Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Madhya Pradesh Assembly Election 2023

‘মামা’ ছাড়া গতি নেই বিজেপির

গোড়া থেকেই বারংবার অপমান করা হয়েছে শিবরাজকে। উপর্যুপরি প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, ঠাঁই হয়নি শিবরাজ সিংহ চৌহানের।

Shivraj Singh Chouhan

শিবরাজ সিংহ চৌহান। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
বুধনি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২৬
Share: Save:

ভোট যত এগিয়ে আসছে তত হাসছেন বুধনির মানুষ। মধ্যপ্রদেশের চার বারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ এক সময়ে বুধনি থেকে টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গোড়ায় ব্রাত্য শিবরাজকে প্রচারের শেষ বেলায় যে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছে, তা দেখে বুধনির মানুষ প্রবল মজা পাচ্ছেন। ভাবখানা এমন, চার বারের মুখ্যমন্ত্রীকে যারা আটকাতে চেয়েছিলেন, তাঁদের আজ শিবরাজ (মামা) বিনা গতি নেই।

অথচ, গোড়া থেকেই বারংবার অপমান করা হয়েছে শিবরাজকে। উপর্যুপরি প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, ঠাঁই হয়নি শিবরাজ সিংহ চৌহানের। জনসভার মঞ্চে তাঁকে পাশে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তৃতা দিয়েছেন, নাম নেননি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজের। উপেক্ষার বার্তা ছিল স্পষ্ট। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখতে, প্রচারের শেষবেলায় সেই শিবরাজের উপরে ভরসা করতে বাধ্য হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

কারণ, শিবরাজকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে যে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপরে বাজি ধরেছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা, তাঁদের মধ্যে নরেন্দ্র সিংহ তোমর তাঁর পুত্রের ‘কাটমানি’ নেওয়ার ভিডিয়ো আসার পরে কার্যত বসে গিয়েছেন। আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকায় নিজের ঘর বাঁচাতে বেশি ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ইন্দোরে নিজের রাজ্যপাট ধরে রাখতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। আর এক সাংসদ ফগন সিংহ কুলস্থের জনভিত্তি নেই। ফলে ভাঙা কুলোর মতো শিবরাজকেই সামনে তুলে আনতে হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে।

যে নরেন্দ্র মোদী এক সময়ে মঞ্চে পাশে বসে থাকা শিবরাজের নাম নেওয়া এড়িয়ে গিয়েছেন, তিনি এখন শিবরাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রদেশে আজ বিজেপি যে লড়াই দেওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছেছে, তার পিছনেও রয়েছে শিবরাজ ঘোষিত লাডলি-বহেন যোজনা। পরিবারের মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়ার ওই প্রকল্পই গত এক মাসে কিছুটা হলেও হাওয়া ঘুরিয়েছে বিজেপির পক্ষে।

তবে এ কথা ঠিক, রাজ্য জুড়েই আমজনতার মধ্যে ‘মামা’র বিরুদ্ধে প্রবল অসন্তোষ রয়েছে। রয়েছে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া। রাজ্যের আমজনতা ‘মামা’র পরিবর্তে নতুন মুখ দেখতে আগ্রহী হওয়ায় পরিকল্পিত ভাবেই শিবরাজকে এক কোণে ঠেলে দিয়েছিলেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খাদের কিনারায় পৌঁছচ্ছে, আঁচ করেই পাল্টা প্যাঁচ কষেন শিবরাজ।

ভোপালের রাজনৈতিক মহলের গুঞ্জন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁর মতো ব্রাত্য নেতা ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহ, রাজস্থানের বসুন্ধরা রাজেকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সমর্থনে বয়ান দেওয়ার পরিকল্পনা সেরে ফেলেছিলেন শিবরাজ। রাজনাথ সিংহ, যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয় বলে জল্পনা। ওই তৎপরতার খবর পৌঁছয় দিল্লিতেও। সূত্রের মতে, তার পরেই শিবরাজের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ‘মামা’র কাজের ঢালাও প্রশংসায় নামে দল।

আর এ সব যত দেখছেন, তত হাসছেন বুধনির মানুষ। বিশাল তোরণ পার হতেই চালক জানালেন, বুধনি এসে গিয়েছে। ভোপাল থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার রাস্তায় দু’পাশে অনুন্নয়নের ছবিটি পাল্টে গেল বুধনিতে পা দিতেই। মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র হওয়ায় চওড়া রাস্তা, সরকারি প্রাইমারি-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল তো রয়েছেই, রয়েছে কলেজ, হাসপাতালও। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তা। রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপণি। দেখেই বোঝা যায় মধ্যপ্রদেশের আর পাঁচটি গ্রামীণ এলাকা থেকে অনেক বেশি সম্পন্ন শিহড় জেলার ওই এলাকা।

তোরণ দিয়ে ঢুকে এগোতেই বুধনি থানা। পাশেই রামলীলা ময়দান। সেখানে বাজির দোকান দিয়েছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী পীতাম্বর জোশী। তাঁর কথায়, ‘‘বুধনি ও সংলগ্ন হোসেঙ্গাবাদে (নর্মদাপুরম) আজ যা উন্নতি হয়েছে, গোটাটাই শিবরাজের জন্য। সম্প্রতি এখানে নার্সিং কলেজ ও পলিটেকনিক কলেজ স্থাপনের ঘোষণা করেছেন তিনি। বুধনি-নমর্দাপুরমকে কেন্দ্র করে উজ্জয়িনীর মতো ধর্মীয় সার্কিট তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে আগামী দিনে কাজের সুযোগ বাড়বে স্থানীয়দের।’’

বুধনি চকে খাবারের দোকান গোবর্ধন সোনির। পার্শ্ববর্তী নর্মদাপুরমের বাসিন্দা হলেও প্রায় বিশ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছেন বুধনিতে। বললেন, ‘‘গত দু’দশকে দেখলাম, মামার উদ্যোগে কী ভাবে পাল্টে গিয়েছে বুধনি। স্থানীয় মানুষ তা ভুলবেন কী করে। তাই মামাকে একঘরে করা ভাল ভাবে নেননি স্থানীয় মানুষ।’’

তা বলে বলে সবটাই ভাল ‘মামা’র, এমন নয়। স্বজনপোষণের অভিযোগও রয়েছে বিস্তর।
বিরোধী কংগ্রেস নতুন ‘রামায়ণ’ সিরিয়ালে হনুমানের ভূমিকায় অভিনয় করা বিক্রম মস্তালকে প্রার্থী করেছে। রামায়ণ ছাড়াও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কিছু সিরিজ়ে কাজ করায় স্থানীয়দের কাছে পরিচিত মুখ বিক্রম। মস্তাল পরিবার কমল নাথের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রাজনীতিতে আনকোরা হলেও ‘জায়ান্ট কিলার’-এর ভূমিকায় নামানো হয়েছে মস্তালকে। বুধনি চকের কাছে দলীয় কার্যালয়ে বসে তাঁর অভিযোগ, ‘‘গোটা এলাকায় একচ্ছত্র রাজত্ব চালায় শিবরাজের পরিবার। সব সরকারি বরাত যায় চৌহান পরিবার বা তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে। ইটারসিতে ফি দিন যে কয়েক কোটি টাকার জুয়ার আসর বসে, তার পিছনে মদত রয়েছে শিবরাজের ভাইয়ের। রোজগারের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হয় স্থানীয়দের।’’

দুর্নীতি, রোজগারের অভাব, কৃষকদের ফসল না পাওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে মস্তাল প্রচারের ঝড় তুললেও, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, গত বার শিবরাজ ষাট হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন, এ বারের ব্যবধান এক লক্ষ ছাপিয়ে যাবে। আর বিক্রম মস্তালের পাল্টা হুঙ্কার, রাবণ কতটা শক্তিশালী ছিল, সবাই জানে। কিন্তু বজরংবলী একার হাতে সেই সোনার লঙ্কা ছারখার করে দিয়েছিল। এ বার সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন তিনি!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy