E-Paper

বসুন্ধরার জমি কাড়তে দিয়া বাজি মোদী-শাহের

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের জাতীয় রাজনীতিতে রেখাপাত করার অনেক আগে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর ঘনিষ্ঠ বসুন্ধরা।

Vasundhara Raje

রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। —ফাইল চিত্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০০
Share
Save

এক জন রাজ পরিবারের পুত্রবধূ। আর এক জন রাজ পরিবারের কন্যা। এক জন রাজনীতিতে পোড়খাওয়া, দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী। অন্য জন সদ্য সাংসদ হয়েছেন। তবু মরু রাজ্যে দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী তথা ঢোলপুর রাজ পরিবারের পুত্রবধূ বসুন্ধরা রাজেকে গুরুত্বহীন করে দিতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা বাজি ধরেছেন জয়পুরের রাজকন্যা দিয়া কুমারীর উপরে। পারিবারিক সূত্রে যিনি রাজমাতা গায়ত্রী দেবীর নাতনি। মোদী-শাহদের লক্ষ্য হল, দিয়াকেই রাজস্থানের রাজ ঘরানার একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে আগামী দিনে তুলে ধরে বসন্ধুরাকে রাজস্থানের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া।

রাজাসমন্দ কেন্দ্রের সাংসদ দিয়া কুমারীকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জয়পুরের বিদ্যানগর আসন থেকে টিকিট দিয়েছে দল। ফলে টিকিট কাটা গিয়েছে পাঁচ বারের বিধায়ক নরপত সিংহ রাজভির। যিনি একদিকে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ভৈরো সিংহ শেখাওয়াতের জামাই ও অন্য দিকে রাজ্য রাজনীতিতে বসুন্ধরা রাজে ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। স্বভাবতই নিজের জেতা কেন্দ্র থেকে টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নরপত। তাঁর টিকিট না পাওয়াকে ভৈরোঁ সিংহ শেখাওয়াতের ঐতিহ্যকে অপমান করা হিসেবে তুলে ধরে নরপত প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যে পরিবার এক সময়ে মুঘলদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে রাণা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, তাঁদের এত গুরুত্ব দেওয়ার কী রয়েছে?’’ তৎকালীন মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জয়পুরের রাজা মান সিংহের রাণা প্রতাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার ঘটনা বিজেপি তথা দক্ষিণপন্থীদের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তিকর ইতিহাস। এ বার তা নিয়ে ভোটের আগে বিজেপি শিবিরের মধ্যে প্রশ্ন ওঠায় অস্বস্তিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

রাজনীতির অনেকের মতে, এক বারের বিধায়ক ও এক বারের সাংসদ দিয়াকে সাম্প্রতিক সময়ে যে ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গুরুত্ব দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন, তা তাঁকে আগামী দিনে বড় মাপের দায়িত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত। গোটা রাজ্য ঘুরে জয়পুরে এসে যে পরিবর্তন যাত্রা শেষ হয়, সেই যাত্রা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হওয়া অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দিয়া ও তাঁর দলকে। কার্যত উপেক্ষিত রাখা হয় বসুন্ধরাকে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি গোড়া থেকেই বসুন্ধরার প্রতি অসূয়া রয়েছে আরএসএসের একাংশের। তাঁরাও চান, রাজস্থানের রাজনীতিতে বসুন্ধরাকে নিষ্প্রভ করে দিয়ে পরিবর্তে অন্য কোনও রাজঘরানার প্রতিনিধিকে তুলে ধরা। যাতে রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত গুরুত্বহীন করে দেওয়া
যায় বসুন্ধরাকে।

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের জাতীয় রাজনীতিতে রেখাপাত করার অনেক আগে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর ঘনিষ্ঠ বসুন্ধরা। পরবর্তী সময়ে মোদী-শাহ দলের কর্তৃত্ব হাতে তুলেও নিলেও কোনও দিন ওই জুটির সামনে মাথা নত করেননি সিন্ধিয়া পরিবারের মেয়ে বসুন্ধরা। রাজনীতির অনেকের মতে, গোড়া থেকেই বসুন্ধরাকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল মোদী-শাহ জুটি। যাতে মদত দেন রাজ্যের আরএসএস নেতৃত্বের একাংশ। অবশেষে রাজ পরিবারের সদস্যকে মাৎ করতে আর এক রাজপরিবারের সদস্যকেই বোড়ে হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা নেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ। রাজে-ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, সেই কারণেই দিয়াকে ধারাবাহিক ভাবে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়। আর এ যাত্রায় রাজে-ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের টিকিট কেটে সেই আসনে দিয়াকে টিকিট দিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে মোদী-শাহের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

অথচ, রাজ্য রাজনীতিতে দিয়াকে তুলে এনেছিলেন বসুন্ধরাই। ২০১৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মোদীর জনসভায় প্রথম দিয়াকে রাজনীতিতে নামানোর কথা ঘোষণা করেন বসুন্ধরা। টিকিটও পান দিয়া। জিতেও যান। বিজেপি সে যাত্রায় ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ২০১৬ সালে জয়পুর রাজার একটি হোটেল অবৈধ ভাবে দখলের বিরুদ্ধে রাজে সরকার পদক্ষেপ করলে আন্দোলনে নামেন দিয়া ও তাঁর মা পদ্মিনী দেবী। যাকে সমর্থন করে করনি সেনা, আরএসএস ও বিজেপির একাংশ। সেই শুরু। তার পর থেকে ক্রমশ দূরত্ব বেড়েছে দুই রাজপরিবারের।

এ কথা স্পষ্ট, অভিজ্ঞতার নিক্তিতে দিয়ার তুলনায় কয়েক মাইল এগিয়ে বসুন্ধরা। তাঁর পিছনে রয়েছে দলের একটি বড় অংশের সমর্থন। অন্য দিকে দিয়া ২০১৩ সালে বিধানসভা ভোটে লড়লেও পাঁচ বছর আগে দলের পরিস্থিতি খারাপ দেখে লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেন। এ যাত্রায় তাই বিদ্যাধর নগরের মতো নিরাপদ আসন থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে দিয়াকে। কিন্তু আগামী দিনে বসুন্ধরার উত্তরসূরি হওয়া সম্ভব দিয়ার? সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vasundhara Raje BJP Rajasthan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।