প্রতীকী ছবি।
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ নির্বাচনমুখী রাজ্যে ভোট পরিচালনা করার দায়িত্ব বণ্টন আজ সেরে ফেলল বিজেপি। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখতে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অমিত শাহের আস্থাভাজন ওবিসি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধানকে। এ রাজ্যে ৪২ শতাংশ ওবিসি ভোট। একই সঙ্গে আজ উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আলিগড়ে জাঠ রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিংহের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মনে করা হচ্ছে, আলিগড়ের মাঠে দাঁড়িয়ে মেরুকরণের বার্তা দেওয়ার সঙ্গেই কৃষি আইনের বিরোধিতায় সরব জাঠ সমাজকে পাশে পেতে বিজেপি নেতৃত্ব ওই উদ্যোগ নিয়েছেন।
বছর ঘুরলেই উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব ও গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন। এক মাত্র পঞ্জাব বাদে বাকি চার রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। রাজ্যগুলিতে ক্ষমতা ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ বিজেপির কাছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে কোন্দলের প্রভাব পড়েছে সংগঠনে। তুলনামূলক ভাবে মণিপুর ও গোয়ায় ভাল অবস্থায় রয়েছে বিজেপি। কিন্তু কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভের কারণে পঞ্জাবে ক্ষমতা দখল যে কার্যত অসম্ভব হতে চলেছে, তা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের নেতারা। ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে তাই সংগঠনকে গুছিয়ে নিতে মাঠে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মোদী- শাহেরা। আজ প্রকাশিত তালিকায় উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ধর্মেন্দ্র প্রধানকে। উত্তরাখণ্ডের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রহ্লাদ জোশী। ওই রাজ্যে সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। বাংলার এক মাত্র প্রতিনিধি তিনি। পঞ্জাব ও গোয়ার দায়িত্বে রয়েছেন যথাক্রমে গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত ও দেবেন্দ্র ফডণবীস। পঞ্চম রাজ্য মণিপুরের দায়িত্ব পেয়েছেন অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ ভূপেন্দ্র যাদব। বিজেপি সূত্রের মতে— তালিকা থেকে স্পষ্ট, আসন্ন নির্বাচন জিততে মোদী-শাহের ঘনিষ্ঠদের উপরেই ভরসা করেছে দল।
গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন খোদ অমিত শাহ। এ বার ওবিসি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান সেই দায়িত্বে থাকলেও, ওই রাজ্যের আয়তন ও জাতপাতের সমীকরণকে মাথায় রেখে গোটা প্রদেশকে ছয় ভাগে ভেঙে আলাদা আলাদা এলাকার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ছয় নেতার হাতে। এর মধ্যে কৃষিবহুল পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লোকসভার সাংসদ সঞ্জয় ভাটিয়াকে। মূলত বিক্ষুব্ধ কৃষক ভোট ব্যাঙ্ককে ঘরে ফিরিয়ে আনতেই হরিয়ানার কারনালের জাঠ নেতা সঞ্জয় ভাটিয়ার হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে দল। মথুরা সংলগ্ন বৃজ ভূমি ও কাশী— ধার্মিক মাহাত্ম্য রয়েছে এমন দুই এলাকার দায়িত্ব যথাক্রমে দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণ নেতা সঞ্জীব চৌরাসিয়া এবং সুনীল ওঝার হাতে। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সাড়ে চার বছরের শাসনে একাধিক সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণ সমাজ। সেই ক্ষোভ প্রশমনে পাশের রাজ্য বিহারের ব্রাহ্মণ নেতা চৌরাসিয়ার উপরে ভরসা রেখেছে দল। কাশী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণ নেতা সুনীল ওঝা দলে মোদীর আস্থাভাজন বলেই পরিচিত। বাণিজ্যিক কেন্দ্র কানপুরের দায়িত্ব বৈশ্য সমাজের নেতা সুধীর গুপ্ত এবং মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যানাথের এলাকা গোরক্ষপুরের সংগঠন সামলানোর ভার অরবিন্দ মেননের হাতে দেওয়া হয়েছে। অওয়ধ এলাকার দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়াই সত্যকুমার।
গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল জাঠ ভোট। যে কারণে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিরোধীরা। কিন্তু মোদী সরকারের কৃষি আইনের কারণে সেই জাঠ ভোটে ভাঙন স্পষ্ট। ভাঙন বজায় থাকলে বিজেপির ক্ষমতায় যে ফেরা প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে, তা বুঝতে পারছেন দলের নেতারা। তাই জাঠ সমাজকে বার্তা দিতে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আলিগড়ে জাঠ রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিংহের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, ১৯২৯ সালে সৈয়দ আহমেদ খানকে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জমি দিয়েছিলেন মহেন্দ্র প্রতাপ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অভিযোগ ছিল, জমি দিলেও এত দিন ওই জাঠ রাজার অবদানকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এসেছে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বঞ্চনা ঘোচাতেই দু’বছর আগে মহেন্দ্র প্রতাপের নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ঘোষণা করেছিলেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, এক দিকে জাঠ সমাজের মন জয় করা যেমন লক্ষ্য তেমনই আলিগড়ের মতো এলাকায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস হলে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ করা সহজ বলে মনে করছেন আদিত্যনাথেরা।
ওই বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে রাষ্ট্রীয় লোক দলের নেতা জয়ন্ত চৌধরি। এত দিন কৃষি আইনের বিরোধিতায় সরব জয়ন্ত এখন মহেন্দ্র প্রতাপকে ভারতরত্ন দেওয়ার জন্য মোদী সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে সরব। অন্য দিকে আলিগড়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রশ্নে সরাসরি না হলেও ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি। রাজনীতির অনেকের মতে, আলিগড়ের মতো এলাকায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিজেপি এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy