেরি করার জন্য দিল্লি সরকারের ক্ষতি হয়েছিল ৯৪১.৫৩ কোটি টাকা।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০১০ সালের ‘দিল্লি আবগারি নীতি’র ৩৫ নম্বর ধারা কার্যকর করেনি কেজরী সরকার। ওই ধারা অনুযায়ী, একাধিক লাইসেন্স ইস্যু করা ছিল নিষিদ্ধ। রিপোর্টে দাবি, আপ সরকার সেটাই করেছিল। কিছু ব্যবসায়ী মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগে লাইসেন্স জমা করে নতুন করে তা নিয়েছেন। রিপোর্টে আরও দাবি, কেজরী সরকার আবগারির নীতি অনুযায়ী শর্ত না মেনে বহু ব্যবসায়ীকে লাইসেন্স দিয়েছিল। ওই ব্যবসায়ীদের অপরাধের সঙ্গে যোগ রয়েছে কি না, তাঁদের ব্যবসার আর্থিক খতিয়ান না দেখেই দেওয়া হয়েছিল লাইসেন্স।
কেজরীর আমলে দিল্লিতে দেশে তৈরি বিদেশি মদ (আইএমএফএল)-এর দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া ছিল ‘অস্বচ্ছ’, দাবি সিএজির ওই রিপোর্টে। সেখানে আরও দাবি করা হয়েছে, এই মদের দাম বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব হারিয়েছে দিল্লি। রিপোর্ট অভিযোগ, এল১ লাইসেন্স ছিল যে সব ব্যবসায়ীর, তাঁরা নিজেদের সুবিধামতো আইএমএফএলের দাম বৃদ্ধি করেছিলেন। সেই ছাড় দিয়ে রেখেছিল সরকার। তার প্রভাবই পড়েছিল রাজস্বে। নতুন আবগারি নীতি চালু করার পরে দিল্লিতে মদের গুণমানও ঠিকঠাক নির্ধারণ করা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হয়নি বলে জানিয়েছে রিপোর্ট।
২০২১-২২ সালে দিল্লির আবগারি নীতি বদল করেছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকার। ২০২১ সালের নভেম্বরে তা কার্যকর হয়েছিল। দিল্লির উপরাজ্যপাল (লেফটেন্যান্ট গভর্নর) ভিকে সাক্সেনা ২০২২ সালের জুলাই মাসেই অভিযোগ করেছিলেন, নতুন আবগারি নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে। নতুন আবগারি নীতি কার্যকরের ক্ষেত্রে অসম্মতি জানানোর পাশাপাশি তিনি এ বিষয়ে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছিলেন। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে এই আবগারি দুর্নীতিকেই হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। তাতে সফলও হয়েছিল। ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪৮টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ২২টিতে জিতেছে আপ।