Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

আজাদির ‘কর্তব্য’ শেখালেন মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুবকদের উদ্দেশে আজই বলেছেন, ‘‘মিথ্যা গুজবে কান দিয়ে হিংসা ছড়াবেন না।’’

নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share: Save:

বর্ষশেষের রাতে পথে নামতে পারেন রাজধানীর পড়ুয়ারা। সরকার-বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হতে পারে বছরের শুরুর দিনটি। তা রুখতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মুখার্জিনগর এলাকায় হস্টেল বা ভাড়ায় থাকা পড়ুয়াদের রাজধানী ছেড়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে দিল্লি পুলিশ— এমন একটি ভিডিয়ো সামনে আসতেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। পুলিশ ওই ভিডিয়ো জাল বলে দাবি করলেও ইতিমধ্যেই হস্টেল ছেড়েছেন ভিন্ রাজ্যের অনেক পড়ুয়াই। ফলে ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ এবং মোদী সরকারের ভূমিকা। আর জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুবকদের উদ্দেশে আজই বলেছেন, ‘‘মিথ্যা গুজবে কান দিয়ে হিংসা ছড়াবেন না।’’

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা এবং অধিকারের প্রশ্নে পথে নেমেছেন নাগরিকেরা। দারিদ্র, স্বৈরাচারী মনোভাব এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে ‘আজাদি’র স্লোগান জোরদার হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজ লখনউয়ের অটল-স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‘আজাদি-দিওয়ানেদের (স্বাধীনতাপ্রেমী) স্বপ্ন যদি সফল করতে হয়, তা হলে অধিকারে যেমন জোর দিতে হবে, তেমনই কর্তব্য এবং দায়িত্বের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু অধিকারের সীমারেখা
রয়েছে। দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি অনেক ব্যাপক।’’

রবিবার রামলীলা ময়দান থেকে হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দিলেও বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নাগরিক মৃত্যু নিয়ে নীরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যে-রাজ্যে এই বিক্ষোভে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই যোগী-রাজ্যে দাঁড়িয়ে আজ তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে কিছু মানুষ হিংসার আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছেন। ঘরে বসে তাঁরা নিজেদের প্রশ্ন করুন, ওই হিংসাত্মক বিক্ষোভে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, যে-সব পুলিশ জখম হয়েছেন, তাঁদের পরিবার কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন? প্রশ্ন করুন, এ রাস্তা কি ঠিক ছিল? যা জ্বালানো হয়েছে, তা কি তাঁদের সন্তানদের কাজে আসত না?’’

সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে প্রধানত উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত পুলিশ যে ভাবে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে বা জামা মসজিদের পাশের এলাকায় ঢুকে লাঠি চালিয়েছে, তাতে এই অভিযোগও উঠেছে যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ‘পোশাক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের চেনা যায়’ মন্তব্যের পরে পুলিশ ‘পোশাক’ দেখে অত্যাচার চালাচ্ছে। পুলিশের কাজকে সম্মান জানানোর কথা বলে আজ মোদীর মন্তব্য, ‘‘সরকারি সম্পত্তি যাঁরা ভাঙচুর করছেন, তাঁদের বলব, ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভাল নিকাশি পাওয়া যেমন নাগরিকের অধিকার, তেমনি সেগুলি সুরক্ষিত রাখাও নাগরিক দায়িত্ব। নিরাপদ থাকা যেমন আমাদের অধিকার, তেমন পুলিশ ও তাঁদের কাজকে সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব।’’

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক অবশ্য থামছে না। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ভিন রাজ্যের পড়ুয়াদের বড় অংশ মুখার্জিনগর এলাকায় থাকেন। গত দু’দিন ধরে সেখানে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, পুলিশের উর্দিধারী এক ব্যক্তি বলছেন, বহিরাগত ছাত্ররা যেন ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত এলাকার বাইরে থাকেন। তিনি বলছেন, ‘‘এলাকার সমস্ত পেয়িং গেস্ট, হস্টেলে বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা পড়ুয়ারা যেন নিজেদের রাজ্যে ফিরে যান। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল নয়। ১৪৪ ধারা রয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে। কিছু গন্ডগোল হলেই গ্রেফতার করা হবে।’’ এর পরে প্রায় হুমকির সুরে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কেন গ্রেফতার হয়ে নিজেদের কেরিয়ার শেষ করতে চাইছ! নিজের ভালর জন্য বাড়ি ফিরে যাও। আমরা এলাকার সমস্ত হোটেলও বন্ধ করে দিচ্ছি।’’ ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরে এলাকা খালি করে বাড়ি ফিরে যান অনেক পড়ুয়া। যাঁরা ট্রেনের টিকিট পাননি, তাঁরা দিল্লির অন্যত্র সাময়িক ভাবে কোনও পরিচিতের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।

যদিও দিল্লি পুলিশের দাবি, ওই ভিডিয়ো জাল। ডিসিপি (নর্থ ওয়েস্ট) বৈজয়ন্ত আর্য বলেন, ‘‘পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে। দেখা হচ্ছে, কে ওই ভিডিয়ো ছড়িয়েছে।’’ তবে গোয়েন্দা সূত্রের মতে, বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের শুরুর দিন সরকারের বিরুদ্ধে বড় বিক্ষোভে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের। ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, সম্ভবত তা রুখতেই পরিকল্পিত প্রচার চালানো হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

CAA Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy