(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং যোগী আদিত্যনাথ (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, রামমন্দির তো হল। যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য থাকবে না, সেই ‘রামরাজ্য’ কবে হবে?
আজ অযোধ্যার মাটি থেকে নরেন্দ্র মোদী-যোগী আদিত্যনাথ স্পষ্ট করে দিলেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে রামমন্দিরে ঘিরে আবেগ-উন্মাদনার পাশাপাশিই গত দশ বছরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগের মোকাবিলায় মোদী সরকারের নানা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের পুঁজি করে ভোটের ময়দানে নামতে চলেছে বিজেপি।
সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, রামমন্দির ঘিরে আবেগ তৈরির চেষ্টা হলেও বাস্তবে মোদী জমানায় অর্থনৈতিক অসাম্য বেড়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২১-এর মধ্যে দেশের ধনীতম ২০ শতাংশের আয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। সামান্য হলেও উচ্চ-মধ্যবিত্তের আয় বেড়েছে। মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরিব, যাঁরা জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ, তাঁদের আয় কমেছে। বেড়েছে বেকারত্ব। চাকরির অভাব দেশের সবথেকে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির ফলে গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। নোট বাতিলের পর থেকেই শিল্পে উৎপাদন মার খেয়েছে। ফলে কর্মসংস্থানের হারও ৪২ শতাংশের ঘর থেকে নেমে এসেছে ৩৬-৩৭ শতাংশের ঘরে। মহিলাদের কর্মসংস্থানের হার কমেছে। শহরের মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে বিজেপি-আরএসএসের বিভাজন নীতির ফলে সমাজে ভেদাভেদ তৈরি হয়েছে বলেও বিরোধীদের অভিযোগ। এই অভিযোগকে সামনে রেখেই রাহুল গান্ধী প্রথমে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করেছিলেন। এ বার তিনি ন্যায় যাত্রায় আর্থিক, সামাজিক ন্যায়ের কথা বলছেন।
আজ অযোধ্যা থেকে মোদী-যোগীর বক্তৃতায় ইঙ্গিত মিলেছে, তাঁরা লোকসভা ভোটে একদিকে রামমন্দির ঘিরে উন্মাদনা কাজে লাগিয়ে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। শুধু হিন্দুত্বে চিঁড়ে ভিজতে না-ও পারে। তাই অন্য দিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে মোদী সরকারের নানা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে গরিব-অনগ্রসর, সমাজের দুর্বল, বঞ্চিত মানুষের ভোট টানার চেষ্টা হবে।
তিন দিন আগেই মোদী মহারাষ্ট্রে গিয়ে বলেছিলেন, তাঁর সরকার ‘রামরাজ্য’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস ও সবকা বিশ্বাস’-এর নীতি নিয়ে কাজ করছে। রাজস্ব থেকে আয় খরচ হচ্ছে গরিব, অনগ্রসরদের কল্যাণে। আজ মোদী যখন অযোধ্যায় রামরাজ্যের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তখন যোগী বলেছেন, এই রামরাজ্যে কোনও ভেদাভেদ থাকবে না। যোগী বলেছেন, রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ দিন রামরাজ্যের সূচনার ঘোষণা হল। অযোধ্যার উন্নয়ন ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারেরই সুফল। আয়ুষ্মান ভারত থেকে স্বচ্ছ ভারতের মতো প্রকল্পের নামও সুকৌশলে বলে দিয়েছেন তিনি।
কংগ্রেস নেতা শশী তারুর অভিযোগ তুলেছেন, ২০১৪-য় মোদী উন্নয়নের ধুয়ো তুলে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০১৯-এ জাতীয় নিরাপত্তার ধুয়ো তুলেছিলেন। নোট বাতিলের ধাক্কায় উন্নয়ন এবং চিনের জমি দখলের নিরিখে জাতীয় নিরাপত্তা— দুই মাপকাঠিতেই মোদী সরকার ব্যর্থ। সেই কারণেই বিজেপি এখন রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে মোদীকে ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী প্রিয়ঙ্ক খড়্গের অভিযোগ, ‘‘মানুষের বেকারত্ব থেকে মুক্তি বা আর্থিক সমৃদ্ধির আশা মেটেনি। রামমন্দির হয়েছে ভাল কথা। কিন্তু রামরাজ্য কবে হবে, যেখানে গান্ধীজির কথা মতো আর্থিক, সামাজিক অসাম্য থাকবে না?”
বিজেপি নেতাদের পাল্টা জবাব, রামরাজ্যের মূল কথা হল, সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে রক্ষা করা। মোদী সরকার বিনামূল্যে রেশন দিয়ে সমাজের দুর্বলতম শ্রেণিকেই রক্ষা করছে। উজ্জ্বলা যোজনা থেকে আবাস যোজনা, স্বচ্ছ ভারতে শৌচালয় থেকে ঘরে ঘরে নল বাহিত পানীয় জলের প্রকল্প— কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। সংখ্যালঘু থেকে দলিত, আদিবাসী, সবাই সেই সুবিধা পাচ্ছেন। বরঞ্চ প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী বা সমাজের শেষ সারিতে থাকা প্রতিটি মানুষের কাছে যাতে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছয়, তার জন্যই মোদী সরকার ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প অভিযান’ কর্মসূচি শুরু করেছে। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যে ১০ কোটি বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ, ১০ হাজার জনঔষধি কেন্দ্র, ১১ কোটি বাড়িতে নলবাহিত জল, ২২০ কোটি কোভিড টিকা নিখরচায় এবং চার কোটি পরিবারকে আবাস যোজনায় বাড়ি দেওয়ার পরেই রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল। যোগীর বক্তব্য, ‘‘মোদী সরকারের এই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পই রামরাজ্যের মূল মন্ত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy