একনাথের গুয়াহাটির শিবির থেকে মুম্বই ফিরে সাংবাদিক বৈঠকে শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত, বিধায়ক কল্পেশ পাটিল এবং নিতিন দেশমুখ। ছবি পিটিআই
শিবসেনার বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হলে আপত্তি নেই বিজেপি নেতৃত্বের। সূত্রের মতে, প্রাথমিক ভাবে সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে একনাথ শিবিরকেও। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য ঠাকরে পরিবারকে শিক্ষা দিতে দল উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব পেলেই খুশি।
অথচ, দীর্ঘদিনের সঙ্গী শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির জোট ভাঙার জন্য দায়ী ছিল মুখ্যমন্ত্রীর আসন নিয়ে দড়ি টানাটানি। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির চেয়ে কার্যত অর্ধেক আসন পেয়েও মুখ্যমন্ত্রীর আসন বিজেপিকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। যার সুযোগ নিয়ে শিবসেনাকে সমর্থন দিয়ে সে রাজ্যে সরকার গড়ে কংগ্রেস ও এনসিপি।
আড়াই বছর পরে আজ উদ্ধব ঠাকরে যখন কোণঠাসা, তখন তাঁকে ‘শিক্ষা’ দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর আসন শিন্ডেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দল প্রস্তুত রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছে মহারাষ্ট্র বিজেপি। একনাথ শিবিরের দাবি, তাঁদের কাছে শিবসেনার ৪১ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। তাই দল বিরোধী আইন তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ফলে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে উদ্ধব শিবির ব্যর্থ হলে বিজেপির সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানাবেন একনাথ। সে ক্ষেত্রে একনাথকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে দলের আপত্তি নেই বলেই বিদ্রোহী শিবসৈনিক শিবিরকে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিলেও, নতুন সরকারে উপমুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ইতিমধ্যেই দরবার করে রেখেছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি আসনের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১৪৫ জন বিধায়কের সমর্থন। এই মুহূর্তে ওই রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ১০৬। সাত জন নির্দল বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে রয়েছে। একনাথের দাবি শিবসেনার বিদ্রোহী ৪১ জন বিধায়ক ছাড়াও অন্তত তিন থেকে চার জন নির্দল বিধায়ক তাঁদের সমর্থন করতে প্রস্তুত। ওই দাবি মেনে নিলে বিধানসভায় অনায়াসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে সক্ষম হবেন একনাথ-বিজেপি জোট।
ঠাকরে পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়ার বার্তা দিলেও, রাজনীতির অনেকের মতে, এ ছাড়া উপায়ও ছিল না দলের কাছে। কারণ, একনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করা না হলে ‘অপারেশন লোটাস’ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যাবে। কেননা বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের মনোবল ভাঙতে উদ্ধব প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘একনাথ দল ভাঙলেও কি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন? বিজেপি কি ছেড়ে দেবে?’’ অন্য দিকে, বিজেপির ক্ষমতা-দখল আটকাতে কংগ্রেস প্রয়োজনে বিদ্রোহী শিবসেনা গোষ্ঠীকে সমর্থন করার ঘোষণা করে রেখেছে। আজ ঠাকরে পরিবারের পক্ষে দল ধরে রাখতে প্রয়োজনে একনাথকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি নেই বলেও বার্তা দেওয়া হয়। ঘরোয়া ওই বার্তার সঙ্গেই দলের হুইপ ভাঙার জন্য একনাথ-সহ ১২ জন বিদ্রোহী বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য বিধানসভায় আবেদন জানিয়েছেন উদ্ধব শিবির।
দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধব ঠাকরেকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য মহারাষ্ট্রে তৎপর দেবেন্দ্র ফডণবীসের মতো বিজেপি নেতারা। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, ‘‘সরকার পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বারও মুখ্যমন্ত্রীর আসনের জন্য গোঁ ধরে থাকলে আমও যাবে, ছালাও যাবে। তাই দল একনাথকে সামনে রেখে সরকার গড়তে প্রস্তুত রয়েছে। আড়াই বছর পরে ভোট হলে দল তখন একক শক্তিতে লড়বে।’’ তবে শেষ পর্যন্ত একনাথ-সহ বিদ্রোহী নেতাদের বিধানসভায় ভোটাভুটি হলে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু একনাথের সঙ্গে যদি অধিকাংশ বিধায়ক বেরিয়ে যান, সে ক্ষেত্রে শিবসেনা নাম ও প্রতীক কোন গোষ্ঠী ব্যবহার করতে পারবে? সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপের মতে, ‘‘দলের নাম ও প্রতীকের প্রকৃত দাবিদার কারা হবে, তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy