প্রতীকী ছবি।
চোদ্দো একটি সংখ্যার নাম!
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগেই তার নাগাল পাওয়া গেলে অতি উত্তম। তা একান্তই না-হলে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি নেতৃত্ব ভোটের পরেই ওই সংখ্যার নাগাল পেতে উৎসাহী। সূত্রের খবর, লোকসভায় তৃণমূলের চোদ্দো জন সাংসদকে গেরুয়া শিবিরে টানার জন্য সক্রিয়তা শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপিতে।
কেন চোদ্দো? সুনীল মণ্ডল দল ছাড়ার পরে লোকসভায় তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা এখন একুশ। দলত্যাগ বিরোধী আইনের কোপ থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সংসদীয় দলের দুই তৃতীয়াংশের একত্রে দল ছাড়া। তা হলে সরাসরি তাদের তৃণমূল থেকে বিজেপিতে সাংসদ হিসেবে যোগদান করানো সম্ভব। একুশের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ চোদ্দো।
পশ্চিমবঙ্গে ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক বাড়ছে। গুঞ্জন, বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন বেশ কিছু তৃণমূল সাংসদও। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা ভোটের আগে নয়, পরে জল মেপে পদ্মশিবিরে যোগদানে সম্মতি
জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রেও বিজেপি নেতৃত্বের লাভ বই লোকসান নেই। জাতীয় রাজনীতিতে সংখ্যার বিচারে লোকসভায় তৃণমূল তৃতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল। তাদের ছেঁটে দিতে পারলে শুধু রাজ্যে প্রভাব বাড়ানোর প্রশ্নে নয়, সংসদীয় রাজনীতিতে যেটুকু যা বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল, সেটুকুও আর থাকবে না নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সামনে।
এই একুশ জন তৃণমূল সাংসদের মধ্যে কাদের জন্য টোপ ফেলা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে, তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন। বিজেপি সূত্রের খবর, কিছু দিন আগেই তৃণমূলের শতাব্দী রায়কে পাওয়ার বিষয়টি প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মত পরিবর্তন করেন তিনি। সূত্রের খবর, তৃণমূলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে শতাব্দীর সামনে বিজেপির ‘অফার’ আরও চওড়া হয়েছে। তবে এই প্রসঙ্গে শতাব্দী মুখ খুলতে চাননি। শুধু বলেছেন, “আমি তৃণমূলেই আছি। দিদির সঙ্গে আছি।’’
বিজেপি সূত্রের দাবি, কারা কারা আসতে পারেন, তা নিয়ে প্রাথমিক একটা পর্যালোচনা তারা করেছে। তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট নেতা-সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারী কবে বিজেপিতে যোগ দেবেন, এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও শিশিরবাবু বা দিব্যেন্দুর তরফে এমন কোনও প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, যাতে মনে হচ্ছে, তাঁরা এখনই বিজেপিতে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের দুই সাংসদ মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত বাকি তৃণমূল সাংসদদের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে আরও বেশি করে ব্যবহার করা হতে পারে। তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। অপরূপা অবশ্য সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমি দিদির ছোট বোন। কোনও সমস্যা হলে তাঁকেই সরাসরি বলব। নারদ নিয়ে ভয় পাই না। রাজনীতিতে যখন এসেছি, তখন ভালর সঙ্গে খারাপটাও ভেবে এসেছি। তার জন্য বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করব কেন?”
সূত্রের মতে, তৃণমূলের এক প্রাক্তন ফুটবলার সাংসদ, প্রাক্তন এক বা একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ নতুন সাংসদদের জন্যও ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের এই একুশ জনের মধ্যে এমনও অনেকে রয়েছেন, যাঁদের দলত্যাগের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিন মুসলিম সাংসদ-সহ কিছু প্রবীণ ও নবীন নেতা-নেত্রী। সূত্রের মতে, বিজেপির তরফ থেকে কোনও ‘ফিলার’ যায়নি সৌগত রায়, মালা রায়ের মতো সাংসদের কাছে। গত কাল এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এক সাক্ষাৎকারে সৌগত রায় বলেন, “আমি মরে যাব, কিন্তু বিজেপিতে যাব না। আমি কংগ্রেস ঘরানার লোক। ধর্মনিরপেক্ষ, উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ফলে আমার কাছে বিজেপি আরএসএস-এর হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়।’’ আর এক সাংসদ মালা রায় বলছেন, “আমরা সবাই দিদির নেতৃত্বে রয়েছি।’’ কিন্তু এই দলবদলের হাওয়ায় তো সংসদের দুই কক্ষের দু’জন তৃণমূল সাংসদ দল ছেড়েছেন ইতিমধ্যেই? মালার উত্তর, “যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের কথা আলাদা। আমার বিশ্বাস, যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই একজোট হয়েই থাকবেন।’’
অভিনয় জগত থেকে আসা তিন তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জহান এবং দেব অধিকারীর পদ্মবনে পা রাখা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিজেপির এক নেতার দাবি, দেব অধিকারীর নাকি যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর। যদিও দেব এ দিন পরিস্কার বলেছেন, ‘‘আমি যদি দল বদল করি, সেটা দেখতেই পাবেন। তবে জীবনটাকে আমি সাধাসিধে রাখতেই পছন্দ করি। আমার কারো কাজ পছন্দ না হলে তা নিয়ে সব সময় বলেছি। তার মানে ক্ষোভ প্রকাশ নয়। আমি নিজের কথা বলেছি। নিজের পছন্দ-অপছন্দ তুলে ধরেছি।’’ বিজেপি-যোগের জল্পনা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রতিবার প্রার্থী হয়ে আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থীর স্ত্রী-র হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসা করেছি। তার মানে কি আমি সেই দলকে সমর্থন করলাম? আমি এ রকম। মানুষের জন্য রাজনীতিতে এসেছি। তাদের পাশে সব সময় থাকতে চাই। মানুষের হয়ে কাজ করতে চেয়েছি সব সময়। তাই আমার কাজে বাধা এলে তা নিয়ে বলতেই পারি।’’ টলিউডের একাংশের যোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখন সেলিব্রিটি থেকে রাজনৈতিক লোকেদের দলবদল একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ মিমিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মোবাইলে একটি ‘স্মাইলি’ পাঠিয়ে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জহান জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই আছেন। সম্প্রতি টলিউড অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এর পরেই নুসরতকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। তবে শুক্রবার বসিরহাট কলেজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নুসরত বলেন, “টলিউডের যারা যাচ্ছে যাক। আমরা নিজেদের কাজ করছি। যাঁরা দিদিকে ভালবাসেন, তাঁরা চিরকাল দিদির পাশে থাকবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy