বরণ: দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দলীয় কর্মীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী। রবিবার। পিটিআই
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাসে ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। তাই দ্রুত নতুন করে বিশ্বাস অর্জনে দলীয় কর্মীদের মাঠে নামতে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী। ভোজ্য তেলের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। বিপুল দাম বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যেরই। দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মোদী সরকার বারবার দাবি করলেও চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, মুডি’জ ও মূল্যায়ন সংস্থা ফিচ। করোনার দু’টি ধাক্কায় কাজ হারিয়েছেন বহু কোটি মানুষ। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চাকরির হাল, জিনিসপত্রের দামের কারণে সরকারের উপরে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বলে মেনে নিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশও। এ দিকে বছর ঘুরলেই উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। ২০২৪ সালের আগে যা কার্যত মোদী সরকারের লিটমাস পরীক্ষা। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ হাতছাড়া হলে আগামী লোকসভায় দলের ক্ষমতায় ফেরা যে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে, তা বিলক্ষণ জানেন মোদী-অমিত শাহেরা। তাই আজ জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সর্বাগ্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরাতে তৎপর হয়েছেন মোদী। প্রায় দু’বছর পরে হওয়া কর্মসমিতির বৈঠকে মোদী সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপি কর্মীদের যোগসূত্র (ব্রিজ অব ফেথ) হিসাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন।
বিজেপি নেতৃত্বও ঘরোয়া ভাবে মেনে নিয়েছেন, দেশের মানুষের বড় অংশই সরকারের উপর প্রবল ক্ষুব্ধ। যার সুযোগ নিচ্ছে বিরোধীরা। বৈঠকে নেওয়া রাজনৈতিক প্রস্তাবে তাই বিরোধীদের সমালোচনা করেছে দল। আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে দলের নেতা ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘দেশ যখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিরোধীরা নেতিবাচক প্রচার ও ঘৃণার রাজনীতি করে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।’’ মানুষের কাছে প্রকৃত সত্যটি পৌঁছে দিতে চলতি মাস থেকেই ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে সরকারের কাজের সুফল কর্মীদের মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। আজ মূলত যে রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়েছে দল, তার মাধ্যমে আগামী দিনের প্রচারের রূপরেখা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আগামী দিনে কোন বিষয়গুলিকে সামনে রেখে কর্মীদের প্রচার চালাতে হবে, সেই দিশা আজ দেওয়া হয়েছে।’’ দলের ভাবধারার সঙ্গে নতুন কর্মীদের যুক্ত করারও লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। বর্তমানে দেশের ১০.৪০ লক্ষ বুথের মধ্যে ৮৫ শতাংশ বুথে বিজেপির বুথ কমিটি রয়েছে। সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব বুথে বুথ কমিটি গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে দল। এ ছাড়া এপ্রিল মাসের মধ্যে দেশের প্রতি ভোটার তালিকার পাতা পিছু এক জন করে কর্মী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজকের বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল নির্বাচনমুখী পাঁচ রাজ্যের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা। এর মধ্যে পঞ্জাব ছাড়া বাকি চার রাজ্য— উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া ও মণিপুরে ক্ষমতায় রয়েছে দল। কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় থাকায় স্বভাবতই প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হাওয়া রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে। গোয়াতেও খুব স্বস্তিতে নেই বিজেপি। এই আবহে আজ চার রাজ্যের মধ্যে কেবল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বাকি তিন মুখ্যমন্ত্রী ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন। বৈঠকের শেষে ভূপেন্দ্র যাদব দাবি করেন, চার রাজ্যেই তাদের যে প্রস্তুতির রূপরেখা পেশ করেছে, তাতে দল সন্তুষ্ট। দল আশাবাদী, চার রাজ্যেই ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে তারা। যদিও সূত্রের মতে, উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে বিজেপি নেতৃত্ব। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কৃষক অসন্তোষ যেমন বিজেপির জন্য চিন্তার কারণ, তেমনই যোগী আদিত্যনাথের উপরে সে রাজ্যের ব্রাহ্মণ-দলিত ও ওবিসি সমাজের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে মাঠে নেমে পড়েছেন সপা নেতা অখিলেশ যাদব। মোদী-শাহকে চিন্তায় রেখেছে উত্তরাখণ্ডে শীর্ষ নেতৃত্বের দুর্বলতা। অন্য দিকে গোয়ায় এক দিকে পর্যটন শিল্পে মন্দায় আমজনতার রোজগারে টান পড়া, অন্য দিকে সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সরব হওয়া দুশ্চিন্তায় রেখেছে বিজেপিকে।
কৃষি আইন ঘিরে মতানৈক্যের কারণে শিরোমণি অকালি দল এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় এ যাত্রায় পঞ্জাবে একলা লড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দল। সে রাজ্যে কংগ্রেসের অন্তঃকলহ বিজেপিকে যেমনি বাড়তি সুবিধে করে দিয়েছে, তেমনই অরবিন্দ কেজরীবাল ও প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা অমরেন্দ্র সিংহের পৃথক ভোটে লড়ার সিদ্ধান্তে বিজেপি বিরোধী ভোট তিন ভাগে ভাগ হওয়ার আশা করছেন ভূপেন্দ্র যাদবেরা। যাতে আখেরে লাভ বিজেপির। পঞ্জাব তথা দেশের কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিতে তাই কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারমুখী আইনের ফায়দা, কৃষকদের চাষের জন্য নগদ অর্থপ্রদান, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ধারাবাহিক বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি প্রচারের হাতিয়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। একই সঙ্গে কর্তারপুর করিডর নির্মাণ, শিখ দাঙ্গার তদন্তে এসআইটি গঠনের মতো বিষয়গুলি প্রচারের মাধ্যমে শিখ সমাজের আস্থা অর্জন করার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy