দিল্লির ভোটের ফলপ্রকাশের পরে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও নতুন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, সেই সিদ্ধান্ত হল না। বিজেপির কোনও নেতার কাছেই তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু দিল্লির বিজেপি নেতাদের কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা হল, দিল্লি থেকে আম আদমি পার্টির ‘নাম-ও-নিশান’ মুছে দেওয়াই এখন বিজেপির লক্ষ্য।
বিধানসভা ভোটে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপির অন্যতম অস্ত্র ছিল ‘শিশমহল’ বা মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেজরীওয়াল ওই সরকারি বাসভবন সাজিয়েছিলেন। ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কেজরীওয়াল সেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও বিজেপি প্রচারের গাড়িতে ‘শিশমহল’-এর মডেল সাজিয়ে দিল্লির মানুষকে দেখিয়েছিল। এবার বিজেপির বিধায়ক বিজেন্দ্র গুপ্তের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন শনিবার কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে, ৬ নম্বর ফ্ল্যাগস্টাফ রোডের ওই বাংলো সাজাতে যে খরচ হয়েছে, তার তদন্ত করতে হবে। এমনিতেই দিল্লির আবগারি দুর্নীতিতে কেজরীওয়ালদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-র তদন্ত চলছে। এবার তাঁর সরকারি বাসভবন নিয়ে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের তদন্ত নতুন করে আম আদমি পার্টির প্রধানকে বিপাকে ফেলারই কৌশল বলে বিজেপি সূত্র মেনে নিচ্ছে।
দিল্লির আম আদমি পার্টির সরকারের সবথেকে বড় সাফল্য ছিল সরকারি স্কুলের ভোল পাল্টে দেওয়া ও গরিব মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্য মহল্লা ক্লিনিক। বিজেপির পরিকল্পনা হল, মহল্লা ক্লিনিকের নাম বদলে আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির করা হবে। প্রথম ধাপে বস্তি এলাকায় এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা হবে। তারপরে সমস্ত মহল্লা ক্লিনিকের নাম বদলে আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির রাখা হবে। দিল্লিতে এখন ৫৪৬টি মহল্লা ক্লিনিক চালু রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো দিল্লিও মোদী সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প গ্রহণ করেনি। তার বদলে আম আদমি পার্টির সরকার দিল্লি আরোগ্য কোষ চালু করে গরিবদের স্বাস্থ্যের খরচ জোগান দিত। বিজেপি দিল্লিতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিখরচায় চিকিৎসার স্বাস্থ্য বিমার জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করবে। বিজেপির অভিযোগ, মহল্লা ক্লিনিক প্রকল্পেও দুর্নীতি হয়েছে। দিল্লিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব বলেন, ‘‘দিল্লিতে আগের সরকারের সমস্ত কুকীর্তিতে ইতি টানা হবে। সবাই উচিত শাস্তি পাবে। শিশমহল হোক বা আবগারি কেলেঙ্কারি, রেশন কার্ডের দুর্নীতি হোক কিংবা মহল্লা ক্লিনিক দুর্নীতি, যাঁরা দিল্লিতে লুট চালিয়েছেন, তাঁরা শাস্তি পাবেন।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করতে হবে রবিবার সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক হতে পারে। তারপরে মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত হবে। আগামী সপ্তাহে ঘটা করে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। রাজ্য সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবর সঙ্গে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সতীশ উপাধ্যায়, জাঠ নেতা প্রবেশ বর্মা থেকে ব্রাহ্মণ নেতা উত্তম শর্মার নাম জল্পনায় রয়েছে।
সূত্রের খবর, ২০২৭-এ পঞ্জাবের ভোটের কথা মাথায় রেখে দিল্লিতে শিখ মুখ্যমন্ত্রী করা হলে মনজিন্দর সিংহ সিরসার নাম ভাবা হতে পারে। মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হলে মহিলা মোর্চার নেত্রী রেখা গুপ্তের পাশাপাশি পঞ্জাবি সম্প্রদায়ের শিখা রায়ের নামও উঠে এসেছে। দলিত নেতা হিসেবে বিজেপি বিধায়ক জিতেন্দ্র মহাজনও দৌড়ে এগিয়ে। বিজেপি বিধায়কেরা স্বীকার করছেন, কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে, তা নিয়ে কারও কাছে ইঙ্গিত নেই। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহই সিদ্ধান্ত নেবেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)