Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Tripura

বিবর্ণ অনুষ্ঠানে শপথ মানিকের, নীরব মোদী

প্রথম বারের মতোই আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। আগের বারের মতোই উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Picture of Narendra Modi and other BJP larders.

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানিক সাহা (বাঁ দিক থেকে প্রথম) শপথ নেওয়ার পরে অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী

 সন্দীপন চক্রবর্তী
আগরতলা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫৮
Share: Save:

বিজেপি নেতৃত্বের ঘোষণা ছিল, এই দিনটা হতে চলেছে ‘ঐতিহাসিক’! কারণ, ত্রিপুরায় কোনও বাম-বিরোধী সরকারের দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরার শপথ অনুষ্ঠান এই প্রথম। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দৃশ্য দেখা গেল অন্য! হোলির দিনে কার্যত বিবর্ণ অনুষ্ঠানে শুরু হল ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস!

প্রথম বারের মতোই আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। আগের বারের মতোই উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাঁচ বছর আগে তদানীন্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় নতুন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে শপথ পাঠ করিয়ে চলে যাওয়ার পরে জনসভার চেহারা নিয়েছিল অনুষ্ঠান। বক্তৃতা করেছিলেন মোদী এবং অন্য নেতারা। এ বার রাজ্যপাল সত্যদেও নারায়ণ আর্য মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এবং আরও ৮ মন্ত্রীকে শপথ পাঠ করানোর পরেই সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কোনও বক্তৃতা শোনার সুযোগ হয়নি জনতার। মঞ্চে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেই বেরিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিধানসভা ভোটের আগে একই ময়দানে মোদীর শেষ কেন্দ্রীয় সমাবেশে যা ভিড় ছিল, জিতে আসার পরে বুধবারের অনুষ্ঠানে সেই রকম জনসমাগম বা উচ্ছ্বাসও চোখে পড়েনি। মঞ্চে মোদী দৃশ্যত গম্ভীর মুখে বসে ছিলেন। যা একেবারেই মোদী-সুলভ নয় বলে চোখে লেগেছে অনেকেরই। শপথ পাঠের পরেই এক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে নমস্কার করতে যাচ্ছিলেন। হাতের ইশারায় তাঁকে থামিয়ে দিয়েছেন মোদী।

প্রধানমন্ত্রী রোড-শো করতে পারেন বলে মহড়া দিয়ে রাখা হয়েছিল। বাস্তবে তা-ও হয়নি। ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেন কি না, শুনবেন বলে নিজেদের দফতরে অপেক্ষায় ছিলেন বিরোধী নেতারা। সন্ত্রাসের কথা বলেই শপথ অনুষ্ঠান তাঁরা বয়কট করেছিলেন। কিন্তু মোদী কিছুই বলেননি! আর শপথ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতাপগড়ের সিপিএম বিধায়ক রামু দাসের বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। অসুস্থ মা-কে আগরতলায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন বিধায়ক।

অনুষ্ঠানে আড়ষ্ট দেখিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডাকেও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বরং পরাজিত উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মাকে নীচে বসে থাকতে দেখে তাঁকে মঞ্চে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

কেন এমন বিবর্ণতা? রাজ্য বিজেপি নেতারা বলছেন, মোদী বক্তৃতা করবেন কি না, তা নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা ছিলই। পরে বিশদ সূচি ঠিক তৈরি হলে শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলবেন না, এমনই ঠিক হয়। তবে মোদীর নাম করেই ময়দানে দলের কর্মী-সমর্থকদের আসার বার্তা দেওয়া হয়েছিল।

বাকিটার উত্তর অবশ্য বিজেপি শিবিরের বিভাজনের রসায়নে নিহিত। মোট ৯ জনের মন্ত্রিসভা এ দিন শপথ নিয়েছে। তার মধ্যে নেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। একটি সূত্রের খবর, বিজেপির ৩২ জন বিধায়কের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে মানিক ও প্রতিমার পক্ষে একেবারে আড়াআড়ি বিভাজন ছিল। কঠিন নির্বাচন তাঁকে সামনে রেখে উতরে যাওয়ায় মানিকের পক্ষেই সায় দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জোটসঙ্গী আইপিএফটি-র একমাত্র বিধায়ক শুক্লাচরণ নোয়াতিয়াও মানিকের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তাঁকে মন্ত্রীও করা হয়েছে। আর মুখ্যমন্ত্রীর আসন না পাওয়ার পরে প্রতিমাকে আপাতত রাজ্যে কোনও দায়িত্বেই রাখা হয়নি।

উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেউ হবেন কি না, ঘোষণা হয়নি এখনও। যাঁরা শপথ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রতন লাল নাথ, প্রণজিৎ সিংহ রায়, সান্ত্বনা চাকমা, সুশান্ত চৌধুরী আগেও মন্ত্রী ছিলেন। টিঙ্কু রায়, বিকাশ দেববর্মা, সুধাংশু দাস ও শুক্লাচরণ— এই চার জন নতুন। শপথ নেওয়া ৯ জনের মধ্যে জনজাতি প্রতিনিধি তিন জন। মন্ত্রিসভায় আরও তিনটি জায়গা এখনও খালি। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের অভিমত, তিপ্রা মথা শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয়, তা দেখে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হবে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য সকালে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ঐতিহাসিক দিন! আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলা-চমকও থাকবে।’’ আগের চেয়ে বেশি মহিলা বিধায়ক জিতে এলেও মন্ত্রিসভায় অবশ্য সান্ত্বনা ছাড়া আপাতত আর কোনও মহিলা মুখ নেই। পরে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র জানান, মুখ্যমন্ত্রী মানিক এবং শাহ-নড্ডাদের সঙ্গে আইপিএফটি-সহ জনজাতি নেতাদের আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রয়াত এন সি দেববর্মার কন্যা জয়ন্তী দেববর্মা এবং আর এক নেত্রী পাতালকন্যা জামাতিয়াকে সরকারি কোনও পর্ষদের চেয়ারপার্সন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁদের পদের মর্যাদা হবে প্রতিমন্ত্রীর সমতুল।

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura Manik Saha Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy