দূষণের সাদা ফেনায় ঢেকেছে যমুনা। তার মধ্যেই ছটের পুজো। বুধবার দিল্লি সংলগ্ন গৌতম বুদ্ধ নগরে। ছবি: পিটিআই।
বরফ নাকি!
নীল যমুনা তো কাব্যে। দূষণে জর্জরিত রাজধানী যমুনার জল মিশমিশে কালো বহু দিনই। নিত্য দিনের পচা পাঁকের গন্ধওলা স্রোতহীন সেই জলে বরফ!
যে বরফ আবার যমুনার পাড়ে দাঁড়িয়ে পাইপে জল ছিটিয়ে ভেঙে দিচ্ছিলেন দিল্লি জল বোর্ডের কর্মী অশোক কুমার। তাঁর কথায়, “বরফ নয়, এ হল সাদা ফেনা। যমুনার জলের দূষণে এমন ফেনা হয়েছে, মনে হচ্ছে বরফ জমেছে।” তো আপনার কাজ কি? কেন এমন জল ছেটাচ্ছেন নদীতে? অশোকের দাবি, “জল ছিটিয়ে রাসায়নিক ফেনাকে ভেঙে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে আমার উপরে।” তত ক্ষণে এক দল আবার নেমে পড়েছেন কোমর জলে। তাঁদের কাজ কোমর জলে দরমার বেড়া পুঁতে সে ফেনা পাড়ে আসা আটকানো। তারই মধ্যে শোনা গেল গোঁ-গোঁ আওয়াজ। গোটা নদী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেচ দফতরের স্পিড বোড। তাঁদেরও না কি কাজ ফেনাকে আটকানো। তা করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই গোঁত্তা খেয়ে স্পিডবোট দিয়ে ফেণাকে মাঝ নদীতে ঠেলে দিচ্ছিলেন বোটের কর্মীরা। ভাবখানা এমন, লক্ষণের গণ্ডি কেটে দিচ্ছেন জলের মধ্যে। যা পেরিয়ে ফেনার কূলে আসা অসাধ্য। (আজ যার জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে ‘বিজ্ঞানী’ শিরোপা দিয়েছেন নেটিজেনেরা। দিনভর টুইটারে ট্রোল হয়েছেন তিনি। আর যাদের জন্য এত কাণ্ড, সেই পুণ্য লোভাতুরেরা ফি বছরের মতোই সেই ফেনা মাখা বিষাক্ত জলে আপাদমস্তক ফেনিল হয়েই ছট উৎসবে সূর্যের উপাসনা সেরেছেন। ডুব দিতে বাধ্য হয়েছেন কালিন্দীর কালো, পচা জলে। পরিবেশবিদদের মতে, জলে অ্যামোনিয়া ও ফসফসের মতো রাসায়নিকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিই ওই ফেনার জন্য দায়ী।
#WATCH | "We are sprinkling water in the Yamuna to dissipate toxic foam," says Ashok Kumar, Delhi Jal Board employee pic.twitter.com/4waL2VsM7T
— ANI (@ANI) November 10, 2021
ফেনিল যমুনার ছবি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসতেই কোমর বেঁধে সমালোচনায় নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতারা। যেমনটি প্রতিবার প্রশ্ন তোলেন, এ বারেও তাঁদের প্রশ্ন— কী করলেন কেজরীবাল এত দিন? বিজেপি নেতা প্রাক্তন ব্যাঙ্কার অমিত মালব্য টাকাপয়সার হিসাব তুলে ধরে জানতে চেয়েছেন, “কেন্দ্র কেজরীবাল সরকারকে যমুনা সাফাইয়ের জন্য ২,৪১৯ কোটি টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা কোথায় খরচ হল?” কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের চোখেও দোষী কেজরীবাল সরকার। তাঁর কথায়, “বারাণসীর গঙ্গা, অযোধ্যার সরজু, আমদাবাদের সাবরমতী নদী যদি দূষণমুক্ত হতে পারে, দিল্লির যমুনা কী দোষ করল! কেজরীবাল যমুনা সাফ করবেন তা নয়, মহিলাদের বলছেন ছট উৎসব পালন না-করতে।” যে রাজধানীকে প্যাঁচের পর প্যাঁচ দিয়ে ঘিরে রেখেছে যমুনা, সড়ক পথে দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ যেতে গেলে যে নদী প্রতিবার পেরোতে হতে হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। তার এমন দৈন্য কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রের দিকেও। যেখানে দিন কয়েক আগে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে পদক্ষেপ নেওয়ার ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, সেই প্রধানমন্ত্রী কেন ঘরের পাশের যমুনার দূষণ প্রশ্নে এত উদাসীন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজন ও বিরোধীরা।
সাত বছরের কাছাকাছি দিল্লিতে ক্ষমতায় আপ সরকার। দূষণ প্রশ্নে সাত বছরে ছটের সময়ে একই চিত্র পুনরাবৃত্তি হয়ে এসেছে। তার পরেও অবশ্য কেজরীবাল সরকারের জলসম্পদমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন যমুনা দূষণের যাবতীয় দায় ঠেলে দিয়েছেন কংগ্রেস ও বিজেপির দিকেই। তাঁর কথায়, “স্বাধীনতার পরে ৭৫ বছরে যমুনা সাফাই হয়নি। তাই এই দশা। আমরা তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, ২০২৪ সালের মধ্যে স্বচ্ছ যমুনা উপহার পাবেন দিল্লিবাসী।” তত দিন সফেন যমুনার কালো জলে ডুব দিয়েই বিহারের সমস্তিপুর থেকে দিল্লিতে কাজের খোঁজে আসা পুনিতা দেবীদের বলতে শোনা যাবে, “যমুনায় না নামলে ছট পুজো করব কোথায়!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy