দিল্লির বিজেপি দফতরের সামনে অমিত শাহ ও যোগী আদিত্যনাথ। মঙ্গলবার। পিটিআই
আজ দিনভর বৈঠক করে উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলল বিজেপি নেতৃত্ব। আগামী শুক্রবার মকর সংক্রান্তি। তার পরেই ওই তালিকা প্রকাশিত হতে চলেছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
উত্তরপ্রদেশে প্রথম পর্বে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, রোহিলখণ্ড, ব্রজ এবং প্রধান এলাকাগুলিতে ভোট হতে চলেছে। গতবার এই এলাকাগুলিতে বিজেপির সামনে দাঁড়াতে পারেননি বিরোধীরা। কিন্তু এ বার কেন্দ্রের কৃষি আইনের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষক সমাজ। পঞ্জাবে তো বটেই উত্তরপ্রদেশে ওই আইনের ফলে দল জমি হারাচ্ছে বুঝতে পেরে ভোটের ঠিক আগে ওই আইন প্রত্যাহার করে নেয় মোদী সরকার। তবে তাতে তাঁদের বিরাট সুবিধা হয়েছে বলে মনে করছেন না উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতারাই। ২০১৪ সাল থেকে শক্ত খুঁটির মতো থাকা জাঠ ভোট যে সরে গিয়েছে, তা বুঝতে পারছে দল। তাই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে মেপে পা ফেলার পক্ষপাতী তারা। ব্রজ এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখা ও হিন্দু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্যে দলের একাংশ যোগী আদিত্যনাথকে গোরক্ষপুরের পরিবর্তে মথুরা থেকে প্রার্থী করার পক্ষপাতী। শেষ পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না, তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরেই নির্ভর করছে।
প্রথম পর্বে ভোট রয়েছে এটাওয়া, মৈনপুরীর মতো যাদব প্রধান এলাকাগুলিতেও। ওই এলাকাগুলি সমাজবাদী পার্টির শক্ত গড় হিসাবে পরিচিত। ফলে ওই এলাকাগুলিতে আসন জিততে হলে দলিত ভোট যে পেতে হবে তা বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপির পক্ষে সুবিধার কথা, দলিত নেত্রী মায়াবতীর দল বিএসপি এখনও কারও সঙ্গে জোটে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেনি। আর বিরোধীদের ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য বলে মনে করেন অন্য বিরোধীরা। তবে যোগী আদিত্যনাথের পাঁচ বছরের শাসনে দলিত ও পিছিয়ে থাকা সমাজ যে ক্ষুব্ধ তা বুঝতে পারছেন দলীয় নেতৃত্ব।
আজ বিজেপির চাপ বাড়িয়ে দল ও মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ওবিসি নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য্য। তাঁর সঙ্গেই দল ছেড়েছেন আরও চার বিজেপি বিধায়ক। ভোটের ঠিক আগে এ ভাবে দল ত্যাগ যে বড় ধাক্কা তা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপি নেতারাই। রাজ্য নেতৃত্বের আশঙ্কা, আগামী দিনে আরও ভাঙন দেখা যেতে পারে উত্তরপ্রদেশ বিজেপিতে।
এই আবহে গত কাল লখনউয়ে প্রথম পর্বের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চূড়ান্ত করেন যোগী আদিত্যনাথ, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি রাজ্য সভাপতি স্বতন্ত্র দেও সিংহরা। সূত্রের মতে, গত বারের বিজয়ী বিধায়কেরা এ বার টিকিট পাবেন কি না, তা চূড়ান্ত করার প্রশ্নে মূলত দুটি বিষয় খতিয়ে দেখেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। প্রথমত, পাঁচ বছরে ওই বিধায়ক নিজের এলাকায় কেমন কাজ করেছেন। দ্বিতীয়ত-ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে কোনও বিরোধী হাওয়া রয়েছে কি না। সূত্রের মতে, গত কাল যে তালিকা প্রস্তুত হয়েছে তাতে বর্তমান বিধায়কদের একাংশের বিরুদ্ধে হাওয়া রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায় থেকে রিপোর্ট জমা পড়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। সূত্রের মতে, আজ রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো হয়। যার ফলে একাধিক জয়ী বিজেপি বিধায়কের টিকিট না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আজ প্রথম পর্বের তালিকা চূড়ান্ত করতে সকালেই দিল্লি চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, দুই উপমুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি স্বতন্ত্র দেও সিংহ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
রাজ্যের প্রায় কুড়ি শতাংশ জনসংখ্যা মুসলিম হলেও গতবার ৪০৩টি আসনের একটিতেও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। এ বারে বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার প্রধান জামাল সিদ্দিকি অন্তত কুড়িটি আসন সংখ্যালঘু প্রার্থীদের দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। সিদ্দিকির ব্যাখ্যা, রাজ্যের অন্তত ১০০টি আসনে সংখ্যালঘু সমাজের ৩০ শতাংশ ভোট রয়েছে। পাঁচ বছর আগে এমন একাধিক আসনে সংখ্যালঘু সমাজের আশাতীত সমর্থন পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। জেতার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। তাই সংখ্যালঘু ভোটে জেতার সুযোগ রয়েছে এমন অন্তত কুড়িটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হোক।
কিন্তু যেখানে খোদ যোগী আদিত্যনাথ আসন্ন নির্বাচনকে আশি শতাংশ বনাম কুড়ি শতাংশের লড়াই হিসাবে তুলে ধরে মেরুকরণের রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন, সেখানে কুড়িটি আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ার ঝুঁকি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেন কি না, তাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy