প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
বুথ ফেরত সমীক্ষা যে ভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে, তাতে হিন্দি বলয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তার মেঘ কেটেছে বিজেপি সদর দফতরে। দলীয় সূত্রের খবর, ফল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য নির্দল এবং ছোট দলগুলির জয়ীদের কাছে টানতে এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনের ঠিক পরেই দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সে সময়ে বিজেপি নেতারাও ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছিলেন, এ যাত্রায় দলের পক্ষে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা কার্যত অসম্ভব। কংগ্রেসের ওই রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরা সময়ের অপেক্ষা।
এই আবহে মধ্যপ্রদেশ-সহ গোটা দেশে দলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসে দল। শীর্ষ সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে দলের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের মতে, মোদী জানান, মধ্যপ্রদেশে দলের যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, সেই চিত্র যদি গোটা দেশের হয়, তা হলে দলের জন্য সামনে সমস্যা অপেক্ষা করে রয়েছে। যে হেতু লোকসভা নির্বাচন হতে আর বেশি সময় নেই, তাই অবিলম্বে দলকে মানুষের কাছে পৌঁছতে ঝাঁপানোর নির্দেশ দেন মোদী। বিশেষ করে মানুষ কী চাইছেন, তা যাতে শেষ বাজেটে প্রতিফলিত হয়, সে কারণে আরও বেশি করে আমজনতার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উপরে জোর দেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।
ভোটের আগে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষাতেও পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র রাজস্থানে জয়ের আশা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত কাল ভোট ফেরত সমীক্ষা যে ভবিষ্যৎবাণী করেছে, তা বাস্তবে প্রতিফলিত হলে বিজেপির পক্ষে শুভ সঙ্কেত বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের আগে গো-বলয়ের দুই বা দুইয়ের বেশি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার অর্থ হল, দলের জনভিত্তি গো-বলয়ে অন্তত অটুট আছে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা।
দলের এক নেতার কথায়, ‘‘বুথ ফেরত সমীক্ষা অনেকটাই ভরসা জুগিয়েছে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল না এলে কোনও ভাবেই কিছু বলা যায় না। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, দল যে গো-বলয়ের তিন রাজ্যে লড়াইয়ে রয়েছে, তা বোঝা গিয়েছে।’’
তবে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে দলের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ, তা সতর্কবার্তা হিসাবেই দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্র বলছে, ফলাফল যাই হোক, চলতি মাস থেকেই রাজ্য, জেলা ও পঞ্চায়েত স্তরের বুথ পর্যায়ে পৌঁছে সংগঠনকে নতুন করে চাঙ্গা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। সূত্রের মতে, তৃণমূল স্তরে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দলের শীর্ষ পদাধিকারীদের আরও বেশি করে গ্রামীণ এলাকায় সফর ও সেখানে রাত কাটানো, স্থানীয়দের অভাব-অভিযোগ শোনা, মানুষ সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের পরিষেবা চাইছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করার উপরে জোর দিয়েছে দল।
বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও রাজস্থান— এই তিন রাজ্যেই কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সমানে সমানে টক্কর হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন বিদ্রোহী প্রার্থী ও নির্দল প্রার্থীদের কাছে টানতে উদ্যোগী হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ দুপুরেই মধ্যপ্রদেশ উড়ে যান বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে। সূত্রের মতে,দল সংখ্যাগরিষ্ঠাতার কাছাকাছিপৌঁছে গেলে কী ভাবে যোগ-বিয়োগের অঙ্কে ক্ষমতা দখল করা যায়, তা নিয়ে নড্ডা বৈঠক করেন রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে। অন্য দিকে রাজস্থানের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন খোদ অমিত শাহ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই রাজ্যে বিএসপি, ভারতীয় আদিবাসী পার্টি, আরএলপি, নির্দল ও বাম দলগুলি মিলে ১৫-১৭টি আসন জিততে চলেছে। ফলে রাজস্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছুঁতে বিজেপিকে বাইরে থেকে সমর্থন নিতে হতে পারে। তাই ফলাফল স্পষ্ট হতেই নির্দল-সহ অন্য ছোট দলের জয়ী প্রার্থীদের যাতে নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, সে জন্য এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
সূত্রের মতে, গোটা বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি প্রহ্লাদ জোশী। যিনি নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ রাখছেন অমিত শাহের সঙ্গে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, পাঁচ বছর আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছিল বিজেপি। তা সত্ত্বেও রেকর্ড সংখ্যক আসন নিয়ে ২০১৯ সালে ক্ষমতায় ফেরে বিজেপি। এ যাত্রায় বিজেপি যদি দু’টি রাজ্যেও জিততে সক্ষম হয়, সে ক্ষেত্রে লোকসভার আগে বিজেপি যে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy