ফাইল চিত্র।
এক দিকে মূল্যবৃদ্ধি কিংবা অগ্নিপথ যোজনার মতো বিতর্কিত বিষয় থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি ঘোরানো, অন্য দিকে জনজাতি এলাকায় জনভিত্তি মজবুত করা—এই দুই লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বিতর্ক আপাতত জিইয়ে রাখার কৌশল নিয়ে এগোতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
দু’দিন আগে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলায় বিতর্কের সূত্রপাত। যা নিয়ে গতকাল প্রকাশ্যে একাধিকবার ক্ষমা চান অধীর। আজ রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমা চান। যদিও তাতেও সন্তুষ্ট নয় শাসক শিবির। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রিজিজু বলেন, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে রাষ্ট্রপতিকে অপমান করার উদ্দেশ্যেই অধীর একাধিকবার ওই শব্দটি বলেন।’’ অধীরের ওই মন্তব্য সার্বিক ভাবে আদিবাসী সমাজের প্রতি কংগ্রেসের বিরূপ মনোভাবের পরিচয় বলে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি বলেন, ‘‘দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই তাঁর সম্পর্কে কুমন্তব্য করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। জনজাতি সমাজের প্রতি কংগ্রেসের হীন মানসিকতা এতেই স্পষ্ট।’’
আজ সকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন স্মৃতি ইরানি, জন বার্লা। উভয় পক্ষই ওই বৈঠকে সৌজন্য সাক্ষাৎকার বললেও, রাষ্ট্রপতি সংক্রান্ত বিতর্ককে পরিকল্পিত ভাবে জিইয়ে রাখার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। সামনেই গুজরাত, ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা ভোট রয়েছে। ওই রাজ্যগুলিতে জনজাতি সমাজের মধ্যে কংগ্রেসের প্রভাব রয়েছে। মূলত কংগ্রেসের সেই ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরাতেই চলতি বিতর্ককে জিইয়ে রাখার কৌশল নিয়েছে দল। আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার যথাক্রমে লোকসভা ও রাজ্যসভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রের মতে, ওই আলোচনা হয়ে গেলেই ফের রাষ্ট্রপত্নী বিতর্কে সংসদ ভেস্তে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। বিজেপির লক্ষ্যই হল, প্রয়োজনে সংসদের অধিবেশন বানচাল করে দিয়ে বিষয়টি এতটাই উচ্চগ্রামে নিয়ে যাওয়া যাতে জনজাতি সমাজে এর প্রভাব পড়ে। সংসদের অধিবেশন শেষ হলে বিষয়টি নিয়ে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে প্রচারের কৌশল নিয়েছে বিজেপি। কৌশল হিসাবে অধীরের পরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর ক্ষমা প্রার্থনা দাবি করে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতারা। যদিও দল ভাল করেই জানে, সনিয়ার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই।
পাল্টা পদক্ষেপে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে গতকাল বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির দুর্ব্যবহার ঘিরে আক্রমণ শানানোর কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। আজ রাতে স্পিকার ওম বিড়লার কাছে তা নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায়, তিনি মুখ ফস্কে কিছু বলে ফেলায় বিতর্কের সূত্রপাত হয়। কিন্তু এতে সনিয়া গান্ধীর কোনও ভূমিকা নেই। তা সত্ত্বেও স্মৃতি গতকাল সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। যা অনভিপ্রেত। একই সঙ্গে গতকাল স্মৃতি ইরানি দ্রৌপদী মুর্মুকে শ্রীমতী বা রাষ্ট্রপতি হিসাবে সম্ভাষণ না করায় তাঁর বক্তব্য লোকসভার কার্য বিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি তুলেছেন অধীর। আজ সংসদের গান্ধী মূর্তির সামনে স্মৃতির দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে ধর্না দেন কংগ্রেস সাংসদেরা। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জ্জুন খড়্গে ‘পয়েন্ট অব অর্ডার’ তুলে বলার চেষ্টা করেন, সনিয়া গান্ধী রাজ্যসভার সাংসদ নন, তা সত্ত্বেও তাঁর নাম করে রাজ্যসভায় সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যা তিনি করতে পারেন না। যদিও তাঁকে বলার সুযোগ দেননি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। আজও সংসদে এসেছিলেন সনিয়া। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় দলের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দিশানির্দেশ দেন তিনি।
এ দিকে, রাষ্ট্রপত্নী বিতর্কে অধীরের বিরুদ্ধে দলীয় নেতৃত্ব কোনও পদক্ষেপ করার কথা না ভাবলেও, ইতিমধ্যেই দলের মধ্যে সরব হয়েছেন অধীর বিরোধী গোষ্ঠী। কংগ্রেসের লোকসভা সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘কোনও মহিলা বা পুরুষ, তিনি যে সাংবিধানিক পদেই থাকুন না কেন সেই পদকে সম্মান করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy