Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

প্রচার ছাড়াই লড়ে যেতেন কট্টর কোবিন্দ

১৯৯৭-এ জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে জোর বিতর্ক হয়। সে সময় কোনও বিধায়ক পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর ভারতের অধিকার ছেড়ে দেওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভায় সরব হন রামনাথ। প্রশ্ন তোলেন, এই সব মন্তব্য কি সরকারের নজরে পড়েছে?

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক হাজার টাকার নোট বাতিল করে কি কিছু লাভ হল! যদি না হয়ে থাকে, তা হলে কালো টাকা রুখতে আর কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে!

প্রশ্নকর্তার নাম রামনাথ কোবিন্দ। রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপির প্রার্থী। রাজনীতিতে কোনও অঘটন না ঘটলে দেশের হবু রাষ্ট্রপতি

নরেন্দ্র মোদীর নোটের সিদ্ধান্ত বাতিল নয়। প্রশ্নটা তিনি করেছিলেন ১৯৭৮-এ মোরারজি দেশাই জমানার এক হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে। সে বারও কালো টাকার বাড়বাড়ন্ত রুখতেই এক হাজার টাকার নোট বাতিল হয়েছিল।

১৯৯৮-এ রামনাথ তখন রাজ্যসভার সাংসদ। দিল্লিতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার। যশবন্ত সিন্হা অর্থমন্ত্রী। নতুন করে ১ হাজার নোট ফিরিয়ে আনা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। সে সময়ই সংসদে রামনাথ প্রশ্ন করেছিলেন, ১ হাজার নোট বাতিল করে কিছু লাভ হয়েছে কি না!

১৯৯৪ থেকে ২০০৬—দু’দফায় উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন রামনাথ। ইতিহাস বলছে, শুধু নোট বাতিল নয়। ১২ বছরের সাংসদ জীবনে এমন অনেক বিষয়েই রামনাথ মাথা ঘামিয়েছিলেন, যা নিয়ে দেশের রাজনীতিতে এখনও বিতর্ক চলছে। নিজে দলিত নেতা। স্বাভাবিক ভাবেই বারবার দলিতদের সমস্যা, তাদের উপর অত্যাচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরব হয়েছেন বিহারে দলিতদের উপর নির্যাতন নিয়ে।
তার সঙ্গেই ঘুরে-ফিরে এসেছে গবাদি পশু, জম্মু-কাশ্মীরের মতো বর্তমান জ্বলন্ত সমস্যাও।

গরু নিয়েই যেমন। রাজ্যসভায় একবার তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, গরু-মহিষের খাবারে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও মৃত পশুর হাড়-মাংস মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না! তার ফলেই ‘ম্যাড কাউ’ রোগ দেখা দিচ্ছে কি না! সরকারই বা এ বিষয়ে কী করছে!

আরও পড়ুন:রাইসিনায় মোদীর তাস রামনাথ

১৯৯৭-এ জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে জোর বিতর্ক হয়। সে সময় কোনও বিধায়ক পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর ভারতের অধিকার ছেড়ে দেওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভায় সরব হন রামনাথ। প্রশ্ন তোলেন, এই সব মন্তব্য কি সরকারের নজরে পড়েছে? এটা কি সংবিধান লঙ্ঘন নয়? সরকারি পদে থাকা কোনও ব্যক্তি কি এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন? সরকার কি এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে?

বিজেপি নেতারা বলছেন, দলিতদের জন্য দাবিদাওয়া ছাড়াও সাংসদ থাকাকালীন স্কুল শিক্ষা নিয়ে মাথা ঘামাতেন রামনাথ। সাংসদ তহবিল থেকে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে স্কুল তৈরিতে অর্থ বরাদ্দও করেছেন। কানপুরে নিজের পৈতৃক ভিটেটিও তিনি আমজনতার অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দান করে দিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানলে অবাক হতে পারেন, রাজ্যের সমস্যা নিয়েও সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন কোবিন্দ। রাজ্যসভায় ১৯৯৭-এ একবার তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলিতে ১৯৮৩ সালের পরে কর্মী নিয়োগ বন্ধ। এ দিকে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চা-বাগানের এলাকাও বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন করে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে কি না? আবার বেঙ্গল কেমিক্যালসের সম্প্রসারণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রামনাথ কোবিন্দ।

তবে বিতর্ক থেকে নিজেকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি রামনাথ। মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছিল রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন। বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কোবিন্দ বলেন, ইসলাম ও খ্রিস্ট্রধর্মের উৎস ভারত নয়। ফলে কোনও ভাবেই এদের সংরক্ষণ দেওয়ার দরকার নেই। রামনাথ কোবিন্দের সেই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy