কৈলাস বিজয়বর্গীয়। —ফাইল চিত্র।
‘ইয়ে বন্ধন তো প্যার কা বন্ধন হ্যায়। ...।’’
ভাষণের মঞ্চ হোক কিংবা পদযাত্রা—সুযোগ পেলেই ‘করণ-অর্জুন’ ছবির গানের ওই কলি গেয়ে উঠছেন এক সময়ে দলে বাংলার কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং দু’শো আসনে জেতার দাবি করা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ছোটবেলায় মঞ্চে গান গাইতেন। মূলত ভক্তিমূলক গান। সেই গানের হাত ধরেই কার্যত রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ। আপাতত সেই গানের স্মৃতি উস্কে দিয়েই বিধানসভা নির্বাচনে নিজের কেল্লা বাঁচাতে ব্যস্ত বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। যিনি ইন্দোরের প্রাক্তন মেয়রও বটে।
কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ব্যর্থ তিনি। দল দু’শো কেন, একশোর ঘরও পার করতে পারেনি। উপরন্তু টিকিট বণ্টন নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পৌঁছয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই দলে কোণঠাসা হতে শুরু করেন কৈলাস।
আর এ বার ইন্দোর (১) কেন্দ্র থেকে নাম ঘোষণা হতে কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন কৈলাস— এই বয়সে নতুন করে বিধানসভার জন্য লড়তে হবে শুনে। অন্য দিকে ছেলে আকাশ ইন্দোর (৩) কেন্দ্রে গত বারের জয়ী প্রার্থী হলেও, টিকিট কেটে দেয় দল। কৈলাস চেয়েছিলেন, তাঁর পরিবর্তে ছেলেকে টিকিট দিক দল। কিন্তু দল জানিয়ে দেয়, যে বিধায়ক (আকাশ) ব্যাট দিয়ে সরকারি অফিসারকে মারধর করে গ্রেফতার হন, তাঁকে কোনও ভাবেই টিকিট দেবে না দল। কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের অনমনীয় মনোভাব দেখেই কৈলাসকে নামতে হয়েছে নির্বাচনী যুদ্ধে।
ইন্দোরের বড়ে গণপতি চকের সামনে কৈলাসের কার্যালয়। উল্টো দিকেই ধর্মশালা। তার চত্বরে মুহুর্মুহু সমর্থক বোঝাই গাড়ি এসে থামছে। খানিক বিশ্রাম ও পেটপুজো করে ফের প্রচারে বেরিয়ে যাচ্ছেন সমর্থকেরা। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, বিহার থেকে কর্মীরা এসেছেন কেন্দ্রীয় নেতার বিধানসভা কেন্দ্রে। যে এলাকায় লড়াই জোরদার, সেখানে প্রচারের ঝড় তুলছেন ভিন্ রাজ্যের কর্মীরা। গোটা ব্যবস্থা তেল-খাওয়া মেশিনের মতো কাজ করলেও, কৈলাস যে জিতবেন এমন কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না তাঁর অতি বড় সমর্থকও।
দলীয় কার্যালয়ে বড় ম্যারাপ বাঁধা। পদস্থ কর্মীরা সেখানে বসে মেপে নিচ্ছেন প্রচারের হাওয়ার গতি। নীচে গদিতে ভোটের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন বিজেপি কর্মী রাহুল শর্মা। গতে বাঁধা সুরে কৈলাস জিতছেন বলে শুরু করলেন তিনি। কিন্তু কথাবার্তা এগোতেই খোলস ছেড়ে বেরোলেন। বললেন, ‘‘এ বারের মতো শক্ত লড়াইয়ে কখনও পড়েনি বিজয়বর্গীয় পরিবার। এমনিতেই মধ্যপ্রদেশে বিজেপির পক্ষে হাওয়া নেই। কংগ্রেস এগিয়ে। উপরন্তু এটা কংগ্রেসের জেতা আসন। ছেলে বদনামের কারণে টিকিট পায়নি। বিজয়বর্গীয় পরিবারের সঙ্গে অপরাধীদের যোগসাজশের অভিযোগও রয়েছে। কৈলাস ভাল করেই বুঝতে পারছেন, এ লড়াই জিততে না পারলে মধ্যপ্রদেশ কেন, ইন্দোরের রাজনীতিতে তাঁর পরিবারের অস্তিত্ব থাকবে না।’’
শোনা যাচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী সার্বিক ভাবে ক্ষুব্ধ কৈলাসের উপর। তাঁরই নির্দেশে কৈলাসকে প্রার্থীকরা হয়েছে। কৈলাস ঘনিষ্ঠশিবিরের দাবি, পরিকল্পিত ভাবে বিজেপি থেকে কৈলাসকে মুছে ফেলতেই তাঁকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইন্দোর শহরের বাকি পাঁচটি আসনে বিজেপির জয় অনেকটাই নিশ্চিত।
একে প্রস্তুতিহীন। তায় প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী প্রার্থী সঞ্জয় শুক্ল। এলাকায় উপনয়ন হোক বা বিয়ে, অন্নপ্রাশন হোক বা মৃত্যু, কিংবা পুজার অনুষ্ঠান—বিনা আমন্ত্রণে পৌঁছে যেতে দ্বিধা করেন না সঞ্জয়। শিক্ষিত বিনয়ী সঞ্জয়কে তাই পছন্দ করেন এলাকার দল নির্বিশেষ মানুষ। এ ছাড়া কৈলাসের এলাকায় রয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত বম্বে গলি এলাকা। অটো চালক আনিস বলেন, ‘‘মুসলিম সমাজের ভোট বরাবর কংগ্রেস পেয়ে এসেছে। এ বারও অন্যথা হবে না।’’
কৈলাসের রক্তচাপ বাড়িয়ে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা অভয় জৈনও। অভয় সঙ্ঘের পুরনো নেতা। অন্য দিকে, সঙ্ঘের সিঁড়ি বেয়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে এলেও, বিভিন্ন কারণে সঙ্ঘের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে কৈলাসের। পরিস্থিতি এমন চরমে যে কৈলাসের পাশ থেকে সরে গিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার। অভয়ের দাবি, ‘‘সঙ্ঘের সমর্থন আমার পিছনেই রয়েছে।’’ যার অর্থ গেরুয়া শিবিরের ভোট ভাগ নিশ্চিত। আর যত তা হবে, ততই রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কৈলাসের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy