Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Draupadi Murmu

Adhir chowdhury: অধীরের ‘অপশব্দে’ বিজেপির ধুন্ধুমার, হেনস্থা সনিয়াকেও

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লোকসভা, রাজ্যসভায় বিজেপির মহিলা সাংসদরা এ নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ০৭:৪৩
Share: Save:

গত দেড় সপ্তাহ ধরে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা সংসদে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলার পরে আজ উল্টে গেল চিত্রটা। বিজেপির ধুন্ধুমার বিক্ষোভের সাক্ষী থাকল সংসদ। অধীরের পাশাপাশি স্মৃতি ইরানির নেতৃত্বে নজিরবিহীন আক্রমণের মুখে পড়তে হল কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, লোকসভা মুলতুবি হওয়ার পরে বিজেপির মহিলা সাংসদরা সনিয়াকে ঘিরে ধরে হেনস্থা করেন। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেস নেতা আদিবাসীমহিলা রাষ্ট্রপতিকে ‘অপমান’ করা সত্ত্বেও ক্ষমা চাওয়ার বদলে সনিয়া স্মৃতির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।

দুইয়ে মিলিয়ে, মূল্যবৃদ্ধি, জিএসটি, ইডি-সিবিআইয়ের অপব্যবহার, ২৭ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা নিয়ে বিরোধীরা বাদল অধিবেশনের গোড়া থেকেই মোদী সরকারকে নিশানা করছিলেন। শাসক শিবির আলোচনা এড়াতে সংসদের অচলাবস্থাকে ঢাল করছিল। আজ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর একটি মাত্র ‘অপশব্দ’ ব্যবহারে বিজেপি হাতে অস্ত্র পেয়ে গেল। পাল্টা অস্ত্র হিসেবে কংগ্রেস লোকসভার স্পিকারের কাছে স্মৃতি ইরানি-সহ বিজেপি সাংসদদের বিরুদ্ধে সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে হেনস্থা করার জন্য অধিকার ভঙ্গের প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানিয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার, সংসদ ভবনের সামনে বিজয় চকে। সনিয়া গান্ধীকে ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবাদে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার দাবি নিয়ে বলতে গিয়ে অধীর প্রথম বার ‘রাষ্ট্রপত্নী’ শব্দটি ব্যবহার করেন। অধীরের ব্যাখ্যা, তিনি বাংলাভাষী। হিন্দিতে দখল নেই। মুখ ফসকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বেরিয়ে গিয়েছে। তা-ও মাত্র এক বারই। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমা চাইতে তিনি সময়ও চেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লোকসভা, রাজ্যসভায় বিজেপির মহিলা সাংসদরা এ নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করেন। রাজ্যসভায় নির্মলা সীতারামন, লোকসভায় স্মৃতি ইরানি ছিলেন নেতৃত্বে। দু’জনেরই বক্তব্য ছিল, জনজাতি সমাজের এক মহিলার উত্তরণ কংগ্রেস মেনে নিতে পারছে না। দুই কক্ষ মুলতুবি হয়ে যাওয়ার পরে সংসদ চত্বরেও বিক্ষোভ দেখান বিজেপির মহিলা সাংসদরা। সনিয়া অধীর ও মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে কথা বলে অধীরকে লোকসভায় নিজের মন্তব্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। স্পিকারকে চিঠি লিখে তাঁকে এর সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। সনিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “অধীর ইতিমধ্যেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন।”

বিবাদ মেটার বদলে বেলা ১২টায় অধিবেশন শুরু হতে তুঙ্গে ওঠে। লোকসভায় স্মৃতি ইরানি সরাসরি সনিয়া গান্ধীকে আক্রমণ করেন। কংগ্রেস সভানেত্রীকে ‘সনিয়া গান্ধী, তুমি’ বলে সম্বোধন করে স্মৃতি বলেন, সনিয়ার ছাড়পত্র নিয়েই রাষ্ট্রপতিকে অপমান করা হয়েছে। আঙুল তুলে স্মৃতি বলেন, ‘সনিয়া গান্ধী, তোমার দলের পুরুষ নেতা রাষ্ট্রপতিকে অপমান করেছে। সনিয়া গান্ধী তুমি এতে ছাড়পত্র দিয়েছ। সনিয়া গান্ধী তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ বিজেপির বাকি সাংসদরাও দাবি তোলেন, সনিয়াকে ক্ষমা চাইতে হবে।

হট্টগোলের মধ্যে অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। কংগ্রেস সাংসদদের দাবি, সনিয়া গান্ধী বেরোনোর সময় শোনেন অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার পরেও তাঁর নামে বিজেপি সাংসদেরা স্লোগান দিচ্ছেন। সনিয়া ট্রেজারি বেঞ্চের বর্ষীয়ান নেত্রী রমাদেবীর কাছে গিয়ে বলেন, “অধীর তো প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। তা হলে কেন তাঁর নাম টানা হচ্ছে!” স্মৃতি এগিয়ে এসে সনিয়াকে বলেন, ‘ম্যাডাম মে আই হেল্প ইউ? আপনার নামে স্লোগান দিয়েছি আমি। যা বলার আমাকে বলুন।’ নির্মলার অভিযোগ, এর পরে সনিয়া ‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক টু ইউ’ বলে ওঠেন। কংগ্রেসের দাবি, স্মৃতি হুমকির সুরে বলেন, ‘আপনি কী ভাবে আমার সঙ্গে এ ভাবে কথা বলেন! এটা আপনার দলের দফতর নয়। আপনি জানেন না আমি কে!’ অন্য বিজেপি সাংসদরা সনিয়াকে ঘিরে ধরেন। এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে, তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র, মালা রায়, অপরূপা পোদ্দাররা সনিয়াকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। এ জন্য কংগ্রেসের তরফে তাঁদের ধন্যবাদও জানানো হয়েছে।

তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বক্তব্য, “পঁচাত্তর বছরের এক জন নেত্রী বিজেপির এক নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে যেতেই তাঁকে নেকড়ের মতো ঘিরে ধরে হেনস্থা করা শুরু করেন শাসক দলের সাংসদেরা।” তৃণমূলের মালা রায় বলেন, “সনিয়া গান্ধীর মতো প্রবীণ ও মৃদুভাষী নেত্রীকে যে রকম ঝাঁঝালো ভাবে আজ বিজেপি আক্রমণ করেছে, তা রুচিহীনতার পরিচয়। যে হেতু সে সময়ে কংগ্রেসের মহিলা সাংসদেরা ছিলেন না, তাই আমরাই তাঁকে ঘিরে ধরে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসি।” অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অভিযোগ, “সনিয়া গান্ধীর কথায় আমাদের দলের সাংসদদের মনে হয়েছে, তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

কংগ্রেস এর সবটাই বানানো অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সুপ্রিয়া সুলের বক্তব্য, নির্মলা সে সময় লোকসভাতেই ছিলেন না। অধীরের নেতৃত্বে কংগ্রেস সাংসদেরা স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে স্মৃতি-সহ বিজেপি সাংসদদের আগ্রাসী শরীরী ভঙ্গি ও কটু ভাষার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও স্মৃতির আচরণ বিরোধী শিবিরকে এককাট্টা করে দিয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, গোয়ায় স্মৃতির কন্যার বেআইনি পানশালা চালানো নিয়ে কংগ্রেস সরব হয়েছে বলেই স্মৃতির রাগ। উল্টো দিকে বিজেপির অভিযোগ, স্মৃতি অমেঠীতে রাহুল গান্ধীকে হারিয়েছিলেন বলে গান্ধী পরিবার তাঁর উপরে খেপে রয়েছে।

কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাল স্মৃতির ‘অসংসদীয়’ আচরণের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনা হবে। অধিকাংশ বিরোধী দল তাতে সমর্থন জানিয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশন ৩ অগস্ট অধীরকে তাঁর মন্তব্যের জন্য তলব করেছে। কংগ্রেস সভানেত্রীকে অধীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। অধীরের অপশব্দ ব্যবহারের জন্য দলের মধ্যে তাঁর বিরোধীরাও সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন।

যদিও কংগ্রেস সূত্রের দাবি, এখনও অধীরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না। অধীরের বক্তব্য, তাঁর মুখ ফস্কে করা মন্তব্যের জন্য প্রয়োজনে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হোক। সনিয়া গান্ধীকে কেন টেনে এনে নিশানা করা হচ্ছে! তবে বিজেপি যে ভাবে প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এবং তার পরে বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ময়দানে নামাল, তাতে এ বিষয়ে তাদের মরিয়া আচরণও স্পষ্ট হল।

অন্য বিষয়গুলি:

Draupadi Murmu BJP Adhir Ranjan Chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy