সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মবার্ষিকীতে ডিজিটাল সংগ্রহশালার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
সারা দিন ধরে সর্দার বল্লভভাই পটেলকে নিয়ে উচ্চগ্রামে প্রচার চালিয়ে ইন্দিরা গাঁধীকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা তো করলেনই। এ বারে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে কংগ্রেসের অবদানকে ধাপে ধাপে খাটো করার কাজে নামারও ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আজ, ৩১ অক্টোবর সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মবার্ষিকী। আর এই দিনটাই ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুদিন। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই নেহরু-গাঁধী পরিবারকে আক্রমণের জন্য পটেলকে হাতিয়ার করছেন মোদী। তাঁকে এ কাজে সঙ্গত করেছে সঙ্ঘ-পরিবার। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইতিহাসের পাতায় কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক চরিত্রদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সেই চেষ্টা আরও বাড়িয়েছেন তিনি। সোমবার, পটেলের জন্মদিনে আরও একধাপ এগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, স্বাধীনতার ইতিহাস দেশের মানুষের কাছে ঠিক ভাবে তুলে না ধরে ঘোরতর অন্যায় করা হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলন নেতাদের আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল জনসাধারণের। কিন্তু সেটা পড়ানো হয় না দাবি করে মোদীর ঘোষণা, এই নতুন ইতিহাস তিনি ধাপে ধাপে তুলে ধরবেন দেশের মানুষের সামনে।
মোদীর এই ঘোষণার অর্থ স্পষ্ট। এত দিন ধরে কংগ্রেস যে ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করে এসেছে, সেটি ধাপে ধাপে মুছে দিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করা হবে। সর্দার পটেলকে সামনে রেখে সে কাজ আজ শুরুও করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে দিল্লি হাইকোর্টের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে পটেলের কথা বললেন। দুপুরে ইন্ডিয়া গেটে ‘একতা দৌড়’ শুরু করলেন। সন্ধ্যায় প্রগতি ময়দানে পটেলকে নিয়ে একটি সংগ্রহশালার উদ্বোধন করলেন। পটেলকে নিয়ে দিনভর আড়ম্বরের ফাঁকে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুদিনে বরাদ্দ হয়েছে নামমাত্র একটি টুইট। পটেল নিয়ে মোদীর দিনভরের মাতামাতিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে এআইসিসি দফতর থেকে ইন্দিরা গাঁধী সংগ্রহশালা পর্যন্ত রাহুল গাঁধীর পদযাত্রা। এমনকী সকালে ইন্দিরা স্মরণে সনিয়া-রাহুলের উপস্থিতিও।
ইন্দিরাকে এই অবজ্ঞায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আজ সর্দার পটেলকে নিয়ে এত মাতামাতি করে ইন্দিরা গাঁধীর বলিদানকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। মনে রাখা উচিত, এই পটেলই কিন্তু আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’’ পটেল যে কংগ্রেসের নেতা ছিলেন, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। আর মোদী যেন তৈরিই ছিলেন এমন কথা উঠতে পারে ভেবে। তাই তিনি আগেভাগেই বলেছেন, ‘‘অনেকে প্রশ্ন করেন, পটেলকে নিয়ে অনুষ্ঠান করার আমরা কে? পটেল কাউকে কোনও কপিরাইট দিয়ে যাননি। আর আমি তো বিজেপিওয়ালা, সর্দার সাহেব তো কংগ্রেসি। তা-ও দেশের প্রতি সর্দার পটেলের অবদানকে তুলে ধরার জন্যই আমার এত আগ্রহ।’’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছে বিজেপিও। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘আসলে পটেল কংগ্রেসে থাকলেও জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তাঁর বিবাদ হয়েছিল। কংগ্রেস নেহরু-গাঁধী পরিবারের বাইরে কাউকে স্বীকৃতি দেয় না। স্বাধীনতা আন্দোলনের কৃতিত্বও নিজেদের বলে দাবি করে। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে একটি বিকৃত ইতিহাস দেশের সামনে পেশ করেছে। এ বারে সেটি বদলের সময় এসেছে।’’ বিজেপি নেতাদের মতে, ইতিহাসে এমন অনেক নাম রয়েছে, যাঁরা এক সময় কংগ্রেসে থাকলেও পরে বিরোধিতা করেছেন অথবা কংগ্রেস তাঁদের ভুলে গিয়েছে। মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি এখন তাঁদেরই তুলে ধরছে। সর্দার পটেলের পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ নারায়ণ, পণ্ডিত মদন মোহন মালব্যের নামে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। আজও পটেলের নামে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেন তিনি।
যদিও বিজেপি তথা মোদীর এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, সঙ্ঘ পরিবার বা তাদের সহযোগী সংগঠনগুলির কেউই স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেননি। বরং অনেকেই নানা ভাবে ইংরেজদের সাহায্য করেছেন। এক বাম নেতার কথায়, ‘‘ওদের কেউ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে, কেউ ব্রিটিশ সরকারকে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছে। কেউ আবার অনুগামীদের ‘ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শক্তিক্ষয় করতে’ বারণ করেছে। সে সবও ইতিহাসে আছে। মোদীর উচিত, সে সবও তুলে ধরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy