Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
BJP

BJP: উচ্চ বর্ণের সঙ্গে দলিত ভোটের বড় অংশ নিজের দিকে টেনে উত্তরপ্রদেশে এ বার সফল বিজেপি

উচ্চ বর্ণের ভোট তো বিজেপির সঙ্গে ছিলই। এ বার উত্তরপ্রদেশের ওবিসি, দলিত ভোটব্যাঙ্কের বড় অংশও বিজেপি পাকাপাকি ভাবে নিজের ঝোলায় পুরে ফেলছে।

ফাইল চিত্র

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৬
Share: Save:

‘মণ্ডলও আমার, কমণ্ডলুও আমার’।

উচ্চ বর্ণের ভোট তো বিজেপির সঙ্গে ছিলই। এ বার উত্তরপ্রদেশের ওবিসি, দলিত ভোটব্যাঙ্কের বড় অংশও বিজেপি পাকাপাকি ভাবে নিজের ঝোলায় পুরে ফেলছে।

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির টানা দু’বার জয়ের পরে বিজেপি-বিরোধী শিবির মনে করছে, ব্রাহ্মণ, ঠাকুর, বৈশ্য-সহ উচ্চ বর্ণের ভোটের পাশাপাশি বিজেপি যাদব ভোট বাদ দিয়ে ওবিসি, জাটভ এবং অন্যান্য দলিত ভোটও নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে। ফলে মুছে যাচ্ছে মণ্ডল বনাম কমণ্ডলু রাজনীতির ভেদাভেদ। তার বদলে কমণ্ডলুর সঙ্গে এ বার মণ্ডল রাজনীতিতেও বিজেপি থাবা ফেলছে। এই পুরো প্রচেষ্টাই চলছে নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে। যিনি নিজেই ওবিসি।

উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে উচ্চ বর্ণের হিন্দুত্বের দাপটের মোকাবিলায় মুলায়ম সিংহ যাদব ও কাঁসিরাস জোট বেঁধেছিলেন। মুলায়মের যাদব ও অন্যান্য ওবিসি ভোটের সঙ্গে জুড়েছিল কাঁসিরামের দলিত ভোট। তার পাল্টা জবাবে বিজেপি রামমন্দির আন্দোলনকে সামনে রেখে কমণ্ডলু রাজনীতি শুরু করে। যাতে জাতপাতের ভেদাভেদ মুছে সব হিন্দুকে ধর্মের নামে এক ছাতার তলায় আনা যায়।

এ বার উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে একগুচ্ছ ওবিসি নেতা বিজেপি ছেড়ে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়ে বিজেপির দলিত-বিরোধী মানসিকতার সমালোচনা করেছিলেন। যোগী আদিত্যনাথ মেরুকরণের চেষ্টা করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের ভোটকে ৮০ শতাংশ হিন্দু বনাম ২০ শতাংশ মুসলিমের লড়াই-এর তকমা দিয়েছিলেন। যোগীর উপরে ক্ষুব্ধ ওবিসি নেতারা বলেছিলেন, লড়াইটা আসলে ৮৫ শতাংশ ওবিসি, দলিত, নিম্নবর্ণের মানুষের সঙ্গে বিজেপির ১৫ শতাংশ উচ্চ বর্ণের ভোটের।

উত্তরপ্রদেশের ভোটের ফল বলছে, ব্রাহ্মণ, ঠাকুর এবং অন্য উচ্চ বর্ণের ভোটের পাশাপাশি ২০১৭-র মতোই ওবিসি, দলিত, আদিবাসী ভোটও পেয়েছে বিজেপি। অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে এসপি জোট যাদব ছাড়া অন্যান্য ওবিসি ভোট কিছুটা পেলেও সিংহ ভাগই বিজেপির দখলে গিয়েছে। মায়াবতীর ঝোলা থেকে এ বার আরও দলিত ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। বিজেপি ওবিসি, দলিতদের মধ্যে প্রতিটি সম্প্রদায়ের ভোট টানতে আলাদা ভাবে নজর দিয়েছিল। কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট টানতে বিজেপি-র অস্ত্র ছিল শরিক আপনা দল (সোনেলাল)। বিজেপি নিজে ২৫৫টি আসন পেয়েছে। আপনা দল পেয়েছে ১২টি আসন। নিষাদ বা মাঝিমাল্লা সম্প্রদায়ের ভোট টানতে বিজেপি নিষাদ পার্টি (নির্বল ইন্ডিয়ান শোষিত হামারা আম দল)-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। ওই দলও ৬টি আসন পেয়েছে।

উল্টো দিকে ঠাকুর সম্প্রদায়ের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বিজেপি ব্রাহ্মণদের ভোটও ধরে রেখেছে। লখিমপুর খেরি কাণ্ডের পরেও বিজেপি ব্রাহ্মণ নেতা অজয় মিশ্র টেনিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে সরায়নি। ফল হল, টেনির সাংসদ এলাকার ৮টি বিধানসভা আসনেই বিজেপি জিতেছে।

বিজেপির এক প্রবীণ নেতার ব্যাখ্যা, আসলে শুধু হিন্দুত্বের রাজনীতি করে সব সময় জেতা সম্ভব নয়। বিজেপি বহু দিন আগে থেকেই এই চেষ্টা করছে। মণ্ডল বনাম কমণ্ডলু রাজনীতির সময়ও বিজেপির মুখ ছিলেন ওবিসি নেতা কল্যাণ সিংহ। মধ্যপ্রদেশে সামনে রাখা হয়েছে ওবিসি সম্প্রদায়েরই উমা ভারতী, শিবরাজ সিংহ চৌহানদের। তার আগে বিহারেও যাদবদের আধিপত্য ঠেকাতে বিজেপি যাদব ছাড়া অন্য ওবিসি নেতাদের টিকিট দিয়েছে। বলা যেতে পারে, তিন দশকের প্রচেষ্টার পরে এখন তার ফল মিলতে শুরু করেছে। উচ্চ বর্ণের সঙ্গে ওবিসি, দলিত ভোট ঘরে ঢুকছে। মুছছে কমণ্ডলু বনাম মণ্ডলের ভেদাভেদ।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP UP Assembly Election 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE