খোদ শিবরাজ চৌহানের ঘনিষ্ঠরাও মনে করছেন, ওই যোজনার কারণে লড়াই করার জমি পেয়েছে বিজেপি। —ফাইল চিত্র।
ঠিক যেন নিলাম!
গোড়ায় বিজেপি দেবে বলেছিল ১০০০। কংগ্রেসও ১০০০। ভোট এগিয়ে আসতেই, বিজেপির নতুন দর, ১২৫০। যা দেখে কংগ্রেস দর বাড়িয়ে করেছে ১৫০০। কংগ্রেসের সূচক উঠতেই বিজেপির শেষ দর হেঁকেছে ৩০০০।
তবে শর্ত একটাই, জিতে আসতে হবে দলকে। তা হলে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মতো, মধ্যপ্রদেশের মহিলাদের লাডলি বহেন যোজনায় তিন হাজার টাকা মাসিক অর্থ সাহায্য দেবে বিজেপি সরকার। নীতিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার এই রেউড়ি সংস্কৃতির সমালোচনা করে এসেছেন বরাবর। তাই কংগ্রেস বলছে, বিজেপির কাছে এখন রাজ্যে ভোটে জেতা অনেক বেশি জরুরি। আর তাই কার্যত ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায় চলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যে রেউড়ি সংস্কৃতি এক সময়ে তাঁর দু’চক্ষের বিষ ছিল, এখন সেই গরল পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভোপালের হাবিবগঞ্জের বিজেপি দফতরে শেষ সপ্তাহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন রাকেশ পারিহার। দলের পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক গাল হাসি। বললেন, ‘‘শেষ সময়ে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। যার একটাই কারণ লাডলি বহেন যোজনা। মহিলাদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে ওই প্রকল্প।’’ বিজেপির দাবি, ওই যোজনাকে হাতিয়ার করে হাওয়া ঘুরছে মধ্যপ্রদেশে। বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, তিন মাস আগে যেখানে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কোনও লড়াইয়েই ছিল না দল, সেখানে গত চার মাসের প্রথম দু’মাসে হাজার ও পরের দু’মাসে মহিলাদের ১২৫০ টাকা করে অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি বিজেপির পালে হাওয়া টানতে অনেকটাই সাহায্য করেছে। খোদ শিবরাজ চৌহানের ঘনিষ্ঠরাও মনে করছেন, ওই যোজনার কারণে লড়াই করার জমি পেয়েছে বিজেপি। না হলে ক’মাস আগেও কার্যত ওয়াকওভার পাওয়ার জায়গায় ছিল কংগ্রেস।
হাতে টাকা পেয়ে খুশি ভোপাল সংলগ্ন গোবিন্দপুর বিধানসভার রাজগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বংশী-লক্ষ্মী দেবীরা। বললেন, ‘‘গত চার মাস ধরে টাকা নগদ আসছে। বিজেপি দিচ্ছে।’’ ভোট কাকে দেবেন? বংশী দেবীর জবাব, ‘‘ঠিক করিনি এখনও। ইচ্ছে ছিল কংগ্রেসকে দেওয়ার।’’ কিন্তু এখন বিজেপি টাকা দেওয়ায় ধর্ম সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন বংশীরা। অন্য দিকে লক্ষ্মীর জবাব, ‘‘বিজেপি টাকা দিচ্ছে, তাই ওদের দেব ভাবছি। না হলে কোনও প্রশ্ন ছিল না।’’
মহিলাদের মধ্যে হাওয়া ঘুরছে দেখে নিজেদের ইস্তাহারে লাডলি বহেন যোজনার ধাঁচেই আর্থিক প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে বিজেপি। শনিবার প্রকাশিত ইস্তাহারে কন্যাসন্তানকে দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য, উজ্জ্বলা ও লাডলি বহেন যোজনার আওতায় থাকা পরিবারকে ৪৫০ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার, গরিব পরিবারকে আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে রেশন, কৃষিপণ্যে সহায়ক-মূল্য বৃদ্ধি ছাড়াও কৃষক সম্মাননিধি প্রকল্পে প্রত্যেক কৃষককে ১২ হাজার টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও। তারাও পাঁচশো টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার, মহিলাদের ১৫০০ টাকা আর্থিক সাহায্য, বিনামূল্যে শিক্ষা, বেকারভাতা দেওয়ার কথা বলেছে।
সব মিলিয়ে ঢালাও প্রতিশ্রুতির পথে হেঁটেছে দু’দলই। যা পূরণ করতে হলে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা ফি বছর গলে যাবে কোষাগার থেকে। নির্বাচনের সময়ে এ ধরনের ভর্তুকি, জনমুখী আর্থিক সাহায্যকে অতীতে রেউড়ি সংস্কৃতি বলে কটাক্ষ করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উপর চাপ পড়ে। ভেঙে পড়ে দেশের অর্থব্যবস্থা। সময়ে সময়ে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও বাংলাদেশের উদাহরণ টেনেও রেউড়ি সংস্কৃতির তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিনি। কিন্তু ভোপালের দশ নম্বর মার্কেটে কংগ্রেসের প্রচারে ব্যস্ত বিকাশমোহনের মতে, ‘‘এখন লোকসভার আগে ভোট বৈতরণী পার হতে বিজেপি সেই রেউড়ি সংস্কৃতিরই সাহায্য নিয়েছে। এখন মোদী নীরব। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেও বুঝতে পারছেন, না হলে এ যুদ্ধজয় সম্ভব নয়। প্রশ্ন হল, বিজেপি যদি খয়রাতি করতে পারে, বিরোধীরা করলে কেন পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হবে?’’
কত দিন এ ভাবে হাতে নগদ টাকা গুঁজে দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্নও আছে অনেকের মনেই। ভোপালের ট্যাক্সিচালক বিনোদের পরিবার ওই সাহায্য পেলেও তিনি মনে করেন, গিমিক দিয়ে ভোটে জেতা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ বিজেপিকে সরানোর ব্যাপারে মন স্থির করে ফেলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কত দিন চলবে এ ধরনের প্রকল্প? খুব বেশি এক বছর। বিজেপি ক্ষমতায় এলে লোকসভা পর্যন্ত টাকা দিয়ে তার পর কোনও কারণ দেখিয়ে ওই প্রকল্প বন্ধ করে দেবে। আমজনতা যা বোঝার বুঝছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy