Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Aamir Khan

আমিরের তুরস্ক সফর ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর, ফের ‘দেশদ্রোহী’ তকমা অভিনেতাকে

দেশে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে বলে মন্তব্য করে এর আগেও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন আমির।

তুরস্কের ফার্স্ট লেডির সঙ্গে আমিরের এই ছবি ঘিরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

তুরস্কের ফার্স্ট লেডির সঙ্গে আমিরের এই ছবি ঘিরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ২১:২৬
Share: Save:

অসহিষ্ণুতা নিয়ে মন্তব্য করায় ‘দেশদ্রোহী’ তকমা জুটেছিল আগেই। আমির খানেতুরস্ক সফর ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ছে দেশে। কাশ্মীর নিয়ে সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার ভারত বিরোধী মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোয়ানকে। বছরের গোড়ায় দিল্লি হিংসা নিয়েও মোদী সরকারকে নিশানা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সম্প্রতি সেই এর্দোয়ানের স্ত্রী এমিনের সঙ্গে আমির খানের সাক্ষাতের একাধিক ছবি ও ভিডিয়ো সামনে এসেছে। এমিনে নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় আমিরের সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন। তাতেই ফের দক্ষিণপন্থীদের নিশানায় উঠে এসেছেন আমির।

আসন্ন অক্টোবরে তুরস্কে ‘লাল সিং চাড্ডা’ ছবির শুটিং শুরু করতে চলেছেন আমির। তার আগে কোথায় কোথায় শুটিং করা যায়, তা নিয়ে রেকি করতে গিয়েছেন তিনি। তাঁকে দেখে ইতিমধ্যেই হইচই পড়ে গিয়েছে সেখানকার বলিউড অনুরাগীদের মধ্যে। তার নানা ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তা নিয়ে কোনও ওজর আপত্তি না করলেও যেই না এমিনের সঙ্গে আমির খানের ছবি প্রকাশ পেয়েছে, তাতেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ‘দু’মুখো’ বলে কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার তাঁকে ইসলামিক ভাবধারায় বিশ্বাসী বলেও উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি তিনি কোন কোন দেশে গিয়েছেন, কার কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলেও দাবি তুলেছেন অনেকে।

শনিবার ১৫ অগস্টের দিনই এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। ওই দিন আমিরের সঙ্গে নিজের একাধিক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন রিচেপ এর্দোয়ানের স্ত্রী এমিনে। তিনি লেখেন, ‘‘ইস্তানবুলে বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা, চিত্রনির্মাতা এবং পরিচালক আমির খানের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হল। আমি খুব খুশি হয়েছি যে তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায় লাল সিং চাড্ডার শুটিং করবেন বলে স্থির করেছেন আমির। আমি এখন সেদিকেই তাকিয়ে।’’

এমিনের টুইট।

আরও পড়ুন: পাঁচিল নিয়ে তাণ্ডব, বিশ্বভারতী বন্ধ ।। সব নির্মাণ সৌন্দর্য বাড়ায় না: মমতাপাঁচিল নিয়ে তাণ্ডব, বিশ্বভারতী বন্ধ ।। সব নির্মাণ সৌন্দর্য বাড়ায় না: মমতা

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যত দিন গড়িয়েছে তুরস্কের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ভারতের। ২০১৭-য় ভারত সফরে আসার আগে পাকিস্তানকে ‘মিত্র দেশ’ বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন রিচেপ তায়িপ এর্দোয়ান। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীরে আর রক্তপাত হতে দেওয়া যাবে না। বহুস্তরীয় আলোচনার মাধ্যমে এর স্থায়ী সমাধানে বার করতে আমরা আলোচনায় অংশ নিতেই পারি।’’ তাঁর এই মধ্যস্থতার প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিল্লি। জানিয়ে দেওয়া হয়, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাশ্মীরের যে অংশ পাকিস্তান দখল করে রেখেছে, তা মুক্ত করার জন্য ইসলামাবাদের সঙ্গেই আলোচনা হবে। এ নিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চায় না ভারত।

তার পরেও, গত বছর মোদী সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করলে, বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে সরব হন এর্দোয়ান। যুক্তি দেন, দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করা সম্ভব নয়। ভারতের দখলে থাকা কাশ্মীরে ৮০ লক্ষ মানুষ আটকে রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিল্লিতে হিংসা ছড়িয়ে পড়লে, তা নিয়েও মোদী সরকারকে নিশানা করেন এর্দোয়ান। আঙ্কারায় একটি সভায় তিনি বলেন, ‘‘ভারতে এখন ব্যাপক আকারে গণহত্যা হয়। কাদের গণহত্যা? মুসলিমদের। কারা করে? হিন্দুরা।’’

সেই সময় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তাঁর সেই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, ‘‘এই বিবৃতি ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর। রাজধানীতে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর চেষ্টা চলছে। আমাদের আর্জি, এই সময়ে কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করবেন না।’’ তার পর সম্প্রতি এর্দোয়ান সরকার আয়া সোফিয়া মিউজ়িয়ামকে মসজিদে রূপান্তরিত করলে ভারতের অযোধ্যা মামলার সঙ্গে তার তুলনা শুরু হয়। তবে এ নিয়ে নিশ্চুপ থাকারই সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি।

এমন পরিস্থিতিতে আমির খানের সঙ্গে তুরস্কের ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’র এই দহরম মহরম অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এ দিন আমিরকে কটাক্ষ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বলিউডের তিন খান—শাহরুখ, সলমন এবং আমিরকে ‘থ্রি খান মাস্কেটিয়ার্স’ বলে উল্লেখ করে তাঁদের সম্পত্তি কী ভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন স্বামী। দেশে-বিদেশে তাঁদের সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলেও দাবি তুলেছিলেন তিনি। আমির খআনের ইস্তানবুল সফর নিয়ে চর্চার মধ্যে সোমবার টুইটারে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী লেখেন, ‘‘আমির খানকে থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের মধ্যে এক জন বলে আমি যে ভুল করিনি, তা প্রমাণ হয়ে গেল।’’

বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র লেখেন, ‘‘মাই নেম ইজ খান এবং আমি খলিফা শাসনে বিশ্বাস করি: আমির খান।’’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র শ্রীরাজ নায়ার লেখেন, ‘‘আমির খানের ছবি বয়কট করা উচিত। ধর্মান্ধ সইফ যিনি বলেছিলেন ব্রিটিশরা আসার আগে ভারতের কোনও অস্তিত্ব ছিল না, বয়কট করা উচিত তাঁকেও।’’

২০১৫ সালে দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খোলায় আমির খানের কেরিয়ারেও তার প্রভাব পড়েছিল। ই-কমার্স সংস্থা স্ন্যাপডিল, যাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন আমির, তারা তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। এমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে বিজেপি মুখপাত্র সুরেশ নাখুয়া টুইটারে লেখেন, ‘‘আমির খান এখন কোন কোন কোন ব্র্যান্ড এনডোর্স করছেন, তা কি কারও জানা আছে? আমাকে জানান আপনারা।’’

বিজেপির মুখপত্র বলে পরিচিত ‘স্বরাজ্য’ পত্রিকায় নিয়মিত যাঁর লেখা ছাপা হয়, সেই বিকাশ সারস্বত লেখেন, ‘‘‘আমার স্ত্রী-রা হিন্দু হলেও, সন্তানরা যে শুধু ইসলাম মেনেই চলবে, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছি আমি,’ আমির খান পৌরুষ জাহির করা এক জন মানুষ নাকি মুসলিম ধর্মান্ধ, নাকি দু’টোই?’’

তবে গোটা ঘটনায় আমিরের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন আম আদমি পার্টি (নেতাৎ) আশুতোষ। দেশের অন্যান্য সমস্যাগুলি ধামাচাপা দিতেই খামোকা বিষয়টির রাজনীতিকরণ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। টুইটারে আশুতোষ লেখেন, ‘‘আমি আমির খানকে সমর্থন করি। ভুয়ো জাতীয়তাবাদীরা, যাঁরা দেশের অর্থনীতি, করোনা পরিস্থিতি, চিনা আগ্রাসন এবং সরকারের কাজ নিয়ে কোনও আলোচনা হোক চান না, ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছেন।’’

অক্ষয়কুমার নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকার নেওয়ায়, যাঁরা কটাক্ষ করছিলেন, তাঁরা এখন কোথায়, এমন মন্তব্যও করেন কেউ কেউ। দু’বছর আগে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু ভারত সফরে এলে, গোটা বলিউড তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল, যার মধ্যে শামিল ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, কর্ণ জোহর, বিবেক ওবেরয়, প্রসূন জোশীরাও। কিন্তু আমন্ত্রণ জানানো হলেও নেতানইয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে যাননি শাহরুখ, সলমন, আমিররা।

নেতানইয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে একছাদের নীচে তারকারা।

আরও পড়ুন: বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যেই, খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট​

তাঁদের অনুপস্থিতির কারণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে সেইসময় বলা হয়, নিরীহ প্যালেস্তিনীয়দের হত্যার বিরোধিতা করতেই ওই অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। তাই অনেকের প্রশ্ন, নেতানইয়াহু ইহুদি বলেই কি তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি আমির? আর এর্দোয়ান মুসলিম বলে তাঁর পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে ছুটে গিয়েছেন? তুরস্ক যেহেতু পাকিস্তানের বন্ধু, তাই আমির দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং তিনি দেশদ্রোহী বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।


তবে এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ ছবির প্রচারে গিয়ে ২০১৭ সালে আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট ভবনে রিচেপ তায়িপ এর্দোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আমির। করমর্দন করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, সেইসময় তোলা তাঁদের একটি ছবিও প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেফিরে আসে। তবে স্বজনপোষণের অভিযোগে যে সময় বলিউড বিদ্ধ, ঠিক সেইসময় আমিরের এই সফর ‘লাল সিং চাড্ডা’-র উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হলিউড ছবি ‘ফরেস্ট গাম্প’-এর হিন্দি রিমেক ‘লাল সিং চাড্ডা’। ছবিতে আমিরের বিপরীতে রয়েছেন করিনা কপূর খান। স্বজন পোষণের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলে কয়েক দিন আগেই বিতর্ক জড়িয়েছিলেন তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy