রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
লোকসভা নির্বাচনের সলতে পাকানো শুরু হয়ে গিয়েছে দেশ জুড়েই। এই আবহে রেল প্রকল্পও রাজনৈতিক যুদ্ধের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দক্ষিণের রাজ্য কেরলে!
কেরলের উত্তরে কর্নাটক সীমান্ত ঘেঁষা কাসারগোড় থেকে দক্ষিণের তিরুঅনন্তপুরম পর্যন্ত স্বল্প দ্রুত গতির রেলর সংযোগ গড়ে তোলার জন্য ‘সিলভার লাইন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সে রাজ্যের বাম সরকার। জমি অধিগ্রহণের সমস্যা এবং রাজনৈতিক বিরোধিতার জট কাটিয়ে সেই প্রকল্পের অগ্রগতি অবশ্য দ্রুত হচ্ছে না। এরই মধ্যে ওই একই পথে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের পরিষেবা উদ্বোধন করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে তিরুঅন্তপুরম থেকে কান্নুর পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও ‘বন্দে ভারতে’র গন্তব্য সম্প্রসারিত করে দেওয়া হয়েছে কাসারগোড় পর্যন্ত। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের মতে, একই পথে রাজ্য সরকারের পরিকল্পিত স্বল্প দ্রুত গতির রেল সংযোগ বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ‘বন্দে ভারত’ চালু করে দিয়ে সিপিএমকে টেক্কা দিতে চেয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার! বাম সরকারও এখন ‘সিলভারলাইনে’র কাজ তাডাতাড়ি এগোতে তৎপর।
সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যেই কেরলে বরাবরের রাজনৈতিক লড়াই। বিজেপি নানা চেষ্টাতেও ওই রাজ্যে বিশেষ জমি তৈরি করতে পারেনি। কর্নাটক হাতছাড়া হওয়ার পরে এখন গোটা দক্ষিণ ভারতেই কোথাও তারা আর শাসকের ভূমিকায় নেই। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এমতাবস্থায় মানুষের মন পেতে রেলের মতো সরকারি প্রকল্পকেই কাজে লাগাতে চাইছে মোদীর দল। প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘বন্দে ভারতে’র পাশাপাশি কোচিতে দেশের প্রথম ওয়াটার মেট্রোর উদ্বোধন করেছেন। আরও এক ধাপ এগিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী কেরলে লম্বা দূরত্বের জন্য আরও ‘বন্দে ভারত’ এবং স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে বন্দে ভারত মেট্রো ট্রেন বরাদ্দ করা হবে।
নানা বাধা-বিতর্কে ‘সিলভার লাইন’ যে ভাবে আটকে রয়েছে, ‘বন্দে ভারতে’র পরে তার ভবিষ্যৎ কি আরও বিপন্ন হল? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দনের দাবি, ‘‘দু’টো রেলের মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না। ‘সিলভার লাইন’ চালু হলে আনেক কম সময়ে রাজ্যের দক্ষিণ থেকে উত্তর প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন মানুষ। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে মানুষের সুবিধা-অসুবিধা অগ্রাধিকার নয়। ‘সিলভারলাইন’ প্রকল্পে যা সহযোগিতা করার, তা তারা করছে না। বরং, তারা রেল নিয়ে প্রতিযোগিতার রাজনীতি করতে ব্যস্ত!’’ দিল্লিতে দলীয় বৈঠকের অবসরে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ওই প্রকল্প নিয়ে ফের কথাও বলে এসেছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এমন একটা প্রকল্প বাম সরকার হাতে নিয়েছে, যার রূপায়ণ করা খুবই কঠিন। কেন্দ্রীয় সরকার বরং বর্তমান পরিকাঠামোর মধ্যে রাজ্যের মানুষকে আরও বেশি রেল পরিষেবা দিচ্ছে। রাজনীতির রং তো ওঁরাই (সিপিএম) দেখছেন!’’
রেল সূত্রের বক্তব্য, নদী-নালার মধ্যে দিয়ে যাওয়া কেরলের বেশির ভাগ রেলপথে অসংখ্য বাঁক রয়েছে। ওই রাজ্যে ট্রেনের গড় গতি ৪৫ কিলোমিটার। আপাতত ৮ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে ‘বন্দে ভারত’ ৫২৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে। পাশাপাশি, রেল দফতর লাইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ছোটানোর জন্য ৩৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। দেড় বছরের মধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রেল পথের বাঁক দূর করার প্রক্রিয়াও রয়েছে। অন্য দিকে, রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘সিলভার লাইন’ প্রকল্পে দৈনিক ৭৪টি ট্রেন চলার কথা। ইউরোপীয় ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আওতায় ব্রড গেজের পরিবর্তে স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইনে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প রূপায়িত হলে দৈনিক অন্তত ১০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করবেন। প্রতি বছর পেট্রল-ডিজ়েল খাতে অন্তত ৫৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
আপাতত দুই রেল-প্রকল্পই রাজনৈতিক টানাপড়েনের উপাদান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy