কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে মোদী-শাহ জুটি। ফাইল চিত্র।
ঘোর সঙ্কটে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। সঙ্কট আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই নিয়ে। জেতা আসনে জয়ী প্রার্থীদেরই রাখা হবে, নাকি নতুন মুখ এনে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া সামাল দেওয়া হবে, সেই নিয়েই দোলাচলে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছে বিক্ষুব্ধরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করায়। লোকসভার বিভিন্ন আসনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে মোদী-শাহ জুটির সামনে তাই এখন জোড়া চ্যালেঞ্জ। এক দিকে সামাল দিতে হবে দলের অন্দরের বিদ্রোহ, অন্য দিকে আটকাতে হবে বিজেপি বিরোধী হাওয়ার দাপটও।
রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তীসগঢ় বিধানসভা নির্বাচনের ফলের পর অনেকটাই বদলে গিয়েছে বিজেপির অন্দরমহলের ছবি। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশমা আর ম্যাজিকের উপর ভর করে দেশজুড়ে তাক লাগানো ফল করার পর এই রকম সঙ্কট দেখা যায়নি বিজেপির অন্দরে। এক দিকে মোদীর মুখ, অন্য দিকে সংগঠনের উপর অমিত শাহের প্রশ্নাতীত নিয়ন্ত্রণ, এই জোড়া অস্ত্রে এত দিন মুখ খোলার সুযোগ পাননি কেউই। মুখ খোলার সুযোগ ছিল না, কারণ শুধু লোকসভা নির্বাচন নয়, তার পরবর্তী একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনেও তাক লাগানো ফল করায় সময়ের সঙ্গে বিজেপি সংগঠনে আরও দৃঢ় হয়েছে মোদী-শা জুটির কর্তৃত্ব। যে কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তার ফল ভুগতে হত নিঃশব্দেই। এই জুটিকে চ্যালেঞ্জ করে মাথা উঁচু করে বিজেপিতে থাকার সম্ভাবনা ছিল খুবই কম, যার অসংখ্য উদাহরণ দেখা গিয়েছে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন সময়ে।
নির্বাচনী কৌশল ঠিক করতে দলীয় সংগঠনে এত দিন শেষ কথা বলতেন অমিত শাহ-ই। বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া সামাল দিতে তাঁর বরাবরের নীতি ছিল নতুন মুখের প্রতি নির্ভরতা। এই জন্য প্রার্থী নির্বাচনের সময় তথাকথিত হেভিওয়েটরাও থাকতেন কোপ পড়ার আশঙ্কায়। সেই একই কৌশল আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিতে গিয়ে এখন সমস্যায় পড়ছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ, মোদী-শাহ জুটি যে বিজেপির জয়ের জন্য আর অপরিহার্য নয়, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিজেপির ভিতরেই। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন পদপ্রার্থীরা। বিজেপির মতো পার্টিতে যা সচরাচর দেখা যায় না।
আরও পড়ুন: ভারতরত্ন-কে অসম্মানের অভিযোগ, জুবিন গর্গের বিরুদ্ধে এফআইআর বিজেপি-র
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে রেল মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ সিংহের কথা। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে তিনি উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর আসন থেকেই লড়বেন। এই আসনে জিতেই তিনি সাংসদ হয়েছিলেন। এই আসনে প্রার্থী করা না হলে তিনি সরে দাঁড়াবেন বলেই হুমকি দিয়েছেন মনোজ।
এ ছাড়া আনা যেতে পারে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর আসনের বিজেপি সাংসদ রমেশ ব্যাসের কথাও। দলে যিনি মোদী-শাহ জুটির বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। তাই তাঁকে প্রার্থী করা হবে, এই সম্ভাবনা ছিল বেশ ক্ষীণ। কিন্তু ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভার পরাজয়ের পর হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন তিনি। তিনি বিক্ষুব্ধ হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে গেলে ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই অনেকটাই কমজোর হয়ে যাবে। এই রাজ্যে কংগ্রেসের উত্থানের পর প্রতিটা ভোটই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির সামনে। তাই বিক্ষুব্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও রমেশকে হঠানোর রাস্তা থেকে সরে আসতে হবে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে, যা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি বিজেপিতে। সুষমা স্বরাজ এবং উমা ভারতী যে এই নির্বাচনে ভোটে লড়বেন না, তাও জানিয়ে দিয়েছেন নিজে থেকেই। তাই এই চত্বরে এখন অনেকটাই একা হয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ।
আরও পড়ুন: মোদীর সভা ঘিরেও মাঠ-সঙ্কট, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আটকায় কে! চ্যালেঞ্জ বড়মার নাতির
বিক্ষোভের আঁচ অবশ্য প্রথম টের পাওয়া গিয়েছিল হিন্দি বলয়ে বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা নির্বাচনের সময়ই। রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া প্রকাশ্যেই দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, তাঁর পছন্দের প্রার্থীদেরই যেন ভোটে দাঁড় করানো হয়। মধ্যপ্রদেশেও শীর্ষনেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়-র সুপারিশ মেনে তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ভাল ভাবে নেননি অনেকেই। সেই প্রার্থী ভোটে হারায় আরও জোরাল হয়েছে বিক্ষুব্ধদের স্বর। অন্য দিকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে দেখে দলের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতারাও তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটে দাঁড় করাতে চাইছেন। সময়ের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সেই অনুরোধের পাহাড় জমতে শুরু করেছে। অন্য দিকে বিক্ষোভ সামাল দিতে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশে শুরু হয়েছে শাস্তি-বহিষ্কার-বরখাস্তের পালা।
তাই ২০১৯ লোকসভা যুদ্ধের ময়দানে নতুন কৌশলের খোঁজে এখন মোদী-শাহ। নরেন্দ্র মোদীর যে ফ্যাক্টর ২০১৪ তে ছিল, তা একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে বলাটা অত্যুক্তি। কিন্তু সেই ম্যাজিক যে আর আগের মতো জোরাল নয় সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। শুধু মোদী হাওয়ায় ভর করে যে নির্বাচনী বৈতরণী পার করা যাবে না, তা ভাল ভাবেই বুঝছেন বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞ সেনাপতি অমিত। উল্টো দিকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এবং বিক্ষুব্ধদের সুর আরও চ়ড়া হতে থাকা। সব মিলিয়ে নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রার্থীতালিকা নিয়ে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি মোদী-শাহ জুটি।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy