Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

ক্রসভোটে ক্ষমতা অধরাই বিজেপির

এখানেও মুখরক্ষা হল না। রাজ্যস্তরে প্রথমে উত্তরাখণ্ড, পরে অরুণাচল প্রদেশে দল ভাঙাভাঙির রাজনীতি করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছে বিজেপি। এবার করিমগঞ্জ পুরসভা কংগ্রেসে হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে গিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপির রণকৌশল।

শীর্ষেন্দু সী
করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

এখানেও মুখরক্ষা হল না। রাজ্যস্তরে প্রথমে উত্তরাখণ্ড, পরে অরুণাচল প্রদেশে দল ভাঙাভাঙির রাজনীতি করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছে বিজেপি। এবার করিমগঞ্জ পুরসভা কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে গিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপির রণকৌশল। কংগ্রেস ভাঙাতে গিয়ে নিজেদের দলের পুর সদস্যদেরই জোটবদ্ধ রাখতে পারল না বিজেপির করিমগঞ্জ জেলা নেতৃত্ব।

২৭ সদস্যের করিমগঞ্জ পুরসভার ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৭টি আসন। বিজেপি দখল করে ১০টি আসন। তবে পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান মনোনয়নকে ঘিরে প্রথম থেকেই কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠীবাজি চলছিল। মে মাসে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতা দখলের পরেই নতুন করে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা, স্বশাসিত পরিষদ ইত্যাদি কংগ্রেসের দখলমুক্ত করতে উদ্যোগী হয়। আর এই কাজে তাদের একমাত্র ভরসা ছিল কংগ্রেস সদস্যরাই। তাঁদের ভাঙিয়ে এনে এই স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলি দখল করছিল বিজেপি। এ ভাবেই তারা দখল করে ডিমাহাসাও স্বশাসিত পরিষদও।

করিমগঞ্জ পুরসভার চেয়ারপার্সন শিখা সূত্রধরকে হঠাতে সেই পথেই হাঁটে বিজেপি। কংগ্রেস থেকে পাঁচ পুরসদস্যকে ভাঙিয়ে আনে তারা। পুরসভা, পঞ্চায়েত ও স্বশাসিত পরিষদগুলিতে দলত্যাগ-বিরোধী আইন কার্যকর না হওয়ায় সুবিধাই হয় বিজেপি নেতৃত্বের। করিমগঞ্জের পাঁচ কংগ্রেসি পুরসদস্য সহজেই বিজেপিতে যোগ দেন। ফলে খাতায় কলমে বিজেপির শক্তি হয় ১৫, কংগ্রেস নেমে আসে ১২তে। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ পদাধিকার বলেই পুরসভার সদস্য। তাঁর ভোট ধরে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাতে ছিল ১৩টি ভোট। ম্যাজিক সংখ্যাটি
ছিল ১৫।

কয়েক দিন আগে পাঁচ কংগ্রেস সদস্যকে দলে টেনে ১৭ সদস্যের পুর পরিষদীয় দল কংগ্রেসি পুরপ্রধান শিখা সূত্রধরের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয়। আজ ছিল সেই প্রস্তাবকে সামনে রেখে ভোটাভুটি। গত কয়েক দিন ধরে এই ভোটকে ঘিরে দুই শিবিরেই তৎপরতা তুঙ্গে ওঠে। নিজেদের শক্তি অটুট রাখতে দু’পক্ষই দলীয় সদস্যদের নজরবন্দি করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোপন ব্যালটে পুল সদস্যরাই তা উল্টে দিলেন। এক সদস্যের ভোট খারিজ হয়ে যায়। বৈধ ২৭টি ভোটের ১৬টি পেয়ে শিখা দেবীই পুরপ্রধান পদে রয়ে গেলেন। আর ১৫-১২ ভোটে জিতে গেলেন উপ-পুরপ্রধান পার্থ দাসও।

ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার পরেই শুরু হয়েছে পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি। একে এপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক একটি ভোট বিক্রি হয়েছে দেড় থেকে দু লক্ষ টাকায়। ক্রসভোটিং যে শুধু বিজেপির তরফ থেকে হয়েছে এমনটা নয়, কংগ্রেসের পুরসদস্যও বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

আজ সকাল ১১টায় করিমগঞ্জ পুরসভায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোটের পর গণনা শুরু হতেই কংগ্রেসের জয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। পুরসভা চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। বিজেপি সমর্থকদের একাংশ গণনাস্থলে প্রবেশের চেষ্টা চালান বলে অভিযোগ। কিছুক্ষণ পর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়। কংগ্রেস পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে বিজেপি অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করাতে না পারায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলের কর্মীরা। তারা দলীয় কার্যালয়ে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। তাদের অভিযোগ, দলীয় সদস্যদের একাংশ চরম দলবিরোধী কাজ করেছেন। তবে কংগ্রেসের তরফ থেকে উপ-পুরপতি পার্থসারথি দাস বলেন, কংগ্রেস-বিজেপির উভয় শিবিরের সদস্যরাই ‘ক্রস ভোটিং’ করেছেন। যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আবার কংগ্রেসের দু’টি ভোট বিজেপির পক্ষে পড়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অনাস্থা প্রস্তাবে বিজেপি পরাজিত হওয়ায় বিজয় মিছিল বের করে কংগ্রেস। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, ভোটাররা বিজেপির ভাঁওতাবাজিতে বিশ্বাস করেননি। তাই তারা বিজেপিতে যোগ দিলেও কংগ্রেসকেই ভোট দিয়েছেন। অন্য দিকে, বিজেপি শিবিরের খবর, সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করা সদস্যকে উপ-পুরপ্রধানের আসনে বসানোর দলীয় সিদ্ধান্ত বিজেপির অনেক সদস্যই মানতে পারেননি। তাঁরা ঘটনার তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিজেপি সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Karimganj municipality BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy