জাতীয় পতাকা হাতে প্রধানমন্ত্রী। বুধবার জোহানেসবার্গে। ছবি: পিটিআই।
পাঁচ রাজ্যের ভোট ও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে আজকের ‘চন্দ্রবিজয়’-কে অবলীলায় নিজের মুকুটে সাফল্যের পালক হিসেবে গুঁজে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আজ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ চন্দ্রযান-৩-এর সফ্ট ল্যান্ডিং হতে চলেছে বলে জানিয়ে দিয়েছিল ইসরো। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে বিকেল পাঁচটা থেকেই টিভির পর্দায় চোখ রাখেন দেশবাসীর বড় অংশ। ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পাঁচ মিনিট আগে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাবতীয় উৎকণ্ঠার শেষে বিক্রম চাঁদে নিরাপদে অবতরণের তোড়জোড় শুরু করতেই জোহানেসবার্গ থেকে হাততালি দেওয়া মোদীর ছবি ফুটে ওঠে পাশের পর্দায়। হাতে দুলছে জাতীয় পতাকা। এর পরে রাজনীতির ধাক্কায় বিক্রমের চন্দ্র-স্পর্শের সেই মাহেন্দ্রক্ষণটুকু দেখারই সুযোগ পেলেন না দেশবাসী। সেই সময়ে পর্দা জুড়ে শুধু মোদীর মুখ এবং তাঁর ময়দানি বক্তৃতা শুরু।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস-এর সম্মেলনে বক্তৃতায় চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যকে আজ প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে ভারতবাসীর গর্ব ও আবেগের সঙ্গে জুড়ে দেন তা থেকে স্পষ্ট, এই সাফল্য আগামী দিনে ভোটের প্রচারে বড় হাতিয়ার হতে চলেছে মোদীর কাছে। আজ নিজের বক্তৃতায় দেশবাসীকে পরিবারের লোক হিসাবে উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘এ হল বিকশিত ভারতের শঙ্খনাদ। নতুন ভারতের জয়ঘোষ।’’ পরিকল্পিত ভাবেই আজকের চন্দ্রযান-৩-এর চাঁদের মাটিতে পা দেওয়ার যাবতীয় কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদীর বলে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের সভাপতি জে পি নড্ডা থেকে অমিত শাহ— সকলেরই বক্তব্য, মোদীই দেশবাসীর হাতে চাঁদ এনে দিয়েছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজিতেও ক’টা লাইন বলেন মোদী। অনেকের মতে, ব্রিকস-এর অন্য সদস্য দেশকে বার্তা দিতেই তাঁর এই ইংরেজি ভাষণ। মোদী বলেন, ‘‘প্রথম দেশ হিসাবে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে উৎসাহ দেবে।’’ ব্রিকসের অন্য দুই প্রধান সদস্য রাশিয়া ও চিন প্রযুক্তি ও অর্থনীতিতে ভারতের চেয়ে বহু এগিয়ে থাকলেও, আজ মোদী বুঝিয়ে দেন, উন্নত দেশগুলি যা করতে পারেনি ভারত তা করে দেখিয়েছে। চন্দ্রাভিযানের সাফল্যের দিনে ব্রিকস-এর মঞ্চে মোদী প্রস্তাব দিয়েছেন, ‘‘ব্রিকস-এর সদস্যরা এ বার মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে একটি সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করুক। সেখানে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির একটি সাধারণ উপগ্রহ কেন্দ্র থাকবে। মহাকাশ ক্ষেত্রে এমন ভাবে সহযোগিতা বাড়ানো হবে, যাতে তা বিশ্বের কাজে আসে।’’ আজ ভারতের সাফল্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্রিকস-এর আয়োজক রাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘আমি ভারতকে অভিনন্দন জানাই, বিশেষ করে জানাই প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি মহাকাশ সহযোগিতার কথা বলেছেন। ব্রিকস পরিবারের কাছে এটা অসামান্য মুহূর্ত। এই সাফল্যে আমরাও গর্বিত।’’
অতীতে এই অভিযানে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। এ বারও সংশয় ছিল। তাই গোড়া থেকেই কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার নীতি নিয়ে এগোচ্ছিলেন মোদী। কিন্তু আজ চন্দ্রযানের সুষ্ঠু অবতরণের গোটাটাই মোদী সরকারের কৃতিত্ব বলে ঝাঁপান বিজেপি নেতৃত্ব। আজ ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মোদী। বিদেশ সফর শেষ করেই তিনি ইসরোর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান। সূত্রের মতে, আগামী দিনে দল ‘চন্দ্রবিজয়’ উপলক্ষে একাধিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার কথা ভাবছে। যা থেকে স্পষ্ট, বিজ্ঞানীদের এই অর্জনকে ভোটের প্রচারে লাগাতে চান বিজেপি নেতৃত্ব। সভাপতি জে পি নড্ডা বলেন, “ভারত নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সাফল্যের নতুন নতুন শিখর ছুঁচ্ছে। আজকের এই মিশন আত্মনির্ভর ভারত নীতির ফসল। প্রধানমন্ত্রীর নিরন্তর উৎসাহ ও বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা ছাড়া এই সাফল্য মিলত না।” অমিত শাহের কথায়, “মোদী সরকারের মহাকাশ নীতির ফলে ৫৫টি মহাকাশযান, ১০৪টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মতো রেকর্ড গড়া সম্ভব হয়েছে।”
বিজেপি যে আজকের সাফল্য থেকে রাজনৈতিক ফায়দা কুড়োবে, তা বুঝতে পারছে বিরোধী দলগুলি। পাল্টা যুক্তিতে আজ তাই অতীত স্মৃতি উস্কে দিয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, “ভারতের মহাকাশ যাত্রা শুরু হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ সালে। জহওরলাল নেহরুর উদ্যোগে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি অন স্পেস রিসার্চ’ গঠন করা হয়েছিল। যার সদস্য ছিলেন হোমি জাহাঙ্গির ভাবা, বিক্রম সারাভাইরা। আজ যে সাফল্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা যৌথ অবদান, দলগত সংহতির নমুনা। এই সাফল্য শুধুই ইসরোর।” ইসরোর ভূমিকার প্রশংসা করে টুইট করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, “মহাকাশের সুপার লিগে ভারতও স্থান করে নিয়েছে। যাদের জন্য এই সাফল্য এসেছে তাঁদের আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই। ইসরোর বিজ্ঞানীদের মধ্যে বাংলার অনেকে রয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy