মহিলা বিক্ষোভকারীদের প্রিজন ভ্যানে তোলার চেষ্টা মহিলা পুলিশ কর্মীদের। বেঙ্গালুরুতে বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই
বেঙ্গালুরুর সব থেকে বড় ভক্তও এ-শহরকে বিশাল প্রতিবাদের শহর বলতে পারবেন না। নতুন নাগরিকত্ব আইন সেই শহরের মানুষকে এমন ভাবে রাস্তায় বার করে আনবে কে জানত?
কিছুটা আভাস অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল রবিবার। যখন ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপে খবর ছড়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজার তিনেক লোক জড়ো হন টাউন হলের সামনে। টাউন হলের সিঁড়ি এবং সামনের ১০০ বর্গমিটার মতো খোলা রাস্তা বেঙ্গালুরুর প্রধান প্রতিবাদস্থল তবে ছোটখাটো প্রতিবাদের জায়গা। আর বেঙ্গালুরুতে প্রতিবাদ ছোটই হয়। অফিসের দিনে হলে শ’খানেক, সপ্তাহান্তে শ’পাঁচেক, তার বেশি জনসমাগম ভারতের আইটি রাজধানীতে কেউই আশা করেন না।
ব্যতিক্রম হয় ক্বচিৎ-কদাচিৎ। গৌরী লঙ্কেশের হত্যার পর মানুষের ঢল নেমেছিল টাউন হলের সামনে। একের পর এক নিরীহ মুসলিমকে পিটিয়ে মারার প্রতিবাদ করতে এসেছিলেন প্রায় হাজার খানেক মানুষ। ‘নট ইন মাই নেম’ ব্যানার হাতে গিরীশ কারনাড ছিলেন সামনের সারিতে। তবে উপস্থিত জনাকুড়ি পুলিশকর্মী ব্যতিব্যস্ত হননি।
নাগরিক সমাজের এই চেহারা দেখে অভ্যস্ত বেঙ্গালুরু পুলিশ ১৫ ডিসেম্বরের জমায়েত দেখে হয়তো কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল, তাই ১৯ ডিসেম্বরের দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঠিক আগের সন্ধ্যায় শহরে ১৪৪ ধারা জারির কথা ঘোষণা করে। একেই অফিসের দিন, তার উপর শহরে ১৪৪ ধারা— এর পর কেউ টাউন হলের ত্রিসীমানায় আসার কথা ভাববেন না, এই ভেবে মোটামুটি নিশ্চিন্তে ছিলেন পুলিশকর্তারা, ধরেই নেওয়া যায়। কারণ, সকাল ১১টা নাগাদ প্রতিবাদীরা কয়েক জন এসে গুটিকয়েক পুলিশের দেখা পান মাত্র। কিন্তু খানিক পরেই যখন রামচন্দ্র গুহর মতো বিশিষ্ট জন এসে উপস্থিত হন এবং সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘিরে ধরেন, তখন পুলিশ রামচন্দ্র-সহ প্রতিবাদী জনতাকে বাসে চাপিয়ে নিয়ে চলে যায় এবং টাউন হল সংলগ্ন অঞ্চলকে ব্যারিকেড করে দেয়।
ততক্ষণে রাস্তার অন্য পারে হাজির আরও শ-দুয়েক মানুষ। পুলিশের হাতে মোটে দু’টি সরকারি বাস। তাতেই চড়িয়ে দেওয়া হল প্রতিবাদীদের। প্রথম বাসের যাত্রী ও আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শর্মদীপ বসুর কথায়, ‘‘একজন পুলিশ বাসের সামনে দাঁড়িয়ে ড্রাইভারকে রাস্তা বোঝাচ্ছিলেন। সেই সুযোগে ট্র্যাফিক সিগন্যালে বাস দাঁড়াতেই আমরা পেছনের দরজা দিয়ে নেমে আবার টাউন হলের দিকে হাঁটা লাগালাম।’’
বিকেল পর্যন্ত কয়েক হাজার লোক এসেছেন প্রতিবাদে যোগ দিতে। শুরুতে প্রশাসন চেষ্টা করেছে তাদের নিরস্ত করতে, তার পর হার স্বীকার করেছে। বাম দলগুলির ডাকে আর একটি প্রতিবাদে হাজির
পাভেল চক্রবর্তী জানান, শান্তিতেই প্রতিবাদ করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। পুলিশ এখানেও খানিক বাদে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। এক সাংবাদিক ধৃত প্রতিবাদীদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন, থানায় অত লোকের জায়গা না হওয়ায় পাশেই একটি ‘কল্যাণমণ্ডপ’ বা বিয়েবাড়িতে তাঁদের বসানো হয়েছে। ঘণ্টা দুয়েক বাদে তাঁরা ছাড়া পান। তত ক্ষণে রাজ্য প্রশাসন নড়ে-চড়ে
বসেছে। মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা সাংবাদিকদের বলছেন, ‘‘রামচন্দ্র গুহকে আটক করা হয়েছে না কি? পুলিশকে বলেছি, আইন নিজেদের হাতে তুলে না নিতে।’’
আগামী শনিবার আবার এক সঙ্গে প্রতিবাদে নামবে বেঙ্গালুরু, একই জায়গায়, মধ্যরাতে।
(লেখিকা বেঙ্গালুরুতে কর্মরত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy