—ফাইল চিত্র।
মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন দিতেন গাড়ির চালককে। বেআইনি ভাবে তাঁকে দিয়েই ৭ একর জমি কেনানোর অভিযোগ। সেই মামলায় এ বার জেলে যেতে হতে পারে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ বৈজয়্ন্ত পণ্ডাকে। গ্রেফতারি থেকে বাঁচতে এত দিন তাঁদের রক্ষাকবচ ছিল তাঁর। কিন্তু শুক্রবার সেই রক্ষাকবচ তুলে নিয়েছে ওড়িশা হাইকোর্ট। তাতেই গ্রেফতারির সম্ভাবনা বেড়েছে বৈজয়ন্ত এবং তাঁর স্ত্রী জগির উপর।
ওড়িশায় দলিতদের জমি কেনা-বেচা নিয়ে কঠোর আইন রয়েছে, যার আওতায় দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য সম্প্রদায়ের কাউকে নিজের নামে থাকা জমির পুরোটা বিক্রি করতে পারেন না। জমির সামান্য অংশটুকু বিক্রি করতে গেলেও জেলাশাসকের অনুমতি নিতে হয়। শুধু তাই নয়, অনিবার্য কারণে জমি বিক্রি করা হচ্ছে কি না, জমি বিক্রি করতে কোনওরকম চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা-ও বিশদে খতিয়ে দেখা হয়। সবকিছু দেখে প্রশাসন সন্তুষ্ট হলে তবেই জমি বিক্রি করা যায়।
এ সব আইনি জটিলতার মধ্যে যাতে পড়তে না হয় এবং গোটা জমিই যাতে হস্তগত করা যায়, তার জন্য নিজের গাড়ির চালককে পণ্ডা কাজে লাগিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এ বছর ৩১ অক্টোবর ওড়িশা পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত শাখা রবীন্দ্রকুমার সেথি নামের এক ব্যক্তির নামে এফআইআর দায়ের করে। রবীন্দ্রকুমার একসময় পণ্ডার সংস্থা ওরটেল কমিউনিকেশনস লিমিটেডে গাড়ি চালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পণ্ডার সংস্থা ৮ হাজার টাকা বেতন দিত রবীন্দ্রকুমারকে। সেই সময়ই দলিত সম্প্রদায়ের ২২ জনের কাছ থেকে রবীন্দ্রকুমার ৭.২৯৪ একর জমি কেনেন বলে জানান তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: বৈশাখী নিমন্ত্রিত নন, বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীতে যাচ্ছেন না শোভন
জেরা চলাকালীন রবীন্দ্রকুমারই পণ্ডা এবং তাঁর স্ত্রী-র নাম ফাঁস করে দেন বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ২০১০ থেকে ’১৩ সালের মধ্যে বাজারের অর্ধেক মূল্যে রবীন্দ্রকুমারের নামে ওই বিপুল পরিমাণ জমি কেনা হয়। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য পরে ওড়িশা ইনফ্রাটেক প্রাইভেট লিমিটেড (ওআইপিএল) রবীন্দ্রকুমারের কাছ থেকে ৬৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই জমি কিনে নেয়। পণ্ডার স্ত্রী জগি ওআইপিএল-এর কো-প্রোমোটার। তদন্তে নেমে জানা যায়, ৬৫ লক্ষ টাকায় জমি কেনা হয়েছে বলে সরকারি খাতায় দেখানো হলেও, রবীন্দ্রর অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢোকেনি। সবকিছু খতিয়ে দেখে পণ্ডা এবং তাঁর স্ত্রী-র বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা প্রতিরোধ, বেনামি লেনদেন-সহ একাধিক আইনে মামলা দায়ের হয়।
গ্রেফতারি রুখতে সম্প্রতি ওড়িশা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পণ্ডা। সেই আবেদনের সাড়া দিয়ে অন্তর্বর্তী রায়ে প্রথমে গ্রেফতারির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ মঞ্জুর করে আদালত। কিন্তু শুক্রবার সেই রক্ষাকবচ তুলে নেওয়া হয়। বিচারপতি বিপি রুত্রে বলেন ‘‘অপরাধ মামলার তদন্তে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, তাই আবেদনকারীদের দাবি খারিজ করা হল। আগের অন্তর্বর্তী রায়ে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও প্রত্যাহার করা হল।’’
আরও পড়ুন: নেতাহীন কংগ্রেস বিরোধী দল হিসেবে অকেজো, ফের তোপ সিব্বলের
তবে গোটা মামলায় নিজেদের ভূমিকা অস্বীকার করেছেন পণ্ডা এবং তাঁর পরিবার। তাঁদের দাবি, নবীন পট্টনায়েকের সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। তাঁরা কোনও বেআইনি কাজ করেননি। সময় এলেই সত্য বেরিয়ে আসবে। তাঁদের মালিকানাধীন ওটিভি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্রটা তুলে ধরেছিল বলেই, সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে হেনস্থা করছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy