শ্রীনগরে পৌঁছলেন মনোজ সিংহ। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হল বিজেপি নেতা মনোজ সিংহকে। প্রথম নরেন্দ্র মোদী সরকারের রেল প্রতিমন্ত্রী মনোজ জাতীয় রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। শাসক শিবিরের কথায়, উপত্যকায় রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রশ্নে গত এক বছরে যে আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা দূর করতেই মনোজ সিংহের মতো সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ওই পদে আনা হয়েছে। শাসক শিবিরের মতে সাম্প্রতিক সময়ে গিরিশচন্দ্র মুর্মু একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাই তাঁকে কাশ্মীর থেকে সরানো হয়েছে। রাতে মুর্মুকে সিএজি প্রধান করার কথা ঘোষণা করা হয়। বিরোধীদের মতে, সিএজি থেকে যাতে সরকারের বিরোধিতা করে কেউ মুখ না খোলেন তাই মুর্মুর মতো আস্থাভাজনকে বসানো হচ্ছে।
গত কাল জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের এক বছর পূর্ণ হয়। রামমন্দির নির্মাণ প্রশ্নে গোটা দেশের মনোযোগ যখন অযোধ্যায়, এমন সময়ে গত কাল সন্ধ্যায় নিজের ইস্তফা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন গুজরাত ক্যাডারের আমলা গিরিশচন্দ্র মূর্মু। আজ সকাল সাতটার সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবন বিবৃতি দিয়ে জানায়, ওই ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। একইসঙ্গে সকালে কার্যত অনেককেই অবাক করে দিয়ে মনোজ সিংহকে পরবর্তী উপরাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি।
উত্তরপ্রদেশের গাজ়িপুরের তিন বারের সাংসদ মনোজ সঙ্ঘ কর্মী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর পূর্বপরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, এমনকি ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে জেতার পরে তাঁকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই মতো শপথের প্রস্তুতি নিতে বলা হয় তাঁকে। কিন্তু শেষ মহূর্তে যোগী আদিত্যনাথের সক্রিয়তা ও সঙ্ঘ পরিবারের চাপে শিকে ছেঁড়েনি মনোজের কপালে। মনোজ হতাশ হলেও দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় জাতীয় রাজনীতি থেকে কিছু দূরে গিয়েছিলেন মনোজ। আজ ঘোষণার পরে বিকেলে শ্রীনগরে উড়ে যান তিনি। আগামিকাল সম্ভবত শপথ নেবেন।
আমলা মহলে মুর্মুর পরিচিতিও মোদীর আস্থাভাজন হিসেবে। প্রথমে গুজরাত ও পরে দিল্লিতে মোদী সরকারে অর্থ মন্ত্রকে সচিব পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন মুর্মুও। অবসরের পরে জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম উপরাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হয় তাঁকে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে, কার্যত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে কাশ্মীরে ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক শুরু করার কথা বলে বিতর্ক তৈরি করেন। পরে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন মুর্মু। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা আসনের পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুর্মু জানান, পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হলেই জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হবে। মুর্মুর বক্তব্যের সমালোচনা করে দিল্লি থেকে নির্বাচন কমিশন জানায়, কবে ভোট হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের আছে। উপরাজ্যপালের তা নিয়ে বলার কোনও এক্তিয়ার নেই।
আজ বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন বিদায়ী সিএজি প্রধান রাজীব মহর্ষি। তার পরেই রাতে মুর্মুকে ওই পদে নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, কাশ্মীরের অধিকাংশ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা গৃহবন্দি এক বছর ধরে। ফলে রাজনৈতিক আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে কী করে! আসলে আস্থাভাজনকে সিএজি প্রধান করার জন্যই কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ানোর নাটক করা হল। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির কথায়, ‘‘দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের পতনের পিছনে সিএজি-র চক্রান্ত ছিল কি না তা ভবিষ্যত বলবে। সেই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তাই বর্তমান সিএজি প্রধান রাজেশ মহর্ষির ইস্তাফার পরে মুর্মুকে বসিয়ে বিরোধিতার সব দিক বন্ধ রাখতে চাইছে মোদী সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy